ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এলো মটকি ভর্তি গ্রেনেড 

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর 

প্রকাশিত: ২২:০৫, ৮ জুলাই ২০২৪

মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এলো মটকি ভর্তি গ্রেনেড 

উদ্ধারকৃত গ্রেনেড

গাজীপুরে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য মাটি খুঁড়তেই নীচ থেকে বেরিয়ে এলো মটকি ভর্তি ১৬ আরজেস গ্রেনেড। পরে ঢাকার বোম ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা রোবটের মাধ্যমে ওইসব গ্রেনেড আলাদা করে উদ্ধার ও বিষ্ফোরণ ঘটায়। এসব শক্তিশালী গ্রেনেড ২১ আগস্টে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানান বোম ডিসপোজাল টিমের সহকারী পুলিশ সুপার। 

সোমবার মহানগরীর দক্ষিণ ছায়াবিথীর বোম্বাইবাড়ী এলাকায় এসব গ্রেনেডের সন্ধান পান মাটি কাটার শ্রমিকেরা। বাড়ির মালিক আবুল কাশেমসহ স্থানীয়রা জানান, প্রায় চার বছর আগে গাজীপুর শহরের দক্ষিন ছায়াবিথীর বোম্বাইবাড়ী এলাকায় সাড়ে তিন কাঠা জমি কেনেন কাপাসিয়া উপজেলার খিরাটি গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে প্রবাসী আবুল কাশেম। ওই জমির চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে রাখেন। ওই জমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য শ্রমিকরা গত চারদিন যাবত মাটি খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করছিলেন। সোমবার সকাল পৌঁনে ৯ টার দিকে মাটি কাটার সময় প্রায় চারফুট গভীর করে গর্ত করার পর কলস আকৃতির মাটির তৈরী একটি মটকি দেখতে পান শ্রমিকেরা। কোদালের আঘাতে মটকি ভেঙ্গে গেলে ভিতরে পলিথিনে মোড়ানো গ্রেনেড সদৃশ বস্তু দেখতে পান। তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন কাজ বন্ধ রেখে এবং বাড়ীর মালিক ও স্থানীয়দের জানান। বাড়ির মালিক ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রেনেডসদৃশ বস্তু দেখে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দিয়ে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। 

পরে ঢাকা থেকে বোম্ব ডিসপোজাল টিমের একটি ইউনিট দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে। বোম্ব ডিসপোজাল টিমের পরামর্শে নিরাপত্তার জন্য আশপাশের স্থানীয় বাসাবাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্য পরামর্শ দেয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদুজ্জামান জানান, গাজীপুরের দক্ষিন ছায়াবিথী এলাকায় মাটি খননের সময় বিষ্ফোরক জাতীয় কিছু একটা পাওয়া গেছে। এমন খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ১৫ সদস্যের পুরো টিম নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। আমরা ঘটনাস্থলে এসে একটি মটকির ভিতর (বড় আকৃতির কলস) পলিথিনে মোড়ানো শক্তিশালী কয়েকটি গ্রেনেড দেখতে পাই, যাকে আরজেএস গ্রেনেড বলা হয়। জায়গাটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমাদের কাছে থাকা রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে রোবটের মাধ্যমে প্রত্যেকটা গ্রেনেডের পিনগুলো অক্ষত আছে কিনা তা পরীক্ষা গ্রেনেডগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনে বোম্ব ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা। পরবর্তীতে আমরা আস্তে আস্তে সফলতার সঙ্গে সবগুলো গ্রেনেড আলাদা করতে সক্ষম হই। এরপর আমাদের টিমের দুইজন সদস্য (বোমটেক) বুম স্যুট পড়ে ঘটনাস্থলে প্রত্যেকটি গ্রেনেড আমরা আলাদাভাবে ডিসপোজ করতে সক্ষম হই। এখানে ১৬টি গ্রেনেড ছিল, যেগুলো আরজেস গ্রেনেড এবং খুব শক্তিশালী। এটা কোন দেশের তৈরী এটা এখন বলা যাচ্ছে না।

তিনি আরো জানান, আমাদের দেশে ২১ আগস্টের সময় এ ধরনের আরজেএস গ্রেনেড দিয়ে হামলা করা হয়েছিল। এটা পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার আছে। পরীক্ষা ছাড়া এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা আলামত নিয়ে যাব এবং সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে দেওয়া হবে পরীক্ষার জন্য। তারা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বিস্তারিত জানাতে পারবে। তবে দেখে বুঝা যাচ্ছে গ্রেনেডগুলো অনেক আগের। তবে কতদিন আগের তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছেনা। প্রত্যেকটা গ্রেনেড উচ্চ ক্ষমতার এবং খুব ঝুকিপূর্ণ ছিল। মটকির ভিতরে পলিথিনে মোড়ানো থাকায় একটা আরেকটার সঙ্গে লেগে ছিল। সেখান থেকে আলাদা করা আমাদের জন্য খুবই সমস্যা হচ্ছিল। তারপরও আমরা সাবধানে আলাদা করতে পেরেছি। এটা নিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) এবং আমরা আলাদাভাবে তদন্ত করব। তদন্তের আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না কত আগে এবং কারা এ শক্তিশালী গ্রেনেড এখানে রাখতে পারে। ওই গর্তের উপর একটি দেয়াল ঢাকনা হিসেবে দিয়ে আলাদা আলাদাভাবে গ্রেনেডগুলো বিষ্ফোরিত করা হয়। ঢাকার বোম ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা ৬ ঘন্টা চেষ্টা করে গ্রেনেডগুলো উদ্ধার ও বিষ্ফোরিত করে।

স্থানীয়রা জানান, গ্রেনেড উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলের আশেপাশে নিরাপদ দূরত্বে থেকে উৎসুক জনতা গ্রেনেড উদ্ধার কার্যক্রম দেখছিলেন। প্রত্যেকটি গ্রেনেড বিষ্ফোরিত করার সময় বিকট শব্দে আশপাশের ভবনসহ পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। এসময় গ্রেনেডের স্লিন্টারের আঘাতে ও বিকট শব্দের কারণে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ভবনের জানালার কাঁচ ফেটে ভেঙ্গে যায়। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান নেয় র‌্যাব-১এর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কমান্ডা মেজর জুন্নুরাইন বিন আলমের নেতৃত্বে র‌্যাব সদস্যরাসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

 জিএমপি’র সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার ফাহিম আসজাদ জানান, এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

শহিদ

×