ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রায়পুর, লক্ষীপুর 

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ১১ জুলাই ২০২৪; আপডেট: ১৯:৩৯, ১১ জুলাই ২০২৪

কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা

রায়পুরে জনতা ব্যাংক শাখা এবং ব্যাংক কর্মকর্তা ।

রায়পুরে জনতা ব্যাংক শাখার ফয়েজ আহাম্মদ (৩৫) নামের এক কর্মকর্তা গ্রাহক ও আত্মীয়স্বজনের প্রায় সাত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে। গ্রাহক ও স্বজনরা প্রতিদিনই ব্যাংক ম্যানেজার ও ফয়েজের বাড়িতে ধর্না দিচ্ছেন। 

জানা যায়, পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে দুমাস ধরে কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ায় পর পর তিনবার শোকজ করেও খোঁজ মিলছে না ফয়েজের। তার বাড়ির সামনে নব-নির্মিত একটি মার্কেট নির্মাণের নামে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ না করায় মার্কেটে নোটিশ লাগিয়েছে দিয়েছে ব্যাংক ম্যানেজার। খুব শিগ্রই তার বিরুদ্ধে ঢাকার হেড অফিস ব্যবস্থা নেবেন বলেন জানিয়েছেন বর্তমান ব্যাংক ম্যানেজার। অভিযুক্ত ফয়েজ উপজেলার রায়পুর ইউপির দেবিপুর গ্রামে মৃত জয়নাল জমাদারের একমাত্র ছেলে। সে গত ৮ বছর জনতা ব্যাংক রায়পুর শাখার সেকেন্ড অফিসার হিসেবে লোন সেকশনের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

ভুক্তভোগী রায়পুর ইউপির দেবিপুর গ্রামের সায়েস্তানগর দাখিল মাদরাসা শিক্ষক ও ওষুধ দোকানি রেজোয়ান বলেন, ‘ব্যাংক থেকে একজন অফিসার ফোন দিয়ে বলেন, ১০ লাখ টাকার কিস্তি পরিশোধ করছেন না কেন? এতে আমি হতভাগ হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করি কিসের ১০ লাখ টাকার কিস্তি? তখন অফিসার ফোন কেটে দেন। সায়েস্তানগর দাখিল মাদ্রাসার সুপার, ওই মাদ্রাসার আরো দুই শিক্ষক, জনকল্যান উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্মচারি মোবারক হোসেন, মো. মাইনুদ্দিন, সুপারি ব্যবসায়ী জাকির ছাড়াও শায়েস্তানগর গ্রামের ব্যবসায়ী মো. নাসির, ইব্রাহিম, আলাউদ্দিন সহ শতাধিক গ্রাহকের প্রতারণা করে মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় সাত-আট কোটি টাকা নিয়ে স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে কানাডা চলে গেছেন। অনেকে বলছেন, ব্যাংক কর্মকর্তা ফয়েজ সবসময় অনলাইনে জমজমাট ডলার ব্যবসা (বিট কয়েন) সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’

রায়পুরের দেবিপুর গ্রামের গ্রীল ওয়ার্কসপ ব্যাবসায়ী জসিম বলেন, ‘ফয়েজ আমার গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত ও ভালো মনে করেছিলাম। সে সবসময় নিশ্চুপ ও শান্ত প্রকৃতির ছিল। বিশ্বাস করে শেয়ার ব্যবসার নামে এক কোটি ২২ লাখ টাকা দিয়েছি। কয়েক মাস লাভও দেয় সে। হঠাৎ সে আমিসহ অনেকের প্রায় সাত কোটি টাকা ও তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।’

এদিকে পলাতক ব্যাংক কর্মকর্তা ফয়েজ প্রতারণার কথা স্বীকার করে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমি ব্যাংকে চাকরির পাশাপাশি বেশি লাভবান হওয়ার জন্য ব্যাংকসহ বন্ধু-বান্ধব-আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমার বিশ্বস্ত বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার ব্যবসা করেছি। কিন্তু সে কয়েক মাস ব্যবসায় লাভ দেখিয়ে হঠাৎ জার্মান চলে গেছে। সে যে জার্মান নাগরিক তা আমি জানতাম না। তাই গোপনে এক বন্ধুর মাধ্যমে স্ত্রী অন্তুর চিকিৎসার নামে তাকে ও শিশু ছেলেকে নিয়ে ভারত হয়ে কানাডা চলে আসি। আমি খুব অন্যায় করেছি। আল্লাহসহ সবার কাছে ক্ষমা চাই। ব্যাংকসহ সবার টাকা আস্তে আস্তে পরিশোধ করব।’

ফয়েজের নানা নজরুল জমাদার (৭০) বলেন, ‘গত এক মাস ধরে অনেক মানুষ আমার কাছে এসে অভিযোগ করছেন। তবে ফয়েজ ব্যাংক থেকে ৮০ লাখ টাকা লোন নিয়ে বাড়ির সামনে মার্কেট করে। সেই টাকা না দেওয়ায় মার্কেটের সামনে সাইনবোর্ড লাগিয়েছ ব্যাংক ম্যানেজার।’

জনতা ব্যাংক রায়পুর শাখার ব্যবস্থাপক তারেক মোহাম্মদ মুছা জানান, ‘লোন অফিসার ফয়েজ আহাম্মদ তার স্ত্রীকে ভারতে চিকিৎসা করাবেন বলে গত ২৬ মে ৫ দিনের ছুটি নেন। গত এক মাস সে ব্যাংকে আসছেনা। তার কাছে ব্যক্তিগত ৫ লাখ টাকা লোন পাবে ব্যাংক। এ জন্য তাকে নোটিশ পাঠানো হয় এবং তার বাড়ির সামনে মালিকানাধীন পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট মার্কেটের সামনে নোটিশবোর্ড ছাটানো হয়েছে।’
 
রায়পুর থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বলেন, ‘জনতা ব্যাংকে লোন অফিসার ফয়েজ আহাম্মদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে আইনত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’
 

 

এম হাসান

×