ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

স্মার্ট চাষি

বাবুল হোসেন

প্রকাশিত: ০১:৫৫, ১২ জুলাই ২০২৪

স্মার্ট চাষি

স্মার্ট চাষি 

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র পারের চরকালিবাড়ি গ্রামের সেকাল ও একাল দর্শী এক স্মার্ট চাষি হাজি আবু সাঈদ। বয়স ষাটের কোঠায়। তবে এখনো তেজোদীপ্ত আবু সাঈদ মাঠে নামে কোদাল কাঁধে নিয়ে। জমিতে সেচ  ও সার দেওয়াসহ প্রয়োজনে কীটনাশকের ব্যবহার থেকে শুরু করে বেশিরভাগ কাজই করেন নিজের হাতে। তবে জমির চাষাবাদ, নিড়ানি ও কাটাই মাড়াইয়ের জন্য নির্ভর করতে হয় আধুনিক মেশিনারিজ প্রযুক্তির ওপর।

কৃষি ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রভাবে চাষাবাদ পদ্ধতি যেমন বদলে গেছে, তেমনি ফলনের মাত্রাও বেড়েছে। ফলে এককালের লোকসানের কৃষি আবাদ এখন অনেকটাই লাভজনক হয়ে উঠেছে। চাষিদের অভাব অনটনের সংসারে ফিরেছে স্বস্তির সুবাতাস। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। নগরায়ন আর শিল্পের প্রসারে এই পরিস্থিতির উদ্ভব।
আলাপচারিতায় হাজী আবু সাঈদ জানান, ময়মনসিংহের পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী চরাঞ্চলের চাষিদের মধ্যে অভাব অনটন আর ফসলের লোকসান ছিল এক সময়কার নিত্য সঙ্গী। আবাদ বলতে ছিল আউশ আর আমনসহ পাটের। এর বাইরে সবজির আবাদ বলতে তেমন কিছুই ছিল না। বসতবাড়ির আঙিনায় লাউ কুমড়া আর ঢেড়স পেঁপে ছিল বছরের সবজির তালিকার। শীতকালে ছিল মুলাশাক আর সরিষা। প্রতি বর্ষায় ব্রহ্মপুত্র উত্তাল হয়ে উঠলে বন্যা হানা দিতে পাশের চরগুলোতে। এর সঙ্গে ছিল আষাঢ় শ্রাবণের ভারী বর্ষণ। মাঠ ঘাট সবই তলিয়ে যেত। বন্যা আর বর্ষণে ডুবে যেত ব্রহ্মপুত্র পারের চরের সব ফসলি জমি। ক্ষেত্রের পাকা আউশ ধান চাষিদের গোলায় উঠানো ছিল বেশ চ্যালেঞ্জ। মাঠের পর মাঠে চাষ করা উঠতি পাট তোলাও সম্ভব হতো না বেশিরভাগ সময়। 
আবু সাঈদ জানান, মূলত নব্বুইয়ের দশকের পর থেকে দ্রুত বদলে যেতে থাকে চাষাবাদের ধরন ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার। আউশ আর পাটের আবাদ প্রায় ছেড়ে দিলেও প্রসার ঘটে লাভজনক বোরো আবাদের। অধিক ফলনশীল সেচ নির্ভর এই বোরো আবাদ হতাশাগ্রস্ত চাষিদের ভাগ্যের পরিবর্তন নিয়ে আসে। গরু দিয়ে হালচাষের জায়গা দখলে নিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির পাওয়ার টিলার। বৃষ্টিনির্ভর সেচের বদলে যোগ হয়েছে স্যালো মেশিন ও বৈদ্যুতিক সেচ সুবিধা।

ফসলের কাটাই মাড়াই ও নিড়ানিতেও যোগ হয়ে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার। সার ও কীটনাশকের ব্যবহারেও বেড়েছে সচেতনতা। খামার বাড়ির মাঠ কর্মীরা চাষিদের বাড়ি বাড়ি ও গ্রামে গিয়ে দিচ্ছে নানা পরামর্শ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার জানা চাষিরা এখন হাতের মুঠোয় পাচ্ছেন সব পরামর্শ। এরকম অবস্থায় আমন আর বোরো ফলন যেমন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তেমনি ধানের পাশাপাশি মাঠে পর মাঠে বাণিজ্যিকভাবে শীত ও গ্রীষ্মকালীন নানা সবজি আবাদের মাধ্যমে সচ্ছল হয়ে উঠেছে প্রতিটি চাষির পরিবার।    
বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ

×