ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের ১৭শ টাকা বেতনের নৈশ প্রহরীর কোটি কোটি টাকার সম্পদ

আজিজুর রহমান ডল, জামালপুর 

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ১৩ জুলাই ২০২৪; আপডেট: ১৫:১৯, ১৩ জুলাই ২০২৪

সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের ১৭শ টাকা বেতনের নৈশ প্রহরীর কোটি কোটি টাকার সম্পদ

জাহাঙ্গীর আলম

জাহাঙ্গীর আলম পেশায় মাদারগঞ্জ সাব রেজেষ্ট্রি অফিসের নৈশ প্রহরী মাস্টার রোলে চাকরি করে বেতন ১৭শ টাকা। অথচ কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক। মাদারগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের কাছে কোটি টাকার জমিতে কয়েক কোটি টাকায় তৈরি করেছেন রাজ প্রাসাদ, গরুর খামার, আবাদী জমি, রাজকীয় বাড়ি, একাধিক বাসা বাড়ি, পুকুর কোন কিছুর অভাব নেই, অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। 

রয়েছে সরকারি খাস জমি দখল করে গরুর খামারসহ একাধিক পাকা বাড়ি করার অভিযোগও। সবকিছু হয়েছে মাদারগঞ্জ সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের বদৌলতে। 

কয়েক বছর আগে দিন মজুরের কাজ করেছেন এই জাহাঙ্গীর। এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। ১২ বছর আগে সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের অফিসারের খাবার রান্নার কাজ করতে গিয়ে সে মাস্টার রোলে চাকরি পেয়ে যান। এখানেই তার ভাগ্য খুলে যায়। রাতারাতি সে অফিসের গোপন কাজের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। 

রাতের অফিসে গোপন কাজগুলো তার হুকুমেই চলে। যতো অনৈতিক অবৈধ কাজ হয় সবটার ভাগ যায় তার হাতে। জমি রেজিষ্ট্রি, দলিল রেজেষ্ট্রি কমিশন, নকল উত্তোলনসহ সব অবৈধ কাজের তার হাত ছাড়া হয় না। এক কথায় তিনি দ্বিতীয় সাব রেজিষ্টার বলে অফিসের লোকজন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দলিল লেখক ও অফিসের কর্মচারী জানান, এই অফিসে জাহাঙ্গীরের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তার সুপারিশে আরো কয়েকজন ছেলেদের নকল নবিশের চাকরি দিয়ে তার হাত শক্তিশালী করেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তারা হুমকি ও ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে। তার সিন্ডিকেটের কয়েকজনের কাছে পুরো সাবরেজিষ্ট্রি কার্যালয় জিম্মি হয়ে পড়েছে। 

গরুর খামার। ছবি: জনকণ্ঠ

এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি উপজেলার সুখনগরী গ্রামে, নদী ভাঙনের পর সে উপজেলা সদরে পাল পাড়ায় আশ্রয় নেয়। এক সময় কামলা খাটতো, পরে কয়েজনের বাড়িতে বছর বান্দা কামলা হিসেবে কাজ শুরু করে। 

এক সময় কাজ রেখে উপজেলার বিভিন্ন অফিসে ছোট খাট হাত ফরমায়েসী কাজ করতেন। পরে তার স্থিতি হয় উপজেলা সাব রেজেষ্ট্রি অফিসে। সেখানে ব্যাচেলর অফিসারদের রান্না ও ঘর মুছার কাজ করতেন। তৎকালীন এক সাব রেজিষ্ট্রার তাকে অফিসের ছোট খাটো কাজ করানো শুরু করে। এক সময় সে মাস্টার রোলে ওই অফিসের  নৈশপ্রহরীর কাজ পায় ৩শ টাকার বেতনে। 

বর্তমানে তার বেতন ১৭শ টাকা। বেতনকে তোয়াক্কা না করে নেমে পড়ে অবৈধ অবলম্বনে। এক এক করে সব কাজ সে হাতিয়ে নেয়। দিন কে রাত রাত কে দিন বানিয়ে ফেলে। এক এক করে সম্পদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। গরুর খামার, জমি, বাসা বাড়ি, কৃষি জমি, পুকুর, প্রজেক্ট এবং নিজ ও আত্মীয় স্বজন ছাড়াও নানান নামে সম্পদ গড়েছেন তিনি। সুখনগরীতে সরকারী খাস জমি দখল করে এখানে খামার গড়ে তুলেছেন। 

কয়েক বছর আগে স্থানীয় ব্যবসায়ী আতাউর রহমান আবু তালুকদারের কাছ থেকে উপজেলা কমপ্লেক্স এর কাছে কোটি টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেন। এখানেও তার জমির দাম কম ও ভুয়া শ্রেণি বসিয়ে কম মূল্যে জমি রেজিষ্ট্রি করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এই দলিলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এই জমিতে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একটি প্রাসাদ তৈরি করছে। তার কাজ এখনো শেষ হয়নি। দুতলা পর্যন্ত করেছেন। 

বাড়ি।

এছাড়া পালপাড়ায় একটি দুতলা সুরমা একটি বাড়ি রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে একাধিক ঘর, বাগান, গরুর খামার, পুকুর, এক একর আবাদী জমি। এসব দেখে গ্রামবাসী হতবাক।

উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকায় তার প্রাসাদের খোঁজ নিতে গেলে ভয়ে কেও মুখ খুলে না, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, তার অফিসের একদল সন্ত্রাসী কেও কথা বললেই হুমকি দেয়। 

তারা জানান, এই জাহাঙ্গীরের হাতে আলাদিনের চেরাগ আছে। রাতারাতি তাকে কোটিপতি বানিয়েছে। সাব রেজেষ্ট্রি অফিস তার কথায় চলে। সুখনগরী গ্রামে খোঁজ নিলে একাধিক গ্রামবাসী জানান, সে অল্প দিনে এতো টাকার মালিক হয়েছে। তার অবৈধ টাকায় এসব কেনা। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে রাজি হয়নি। তিনি বারবার অনুরোধ করেন তার বিরুদ্ধে খবর না দিতে । 

মাদারগঞ্জ উপজেলায় স্থায়ী সাব রেজিষ্টার না থাকায় বর্তমান সাব রেজিষ্টার কথা বলতে রাজি হয়নি। 

জেলা রেজিষ্টার মো. শাহজাহান জানান, এটা মাদারগঞ্জ সাব রেজেষ্ট্রি অফিসের আওতায় তাদের সঙ্গে কথা বলুন।

এসআর

×