ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

ঘিওরে নৌকার হাট জমে উঠেছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঘিওর, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:১৮, ১৩ জুলাই ২০২৪

ঘিওরে নৌকার হাট জমে উঠেছে

মানিকগঞ্জের ঘিওরে নৌকার হাট

মানিকগঞ্জে ঘিওর  উপজেলার ধলেশ^রী, কালীগঙ্গা, ইছামতিসহ বিভিন্ন নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বহু এলাকার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই এসব এলাকাতে নৌকা তৈরি এবং বিক্রির ধুম পড়েছে। ৭টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত নি¤œাঞ্চল বর্ষার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় নৌকার কদর বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এলাকার লোকজন নৌকা কেনার জন্য দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাটে ভিড় করছেন। তবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত লোকজন শত শত ডিঙ্গি নৌকাসহ বিভিন্ন রকমের নৌকা বিক্রির জন্য সাজিয়ে রেখেছে নৌকা হাটে। অনেকে এ মৌসুমে নৌকা বিক্রি করে তাদের জীবনযাত্রার মান বদলাবে। 
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মিস্ত্রিপাড়ার নারী-পুরুষ। বর্ষার আগমনে উপজেলার বানিয়াজুরি, বালিয়াডাঙ্গি, সিংজুরি, বেগুন নারচি, হিজুলিয়া, ঠাকুরকান্দি, বেগুন নারচি এলাকার নি¤œাঞ্চলের বর্ষার একমাত্র বাহন নৌকা। ঘিওর হাট ও বাজারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা বিক্রি হয়। অনেক এলাকায় নৌকা ছাড়া চলাফেরা করা সম্ভব হয় না। বর্ষার পানি আসার সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাঠমিস্ত্রিরা নৌকা তৈরি এবং মেরামতের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।

মানুষের মালামাল এবং জীবন- জীবিকার একমাত্র বাহন হিসেবে নৌকার ব্যবহার দীর্ঘদিনের। নৌকা তৈরির শিল্পীরা  ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাটে নৌকা বিক্রির জন্য আসে। নৌকা তৈরির সঙ্গে জড়িত শিল্পীরা স্থানীয় উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করছে নৌকা। বর্ষার শুরুতেই ঘিওর উপজেলা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ঈদগা মাঠ এবং ঘিওর ডিএন হাই স্কুলের মাঠের একপাশে নৌকা হাট জমে উঠেছে।

বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় নৌকা সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য। প্রতি সপ্তাহে তাদের কারখানাগুলোতে ২০ থেকে ২৫টি নৌকা তৈরি হয়। বর্তমানে লোহা কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকা তৈরির খরচ বেড়ে গেছে। প্রকারভেদে প্রতিটি ডিঙ্গি নৌকা ৪ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা হয়। তবে লাভের অংশ আগের থেকে কমে গেছে। 
ঘিওর কুস্তা গ্রামের কাঠমিস্ত্রি সুবল সূত্রধর জানান, আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকেই আমরা নৌকা তৈরি করে বিক্রি করি।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আমাদের বাড়িতে নৌকা তৈরি শুরু হয়। আমরা জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে নৌকা তৈরি শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি করি। বর্তমানে এলাকায় ছোট ডিঙ্গি ও কোষা নৌকা বেশি চলে। তবে কড়ই, জাম্বল, আম ও কদম কাঠের নৌকা বিভিন্ন হাট-বাজারে বেশি চলে। জাতি কাঠের তৈরি নৌকায় অনেক খরচ হয়।

ঘিওর হাটে নৌকা বিক্রি করতে আসা জীবন সূত্রধর জানান,  এ বছর ২৫টি নৌকা তৈরি করেছেন। ছোট সাইজের ডিঙ্গি নৌকা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা এবং মাঝারি সাইজের নৌকা ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার এবং বড় সাইজের নৌকা ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে বাপ-দাদার পৈত্রিক পেশার কারণে অনেক কষ্টে টিকে আছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত লোকজনকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। তা না হলে অচিরেই হারিয়ে যাবে এ পেশার সঙ্গে জড়িত লোকজন।
ইউপি চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল জানান, শত বছরের এই ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাট নৌকা বিক্রির জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছর বন্যা মৌসুমে হাজার হাজার নৌকা বিক্রি হয়। ক্রেতা এবং বিক্রেতারা সুন্দর পরিবেশে হাটে নৌকা বিক্রি করে থাকেন।  ৫/৬টি জেলা থেকে ঘিওর হাটে নৌকা ক্রয় করতে আসে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নৌকা আমদানি বেশি হবার কারণে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান। মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য সালাউদ্দীন মাহমুদ জাহিদ (এস এম জাহিদ) বলেন, দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী হাটটির জৌলুস আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।

শুধু নৌকা নয়, আমাদের ঘিওর হাটে বাঁশ, বেত ও মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর প্রচুর বিক্রি হয়। বুধবার হাটে নৌকা বিক্রি শেষে থাপড়ানো রুটি এবং রসগোল্লা খেতে নৌকা বিক্রেতারা খুবই পছন্দ করে। বহু জেলার লোকজন এখানে আসে। ঘিওর হাটের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সুনাম রয়েছে সারাদেশে।

×