ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

টাঙ্গাইলে ১০৮ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি

কমছে বন্যার পানি, ভাঙছে বাড়ি

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ৯ জুলাই ২০২৪

কমছে বন্যার পানি, ভাঙছে বাড়ি

তিস্তায় কমতে শুরু করেছে পানি

তিস্তায় কমতে শুরু করেছে পানি। কিন্তু তীব্র আকার ধারণ করেছে নদীভাঙন। কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। যমুনা নদীর পানি সামান্য কমলেও অন্য সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে টাঙ্গাইলে ৩৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। এ ছাড়া গাইবান্ধায়  কমেছে বন্যার পানি।

এদিকে নদনদীর পানি কমে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে গেলেও আগামী দুই দিন ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে উত্তরের জেলাগুলোতে; ফলে এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সামান্য অবনতি হতে পারে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাতে মঙ্গলবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ৪৮ হতে ৭২ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

এই সময়ে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার এই তিন নদীর পানি বাড়ার পাশাপাশি যমুনা নদীর পানিও তখন ধীরগতিতে কমবে বলে জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
গত দুইদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি কমছে। পানি কমলেও ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিস্তা পাড়ের শত শত পরিবার । এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত ২০০ ঘরবাড়ি। গত ২৪ ঘণ্টায় বিলীন হয়েছে ৬৫টি বসতভিটা ও বিভিন্ন স্থাপনা। হুমকির মুখে রয়েছে বিদ্যালয়, মসজিদ ও মাদরাসা।

হাতীবান্ধা উত্তর ডাউয়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল মিয়া। তিনি বলেন,তিস্তার পানি কমায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ৭০টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। অনেক ঘরবাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। অনেকে বসতঘর সরিয়ে নিতে বাধ হচ্ছে।চর সিন্দর্না গ্রামের আনোয়ার রহমান বলেন,  চোখের সামনে বসতভিটা নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। আমার এখন মাথা গোঁজার মতো জায়গা নেই।  
এদিকে তিস্তা নদীর উজান থেকে ভাটি অববাহিকায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত  দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারীর ডালিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ১৫৫ মিলিমিটার। 
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ-দৌলা জানান, উজানের ঢল কমেছে। সোমবারের চেয়ে মঙ্গলবার তিস্তার পানি আরও  কমছে। এতে বেলা ৩টায় পর্যন্ত ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার (৫১.১৫) দশমিক ৫৫ সেন্টেমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার (২৯.৩১) ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগের দিন ডালিয়া পয়েন্টে দশমিক ২৯ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়ায় দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার নিচে ছিল।
কুড়িগ্রাম ॥ নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে  ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের পানি বইছে এখনো বিপৎসীমার ওপরে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় তীব্র হয়ে উঠেছে নদীভাঙন। গত ২৪ ঘণ্টায় অর্ধশত পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারিয়েছেন। 
এদিকে পানি কমলেও বন্যার্তদের দুর্ভোগ কমেনি। চরাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। কলা গাছের ভেলা ও ডিঙি নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। রান্নার জায়গা না থাকায় শুকনো খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে অনেক মানুষকে। টয়লেট ও নলকূপ ডুবে থাকায় বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ ব্যাধির প্রকোপ। 
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফসল নষ্টের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য সংকট নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। তৃণভূমি ডুবে যাওয়ায় মিলছে না।
টাঙ্গাইল ॥ জেলার ৫টি উপজেলায় বাড়িঘর, হাট-বাজার, মসজিদ, মন্দির, ফসলি জমিসহ অন্যান্য স্থাপনা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে দুর্গম চরাঞ্চলে ৩৬ হাজার একশ’ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কোথাও অপরিবর্তিত, আবার কোথাও অবনতি হয়েছে। জেলার ৫টি উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ  জনপদের বাড়িঘর, হাট-বাজার, ফসলি জমিসহ অন্যান্য স্থাপনা বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে।
 জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী, ভূঞাপুর, নাগরপুর, গোপালপুর ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার নিচু ও চরাঞ্চল এলাকায় বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে মানুষ। এতে করে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যাকবলিতদের। জেলার ৫টি উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নে ১০৮টি গ্রামে বন্যা দেখা গিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার ৮৩ হাজার পরিবারের ৩৬ হাজার একশ’ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ভূঞাপুর উপজেলার ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে আছে। 

মঙ্গলবার টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ঝিনাই এবং যমুনা নদীর পানি সামান্য কমলেও অন্য সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কালিহাতী ও ভুঞাপুর উপজেলার পানিবন্দি মানুষরা জানান, আমরা যমুনা তীরের মানুষ। প্রতিবছরই যমুনা নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করে চলতে হয়। এবারের বন্যায় আমাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানির ¯্রােতে আমাদের বাড়ির আঙিনা আংশিক ভেঙে গেছে। পাঁচ সাতদিন ধরে পানিতে বন্দি রয়েছে। এতে করে বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ চরম দুভোঁগ পোহাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম জানান, জেলায় ৩৬ হাজার একশ’ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা সামগ্রী হিসেবে চাল, ডাল, তেল, চিনি মসলাসহ সাড়ে ১৪ কেজি ওজনের প্যাকেট, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও পানির পাত্র বিতরণ করা হয়েছে।
গাইবান্ধা ॥ গাইবান্ধার সব নদ-নদীতেই কমেছে বন্যার পানি। ফলে বন্যাকবলিত নি¤œাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। নদী তীরবর্তী এলাকার বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষ ফিরছে বাড়িতে। তবে, পানি কমলেও বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ এখনো রয়েছে।  বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে।  বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের শুকনো খাবারের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্যর সংকট দেখা দিয়েছে।

এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানির অভাবে অনেকে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।গাইবান্ধা পাউবো সূত্র থেকে জানা যায়,  মঙ্গলবার দুপুরে গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে তিস্তা, ঘাঘট ও করতোয়া নদের পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা, হরিপুর কঞ্চিবাড়ী ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে ঘুরে বন্যাকবলিত চরাঞ্চল ও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা মানুষদের দুর্ভোগের এমন চিত্র দেখা গেছে।  
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক নাহিদ রসুল বলেন, জেলার চারটি উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৩৯ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্রে বানভাসিরা অবস্থান করছে। বানভাসিদের মধ্যে শুকনো খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।
গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, চলমান বন্যায় সদর, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার ২৯টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। গত চারদিন থেকে পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক  হতে শুরু করেছে। আশা করা যায় আগামী সপ্তাহেই বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাবে।
ফেনী ॥ ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানিতে নদী পারাপারের একটি অস্থায়ী কাঠের সেতু ভেঙে পড়েছে। এতে আশপাশের দশ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ যাতাযাতের চরম ভোগন্তিতে পড়েছে।

×