ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

আজ গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি কোটা আন্দোলনকারীদের

২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা তুলে নেওয়ার আল্টিমেটাম

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২২, ১৪ জুলাই ২০২৪

২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা তুলে নেওয়ার আল্টিমেটাম

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা শনিবার ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে দাবি করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা তুলে নেওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছে কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলররত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ওপর যারা হামলা করেছে তাদের বিচার ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা তুলে না নিলে আন্দোলনকারীরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে বলে জানিয়েছে।

শনিবার বিকেল সাড়ে ছয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নতুন ঘোষিত এক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের আজ তারা গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবে বলে জানায়।
আন্দোলনকারীরা জানায়, আজ বেলা ১১টায় ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে এই গণপদযাত্রা শুরু হবে। পরে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে গিয়ে সেখানে স্মারকলিপি প্রদান করবে শিক্ষার্থীরা। গণপদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, শেরে বাংলা কলেজসহ ঢাকার সকল প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে বলে। 
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা কোথাও হামলা ও ভাঙচুর করেনি।

গত ১১ জুলাই শাহবাগে পুলিশের সাজোয়া যানে কোনো হামলা হয়নি বলে রমনা থানার পুলিশ কর্মকর্তা সেটা নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে কেন আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলো? মামলা যদি দিতেই হয় তাহলে আমাদের নামোল্লেখ করেই মামলা দেওয়া হোক কারণ এখানে স্পষ্ট যে কারা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করছে।

আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই মিথ্যা মামলা তুলে নেওয়ার আল্টিমেটাম দিচ্ছি। তা ছাড়া যারা সেদিন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে তাদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি যদি না মানা হয় আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবে না জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলন শেষ হয়ে তারা ক্লাসে ফিরলেও আমাদের ছাত্র ধর্মঘট চলমান থাকবে। আমরা কোনো ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব না। আমরা চাই শিক্ষকরা আমাদের চলমান যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের সহযোগিতা করুক।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, সম্মানিত শিক্ষকদের উদ্দেশে বলতে চাই, শিক্ষার্থীরা আপনাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে গ্রহণ করেছে। আপনারা আন্দোলন শুরু করায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে থাকেনি। তাই আমাদের যৌক্তিক দাবির এই আন্দোলনে আপনারা কতটুকু পাশে থাকবেন সেটা দেখার সেময় এসেছে। আমরা যেন এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা না দেখি যে কিছু শিক্ষক ক্লাস-পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ দিচ্ছে।

আপনারা আমাদের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে প্রমাণ করুন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে কোনো যৌক্তিক আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। এর আগে ৭ জুলাই ঘোষিত শিক্ষার্থীদের বর্তমান এক দফা দাবি হলো- সকল গ্রেডে সকল প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।
একরামুল হক, খুবি প্রতিনিধি জানান, কোটা পদ্ধতি সংস্কারের এক দফা দাবির বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি এবং জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য জনসংযোগ চালিয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা।
শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় ক্যাম্পাসে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ইসলামনগর হল রোড, গল্লামারী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসহ আশপাশের এলাকায় জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে জনসংযোগ চালান।
শিক্ষার্থীরা বলেন, সংসদে আইন পাস করে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবি নিয়ে আমরা ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। আজকেও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে জনসংযোগ চালানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।
যশোর ও বগুড়ায় কর্মসূচি পালিত ॥ সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা বহাল রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন যশোরের মুক্তিযোদ্ধারা। এদিকে, কোটাকে ইস্যু করে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তি এবং দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে শনিবার বগুড়ায় মানববন্ধন হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টারদের।
যশোরে শনিবার দুপুরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুজিব বাহিনীর বৃহত্তর যশোর জেলার ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ-এর কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম। সংবাদ সম্মেলনে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকার অবমাননা ও সুপ্রিম কোর্টের আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। 
লিখিত বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম বলেন, সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেডে (১ম ও ২য় শ্রেণি) কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল এবং আছে।

দেশের স্বাধীনতার জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার, অনুন্নত ও সুবিধাবঞ্চিত জেলা, অনগ্রসর নারী সমাজ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের পশ্চাৎপদতাকে বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন সমতার আওতায় আনার নিরিখেই বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থা চাকরিতে বিভিন্ন পর্যায়ে কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে। ফলে সামগ্রিক প্রয়োজনেই কোটা বহাল রাখতে হবে। 
বগুড়া ॥ বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ঐক্যজোট বগুড়া জেলা শাখা আয়োজিত মানববন্ধন থেকে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নিন্দা জানানো হয়েছে। শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় আয়োজিত এ মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বগুড়া শাখার সভাপতি সুলতান মাহমুদ প্রিন্স। সংগঠনের সদস্য সচিব আজিজুর রহমান সুমন এটি সঞ্চালনা করেন।

মানববন্ধনে বগুড়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন বাবলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল বারী, আমিনুল ফরিদ, মাহমুদুন্নবী রাসেল, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের পাভেল রানা, মুক্তিযোদ্ধা মহাজোট ও প্রজন্ম কমান্ডের শাহিনুজ্জামান, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বগুড়ার রাশেদুল হাসানসহ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা অংশ নেন।
মানববন্ধন থেকে কোটাকে ইস্যু করে স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী সকল শক্তির ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলা হয়, ছাত্রদের উস্কে দিয়ে কোটার নামে আন্দোলন করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোটা বিরোধীরা রাজপথ না ছাড়লে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাও রাজপথ থেকে ফিরবে না। বক্তারা বলেন, মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই কোটার বিষয় আসে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছে। আদালতই কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। কোটার নামে যারা দেশবিরোধী, সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে তাদের প্রতিহত করার আহ্বান জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।

×