ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে ॥ ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

১৮ জেলা বন্যাকবলিত

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ৭ জুলাই ২০২৪

১৮ জেলা বন্যাকবলিত

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে যমুনার ভয়াবহ ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর

বিশেষ প্রতিনিধি পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় দেশের উত্তরাঞ্চলে নতুন করে আরও জেলা বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। নিয়ে উত্তর মধ্যাঞ্চলে পর্যন্ত ১৮ জেলা বন্যা কবলিত হলো। আরও জেলা বন্য কবলিত হওয়ায় নতুন করে আরও হাজার আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মাস জুড়ে বন্যা থাকতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

রবিবার সচিবালয়ে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্মন্ত্রণালয় সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান সাংবাদিকদের কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলার সংখ্যা ১৮টি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। বন্যাদুর্গত লোকদের আশ্রয়ের জন্য প্রায় তিন হাজার আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৪০ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের চিকিৎসার জন্য ৬১৯টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, রংপুর, ফেনী, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, বান্দরবান, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া টাঙ্গাইল জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী গত একনেক মিটিংয়ে সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার জন্য দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বন্যা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, শনিবার বন্ধের দিনেও আমরা অফিস খোলা রেখেছি এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেছি। ছাড়াও বন্যাদুর্গত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করে খোঁজখবর নিয়েছি। বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের প্রয়োজন এবং চাহিদা মোতাবেক ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিমন্ত্রী জানান, পর্যন্ত ১৮ জেলায় ২১ হাজার ৭০০ টন চাল, নগদ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, ৬৫ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো অন্যান্য খাবার, গো-খাদ্য বাবদ ৪০ লাখ টাকা এবং শিশুখাদ্যের জন্য ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ছাড়াও সিলেট-, সুনামগঞ্জ- মৌলভীবাজার- সংসদীয় আসনে হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্তর্মন্ত্রণালয় সভায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে কীভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। ত্রাণ কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে একটি মানুষও দুর্ভোগের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করবে না।

বন্যাদুর্গত মানুষের চাহিদা প্রয়োজন বিবেচনা করে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৬৪ জেলায় যাতে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী থাকে, সেজন্য ঘোষিত বরাদ্দের বাইরেও প্রত্যেকটি জেলায় অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে রেখেছি। বন্যা শেষে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে যাতে পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিতে পারি সেই কাজও আমরা এখন থেকে চালিয়ে যাচ্ছি।

ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এরইমধ্যে সেই ক্ষয়ক্ষতির ওপর ভিত্তি করে সারাদেশে রেমালের ক্ষতিপূরণের জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

ত্রাণ সংকটের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রশাসন কোথাও না যাওয়ার কারণে যদি সমস্যা হয় সেটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নেব। কোনো দুর্গম এলাকায় যদি খাদ্য না পৌঁছার কারণে মানুষ কষ্ট করে, তবে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে প্রশাসন তাকে খাদ্য পৌঁছে দেবে। আমরা যে অর্থ দিয়েছি ডিসি সাহেবরা সেই অর্থ পানি নিষ্কাশনের কাজে ব্যয় করতে পারবে। সেই ক্ষমতা আমরা তাদের দিয়ে রেখেছি।

×