ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

মিলেছে প্রথম যুদ্ধশিশুর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, তবে ভাতা মেলেনি মেরিনার

প্রকাশিত: ১০:৩২, ১৫ জুলাই ২০২৪

মিলেছে প্রথম যুদ্ধশিশুর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, তবে ভাতা মেলেনি মেরিনার

মেরিনা খাতুন

দেশের প্রথম যুদ্ধশিশু হিসেবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) থেকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির চিঠি পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মেরিনা খাতুন। রবিবার (১৪ জুলাই) সকালে তাড়াশ উপজেলা পোস্ট মাস্টার মো. আইয়ুব আলীর কাছে থেকে চিঠিটি গ্রহণ করেছেন মেরিনা খাতুন। তবে স্বীকৃতিকে সর্বোচ্চ সম্মান হিসেবে পেলেও ভাতা না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। দাবি, ভাতা সুবিধা পেলে পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে পারবেন তিনি। 

জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৮৯তম সভায় সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাওয়া বীরাঙ্গনা পচি বেওয়ার মেয়ে মেরিনা খাতুনকে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)’র উপপরিচালক (উন্নয়ন) প্রথম রঞ্জন ঘটকের গত ৭ জুলাই স্বাক্ষরিত পত্র প্রদানের মাধ্যমে মেরিনা খাতুনকে অবহিত করা হয়েছে।

যুদ্ধশিশু স্বীকৃতির চিঠি পেয়ে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুন। তিনি বলেন, আমি স্বীকৃতির চিঠি পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি কৃতজ্ঞ আমার এই স্বীকৃতি পেতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও যেসব সংবাদকর্মী আমার পাশে ছিলেন তাদের প্রতি। আমি অনেক চেষ্টার পরে স্বীকৃতি পেলেও ভাতা পাইনি। আমার দাবি আমাকে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের মতো ভাতা ও সব সুবিধা দেওয়া হোক।

তিনি জানান, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বর্তমানে আমার পারিবারিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। ছেলেমেয়েদের তেমন প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। যার কারণে বর্তমানে অভাব অনটনে সংসার চলে। কিছুদিন আগে আমার স্বামী ওমর আলী অসুস্থ হয়ে পড়ায় জীবন জীবিকায় অনেকটা টানাপোড়ন চলছে। যুদ্ধশিশু হিসেবে সরকারের কাছে রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতার দাবি জানাই। তাহলে আমি মোটামুটি ভালোভাবে চলতে পারব।

এ ব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কামান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আরশেদুল ইসলাম জানান, দেশের প্রথম যুদ্ধশিশু হিসেবে মেরিনা খাতুন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের পক্ষে থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি মেরিনাকে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা দেওয়ারও দাবি জানাই।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাড়াশের মৃত ফাজিল আকন্দের বিধবা স্ত্রী পচি বেওয়াকে স্থানীয় কয়েকজন রাজাকার হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেন। এরপর সেখানে হানাদার বাহিনীর সেনাদের কাছে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। এতে করে তিনি সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন এবং পরবর্তীতে যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুনের জন্ম হয়। পরে ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত পচি বেওয়ার মেয়ে মেরিনা খাতুন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। 

আবেদনে মেরিনা খাতুন বিস্তারিত তুলে ধরে উল্লেখ করেন- তার মা পচি বেওয়াকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০১৮ সালের ৪ জুলাই বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যার মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নম্বর ২০৫। এরই প্রেক্ষিতে তিনি যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান।

বারাত

×