ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

শাহবাগে ব্যারিকেড উপেক্ষা করে কোটাবিরোধীদের অবস্থান

পুলিশ কঠোর অবস্থানে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ১১ জুলাই ২০২৪

পুলিশ কঠোর অবস্থানে

কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে

উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের রায়ের পর কোটা আন্দোলনকারীদের বিষয়ে পুলিশ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। গত কয়েকদিনের আন্দোলনে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আন্দোলন প্রতিরোধে পুলিশের ছিল ব্যাপক প্রস্তুতি। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সকাল থেকেই সাঁজোয়া যান, জলকামানসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে অবস্থান গ্রহণ করে। একইভাবে সারাদেশেও আন্দোলনকারীদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশের ছিল পূর্ব প্রস্তুতি।

ফলে আন্দোলনকারীরা মাঠে নামলে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনকারীরা পুলিশি ব্যারিকেড উপেক্ষা করে অবস্থান নিলেও কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ অনেকে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। 
আন্দোলনকারীদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির ফলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শাহবাগ, নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে পুলিশ। শাহবাগ এলাকার ফুটপাতের সব ধরনের দোকান উঠিয়ে দেওয়া হয়। শাহবাগ থানার সামনে, শিশু পার্ক, মৎস্য ভবন, বারডেম হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশ ব্যারিকেড সৃষ্টি করে রাখে। এসব মোড়ে মোড়ে অসংখ্য পুলিশ সদস্যের অবস্থান, ব্যারিকেডের পাশাপাশি সাঁজোয়া যান, জলকামান, এপিসি প্রস্তুত করে রাখা হয়।

থানা পুলিশ, রিজার্ভ পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশসহ বিভিন্ন ইউনিট থেকে পুলিশ সদস্যদের সেখানে মোতায়েন রাখা হয়। পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা কিছুক্ষণ পর পর হ্যান্ডমাইকে পুলিশ সদস্যদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন, কোন টিম সামনে অবস্থান নেবে, কোন টিম কোন স্থানে থেকে আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করবেÑ এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়। এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরাও দুপুরের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন।

এরই মধ্যে বিকেল ৩টা থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেক বৃষ্টির ফলে যে যার অবস্থানে থাকে। বৃষ্টি শেষ হতেই আন্দোলনকারী ঢাবির লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়। সেখানে পতাকা হাতে বিভিন্ন স্লোগান তোলে তারা। অন্যদিকে, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা, ঢাকার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীরা, মহানগরের নেতাকর্মীরা মধুর কেন্টিনের সামনে অবস্থান নেন। তারা সেখানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তোলেন। কয়েক গজের মধ্যে দফায় দফায় স্লোগান চলতে থাকে।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে কলা ভবন হয়ে নীলক্ষেতের দিকে অগ্রসর হয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা মধুর কেন্টিনের সামনে অবস্থান নিয়ে পুরো আন্দোলনকারীদের গতিবেগ পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা স্লোগান নিয়ে বিকেল প্রায় পৌনে ৫টার দিকে শাহবাগের দিকে আসতে থাকেন। ওয়াকিটকিতে পুলিশ এমন তথ্য পেয়ে সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন উধ্বর্তনরা। কাঁটাতারের ব্যারিকেড সামনে সাজিয়ে এরপর পুলিশ অবস্থান নেয়।  
ঠিক ৫টা ২ মিনিটের দিকে আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিতে দিতে শাহবাগ চত্বরে প্রবেশ করে। এদের একাংশ বুয়া বুয়া স্লোগান দিয়ে চত্বর অতিক্রম করে। বিএসএমএমইউয়ের গেটের সামনে অবস্থান নেওয়া পুলিশের সামনের কাঁটাতারের ব্যারিকেড ছিনিয়ে নেয়। পুলিশ ব্যারিকেড ধরে রাখার চেষ্টা করে। তবে আন্দোলনকারীরা স্রোতের মতো এসে ব্যারিকেড ছিনিয়ে নিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত চলে যায়। পুলিশ একপাশে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।

পূর্ব পাশের বারডেম হাসপাতাল অংশের কাঁটাতারের ব্যারিকেডও ছিনিয়ে নেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রোগী দেখাতে আসা লোকজন দ্রুত সেখান থেকে গাড়ি সরিয়ে নেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরস্থান থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের জনস্রোতে পরিণত হয়। আর শাহবাগ চত্বরে দুইটি রিক্সায় মাইক লাগিয়ে সেখানে স্লোগান দিতে থাকেন সমন্বয়কসহ অন্যরা।

