ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

টাঙ্গাইলে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ফসল

যমুনার ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:২৮, ১৬ জুলাই ২০২৪

যমুনার ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

যমুনার ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

টাঙ্গাইলে ছয় উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ১০৮টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে কৃষকের ৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া মানিকগঞ্জের শিবালয়ে যমুনার ভাঙনে দিশাহারা মানুষজন। তীব্র নদী ভাঙনে চরাঞ্চলসহ পূর্ব তীরবর্তী এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবার ভিটামাটি ও ফসলি জমিজমা হারিয়েছেন।

এদিকে নীলফামারীতে তিস্তার বাঁধে ধস নেমেছে। কুড়িগ্রামে বন্যায় শুধুমাত্র কৃষিতেই ক্ষতি হয়েছে  ১০৫ কোটি টাকা। তাছাড়া জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে টাঙ্গাইলের নদ-নদীতে কয়েক সপ্তাহ ধরে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ফলে ৬ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ১০৮টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় ৪ হাজার ৬০১ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে বন্যার পানিতে। ফলে ২৯ হাজার ৩৩৫ কৃষকের ৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষকের জমির ফসল পানিতে ভাসছে ও তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার কৃষকরা। 

সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদরের রসুলপুরের গালা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দেখা যায়, কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। নৌকা ও কলাগাছের ভেলা ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। গ্রামগুলোর কৃষকদের ধান, পাট, তিল ও সবজি খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়া গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে আছেন বানভাসি মানুষ। গালা গ্রামের কৃষক হুমায়ুন সিকদার বলেন, এবারের বন্যায় আমার ধান ও পাটের খেত নিমজ্জিত হয়েছে।

প্রায় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। রসুলপুর গ্রামের কৃষক মহাদেব সাহা বলেন, বন্যার কারেণ ১২ দিন ধরে রসুলপুর বাজারে গবাদিপশু নিয়ে থাকছি। এখনো ত্রাণ সহযোগিতা পাইনি।  ফৈলারঘোনা গ্রামের আফজাল হোসেন বলেন, বাড়ির চারদিকে পানি। নিজের মোটরসাইকেল অন্যজনের বাড়িতে রেখে যাতায়াত করতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের গ্রামে কোনো সহযোগিতা আসেনি। নিম্নআয়ের মানুষ যারা তাদের অনেকেই অনাহারে দিন অতিবাহিত করছেন বলে জানতে পেরেছি।
ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলমান বন্যায় অর্জিত ৮৯০ হেক্টর জমির আউশ ধানের মধ্যে তলিয়ে ও পচে গেছে ৫৮০ হেক্টর, অর্জিত পাট ২ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমির মধ্যে তলিয়ে গেছে ২৮০ হেক্টর, অর্জিত ১ হাজার ৬১০ হেক্টর তিলের মধ্যে তলিয়ে গেছে ১০ হেক্টর, অর্জিত ৩২০ হেক্টর জমির মধ্যে তলিয়ে গেছে ২০ হেক্টর ও অর্জিত ৫১০ হেক্টর বোনা আমনের মধ্যে তলিয়ে গেছে ২০ হেক্টর জমির ফসল। 
এ ব্যাপারে ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোখলেছুর রহমান জানান, টানা ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে চলতি মৌসুমে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান, তিল, পাট ও বোনা আমনসহ বিভিন্ন ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের কৃষি প্রণোদনা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কবির হোসেন বলেন, টাঙ্গাইলে কৃষকদের বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। বরাদ্দ পেলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
টাঙ্গাইল জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা ফাহিম হাসান বলেন, প্রতিটি উপজেলা জিআরের ২০ মেট্রিক টন করে চাল দেওয়া হয়েছে। দুই হাজার করে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। নগদ অর্থ ও নৌকা দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে, প্রয়োজন হলেই দেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ ॥ শিবালয়ের যমুনার তীরে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। ভাঙনের মুখে পড়েছে সরকারের কোটি টাকায় নির্মিত মুজিব কিল্লা, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ শতাধিক বাড়িঘর ও নানা স্থাপনা। তীব্র নদী ভাঙনে চরাঞ্চলসহ পূর্ব তীরবর্তী এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবার ভিটামাটি, ফসলি জমিজমা হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন দেখা দিলেও স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় নাজেহাল হচ্ছেন এ অঞ্চলের প্রান্তিক লোকজন। এরা ভাঙন রোধে পাড় এলাকায় স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন বছরের পর বছর ধরে।   
শিবালয়ের যমুনার পূর্বপাড় ও চরাঞ্চলে বসবাসকারীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, যমুনা বেষ্টিত কানাইদিয়া ও চর শিবালয় ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে বিলীন হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় দুইশ’ আধাপাকা ঘর। এছাড়া আলোকদিয়া, মধ্যনগর, ত্রিশু-ি, মালুচি, চর মধ্যনগর, আশ্রয়ণ হাট, চর  বৈষ্টমী, চর শিবালয়, অন্বয়পুর, দাশকান্দি, এলাচিপুর, আরুয়ার নয়াকান্দি ও মান্দ্রখোলা গ্রামের কয়েকশ’ পরিবার নদী ভাঙনে ভিটামাটি হারিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নতুন বসতি গড়েছে।

নীলফামারী ॥ তিস্তা নদীর ডানতীর বাঁধের নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় ঝুনাগাছ চাপানিসহ প্রায় ৫০ কিলোমিটার  ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যা ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাভুক্ত  ৩৫ কিলোমিটারের  মধ্যে  ১০ কিলোমিটার বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।  প্রধান বাঁধে ধস নেমেছে। এদিকে সোমবার তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমে আসায় নীলফামারীর ডিমলার চর এলাকার বানের পানি নেমে গেলেও রংপুরের কাউনিয়ায় নি¤œাঞ্চল এখন প্লাবিত হয়ে রয়েছে। 
কুড়িগ্রাম ॥ বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় সবজি ও বিভিন্ন ফসলের খেত জেগে উঠেছে। খেতের মাচান থাকলেও নেই সবুজ গাছ। পানির নিচ থেকে ভেসে উঠছে পাট, পটোল, আমন বীজতলা ও বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি খেত। দ্বিতীয় দফার বন্যায় জেলার ৯ উপজেলায় শুধুমাত্র কৃষিতেই ক্ষতি হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা। 
জেলার ৯ উপজেলায় শুধুমাত্র কৃষিতে ৮ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল তলিয়ে যায়। এতে ক্ষতি হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্ত   কৃষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার। অপরদিকে বন্যার পানির প্রবল স্রোতে গ্রামাঞ্চলের কাঁচা-পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়  জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে যাতায়াত করছে মানুষজন।

×