ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

দৃষ্টি কাড়ছে সমতলের মানুষের

পাহাড়ি ফল জুমের ফসল, খাদ্য সংস্কৃতি

মোরসালিন মিজান 

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ৮ জুলাই ২০২৪

পাহাড়ি ফল জুমের ফসল, খাদ্য সংস্কৃতি

রাজধানীর বেইলি রোডে পাহাড়ি ফল মেলায় বিভিন্ন ফলের প্রদর্শনী

পাহাড়ি মানুষের জীবন সমাজ সংস্কৃতি নিয়ে সমতলের মানুষের কৌতূহলের সীমা নেই। পার্বত্য এলাকায় তাই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন উপভোগ করেন, তেমনি স্বাদ নেন বিচিত্র খাবারের। তবে এখন অন্য খাবারের চেয়েও বেশি আগ্রহ ফল নিয়ে। কারণ ফলের মৌসুম চলছে। সমতলের মতো পাহাড়েও বিপুল পরিমাণে ফল হয়। সুমিষ্ট ফলে আছে নানা বৈচিত্র্যও। যারা এই স্বাদ এবং বৈচিত্র্যের সন্ধান করতে আগ্রহী তারা এখন ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার বেইলি রোড থেকে।

সেখানে শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রে চলছে সপ্তাহব্যাপী পাহাড়ি ফল মেলা। রাঙ্গামাটি বান্দরবান খাগড়াছড়ি এলাকায় উৎপাদিত ফল দিয়ে স্টল সাজানো হয়েছে। স্টলে আম আনারস কাঁঠাল কলা পেঁপে লটকন রাম্বুটান আখ ড্রাগনসহ প্রায় সব মৌসুমি ফল রাখা আছে। 
মেলা ঘুরে মনেই হয় না রাজধানী শহরের আয়োজন। পাহাড়ি ফল, পাহাড়ি মানুষ। পাহাড়ি জীবন সংস্কৃতির ছোঁয়া। অন্যরকম লাগে। ফলের মধ্যে আমটাই বেশি দেখা যায়। নানা জাতের আম। এই যেমন রাংগুইর, চিয়াং মাই, কিং অব চাকাপাদ কিংবা ব্যানানা ম্যাংগো। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এইসব আমের কিছু জাত সমতলে হলেও, পাহাড়ি জাত আলাদা হয়। স্বাদে ভিন্নতা থাকে। এক বিক্রেতা তো কেটে খাওয়াতেও রাজি হয়ে গেলেন! স্টলে আছে আনারসও।

পাহাড়ের এই আনারস আকারে কিছুটা ছোট। তবে খুব সুস্বাদু। রসালো। আম মুখে না দিলেও আনারস তাই মুখে দিতে হলো। সত্যি সুস্বাদু! পাহাড়ের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে কলা গাছ লাগানো হয়। কলাও হয় প্রচুর। মেলার অধিকাংশ স্টলে কলা আছে। একটি কলা খুব দৃষ্টি কাড়ে। নাম সূর্যমুখী। ফুলের নাম সূর্যমুখী হয়। মেলায় আছে সূর্যমুখী কলাও! এই কলার গায়ের রং আবার লাল। ফলে খুব আকর্ষণ করে। লটকনও এখন বাজারে আছে। তবে পাহাড়ি জাতের লটকনের স্বাদটা নিতে চাইলে মেলায় ঢুঁ মারা চাই।

এখানেও বিক্রি হচ্ছে লটকন। আছে ড্রাগন ফল। চম্পা ফল আবার বাতাবিলেবুর মতো দেখতে। বিটামিন সি সমৃদ্ধ। চেখে দেখার মতো। আছে পাহাড়ি পেঁপে, রাম্বুটান। আরও নানা নামের ফল আছে। মেলায় না গেলে সবগুলো সম্পর্কে জানা বোঝা সম্ভব নয়। 
ফলের পাশাপাশি মেলায় আছে পাহাড়ের বিন্নি চাল, বাঁশের কোরল, জুমের মিষ্টিকুমড়া, কচু, কাজুবাদাম, আচার, মরিচ, পাহাড়ি মধু, পাহাড়ি নারিকেল, এমনকি শুকনো তেজপাতা। পাহাড়ি বিভিন্ন নৃ গোষ্ঠীর তৈরি পোশাক ইত্যাদিও আছে। সব মিলিয়ে পার্বত্য এলাকা বলেই মনে হয়। 
মিনাক্ষী স্টোর নামের একটি স্টলে কথা হয় এর মালিক মিনাক্ষী চাকমার সঙ্গে। তিনি জানান, পাহাড়ে সব সময়ই প্রচুর ফল হয়। তারা নিজেরাই উৎপাদন করেন। বাগান থেকে সরাসরি ঢাকায় আসে তাদের ফল। তবে সেগুলো সবাই খুঁজে পায় না। তাদের লোকেরাই শুধু জানে, কোথায় পাওয়া যায়। তবে মেলা উপলক্ষে প্রায় সব ফল এক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। এই সুযোগে ফল দেখার জন্য, কেনার জন্য, খাওয়ার জন্য সবাইকে মেলায় আসার আহ্বান জানান তিনি। 
লিমা নামের এক বাঙালি নারী ব্যাগ ভর্তি করে ফল কিনছিলেন। কথা হয় তার সঙ্গেও। বলেন, আমার বাসা বেইলি রোডেই। এদিক দিয়ে রমনাপার্কে যাওয়ার সময় মেলায় ঢুকেছি। ঢুকে এত দারুণ সব ফল পেয়ে গেছি যে, না নিয়ে যেতে পারলাম না। পাহাড়ি ফল আগেও খেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ফলগুলো টাটকা হয়। সুস্বাদু হয়। কিনে ঠকার তেমন আশঙ্কা থাকে না। তবে দাম আরেকটু কমানোর পরামর্শ দেন তিনি।  পাহাড়ি ফল মেলা ১২ জুলাই পর্যন্ত চলবে।

×