বিএসএমএমইউয়ের গেটে থাকা পুলিশ জলকামান আর এপিসি গাড়ির ওপর উঠে পতাকা নাড়াতে থাকে আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে পুলিশ গাড়ি দুটি পেছনে নিয়ে যায়। এরই মধ্যে মৎস ভবন হয়ে মিছিল নিয়ে শাহবাগে অগ্রসর হতে থাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ঘটনাস্থলে মাইকিং শুরু করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের একজন কর্মকর্তা মাইকিংয়ে বলতে থাকেন, ‘লক্ষ্মী ভাইয়েরা আমার। প্লিজ শাহবাগে চলে যান। আপনারা যারা আন্দোলন করছেন তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করুন। যারা শাহবাগের বাইরে অন্যত্র অবস্থান করবে তাদের আমরা দুষ্কৃতিকারী হিসেবে ধরে নেব।’
এ সময় মাইকিং শুনে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ের দিকে যেতে থাকে এবং পুলিশের বিরুদ্ধে ‘গো ব্যাক, গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে থাকে। শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়ার পর থেকে রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগ থেকে এলিফ্যান্ট রোড, বাংলা মোটর, মৎস্য ভবন ও টিএসসিগামী রাস্তায় যানচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক টিম শিক্ষার্থীদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে সরিয়ে নেয় এবং শাহবাগ চত্বরে অবস্থান নেয়। তবে আশপাশে পুলিশ থাকলেও কোনো ধরনের সংঘর্ষ কিংবা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ॥ পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা থেকে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা অবরোধের পর সন্ধ্যা ছয়টা ৪৩ মিনিটে মহাসড়ক ছাড়ে শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বেলা আড়াইটা থেকেই বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সতর্ক অবস্থান নেয় সাভার মডেল থানা, হাইওয়ে থানা এবং আশুলিয়া থানা পুলিশের শতাধিক সদস্য। পূর্ব ঘোষণা অনুসারে শিক্ষার্থীরা বিকেল তিনটা থেকে মহাসড়ক অবরোধের কথা থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার দরুন সাড়ে তিনটায় বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়।
মিছিলটি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আসলে ফটক তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। এ ছাড়া ফটকের অভ্যন্তরে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির বাধার সম্মুখীন হন। সেখানে প্রায় ১০ মিনিটের বাকবিত-া শেষে ফটকের তালা ভেঙে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে চলে যায়। তবে মহাসড়কে পুনরায় পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে তাদের কর্মসূচি পালন করার অনুরোধ জানায়। তবে সেখানে দীর্ঘক্ষণ বাকবিত-া হয় দুপক্ষের। এক পর্যায়ে বাধা উপেক্ষা করে বিকেল চারটা থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুপাশে যান চলাচল বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশের নিয়ে আসা একটি জলকামান গাড়ি কয়েকটি ট্রাক দিয়ে ঘিরে আটকে রাখে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে মহাসড়কে পুলিশের অবস্থানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্ ও ট্র্যাফিক) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘গত কয়েকদিনের টানা অবরোধে উত্তরবঙ্গগামী মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। যেহেতু আদালতের রায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে এসেছে। আদালতের পক্ষ থেকে তাদের কাছে এক মাসের সময় চাওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি আদালতের প্রতি সম্মান রেখে তারা তাদের অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকবে। আমরা তাদের আধা ঘণ্টার মধ্যে কর্মসূচি শেষ করার অনুরোধ জানিয়েছি।’
পুলিশি বাধার পরে আরও জোরদার আন্দোলন ও অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ॥ কোটা সংস্কারের দাবিতে চট্টগ্রামেও আন্দোলনে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত কলেজের ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমেছেন। তারা সমতাভিত্তিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয়। হাতে ধারণ করেন ব্যানার ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। তবে এতদিন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চললেও বৃহস্পতিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর মৃদু লাঠিচার্জ করে পুলিশ। টাইগারপাস এলাকায় অবস্থান নিতে না পেরে আন্দোলনকারীরা ষোলশহর ২ নম্বর গেটে গিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। 
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি সফল করতে এই এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেখানে তারা বেশিক্ষণ অবস্থান করতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার মুখে। পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন ৭-৮ জন। 
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুর বেলা ৩টা থেকেই ধীরে ধীরে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে দেড়টার শাটল ট্রেনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নগরীর দিকে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা রাস্তা অবরোধ করলে পুলিশ বাধা দেয়। শিক্ষার্থীরা বাধা উপেক্ষা করে সামনের দিকে যেতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে আহত হয় কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে আন্দোলনকারীরা টাইগার পাস মোড় থেকে  নগরীর দুই নম্বর গেটের দিকে সরে যান। এ সময় পুলিশও তাদের পেছন পেছন এসে গেটের মোড়ে অবস্থান নেয়। 
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উভয়ই দুই নম্বর গেট এলাকায় অবস্থান করছিলেন। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য ছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট টাইগার পাসে অবস্থান নিয়ে ব্লকেড কর্মসূচি সফল করা। কারণ চট্টগ্রাম মহানগরীর একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে যেতে হলে এই পয়েন্ট অতিক্রম করতেই হয়। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান বিবেচনায় প্রশাসনও সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে।  
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ॥ সংসদে আইন পাস করে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ঢাকা-খুলনা, খুলনা-সাতক্ষীরা ও খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়ক অবরোধ করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদী চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রধান ফটক হয়ে নগরীর জিরোপয়েন্ট মোড়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সড়ক অবরোধের ফলে ঢাকা-খুলনা, খুলনা-সাতক্ষীরা ও খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমদের একদফা দাবি সংসদে আইন পাস করে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি মেনে নেবে না। এ বৈষম্য দূর না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ আজ শুক্র ও শনিবার জনসংযোগের মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সংগঠকরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলন, রাবির সমন্বয়ক আশিকুল্লাহ মুহিব বলেন, আমরা ঢাকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে আগামী ছুটির দুদিন জনসংযোগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা এই দুদিন আমাদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করে সারাদেশের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান একই দিনে একই ধরনের প্রোগ্রাম রাখব। আগামী দুদিন নিবন্ধন পরীক্ষায় আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, কেউ যেন আমাদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, সেজন্য আমরা এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ‘বাংলা ব্লকেড’ এর অংশ হিসেবে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ক্যাম্পাসের বটতলা চত্বর থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পরে তারা প্রধান ফটকে এলে ফটক আটকানো দেখতে পান।
পরে শিক্ষার্থীরা ফটক খুলে মহাসড়কের উদ্দেশ্যে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যান। এসময় তারা পুলিশের বাধার শিকার হন। বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রেখে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজার ঘুরে আসেন। পরবর্তীতে সোয়া ৪টার দিকে প্রধান ফটক সংলগ্ন মহাসড়ক আটকে দেন আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকে বারবার আন্দোলনকারীদের সরে যেতে বলে পুলিশ। এর প্রায় আধাঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছেড়ে দেন। পরে তারা মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের পাদদেশে এসে অবস্থান নেন। সেখানে তারা বিভিন্ন প্রতিবাদী কবিতা, গান, গীতিনাট্য ও অভিনয়ের মাধ্যমে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ॥ সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সারাদেশের সঙ্গে একযোগে কর্মসূচি পালন করে আসছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবস্থান নিতে শুরু করে বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে জমায়েত হতে শুরু করেন। পরে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে মূল ফটক দিয়ে বের হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। এসময় পুলিশ তাদের বাধা প্রদান করলেও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক বন্ধ করে অবরোধ শুরু করেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া সেøাগান দিলে পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ক্যাম্পাসের সামনের মহাসড়ক ত্যাগ করে। ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন, প্রশাসন জবাব চাই, মেধা না কোটাসহ নানা সেøাগান দেন শিক্ষার্থীরা। মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কোনো রক্তচক্ষুকে ভয় পাই না। আমরা রক্ত দেব। তবুও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে পিছু হবো না।
মহাসড়ক অবরোধের ফলে উভয়প্রান্তে যানবাহন আটকে পড়ে। ফলে সাধারণ যাত্রীদের গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। আর পণ্যবাহী গাড়িগুলো সড়কের পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।

×