ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, চরম দুর্ভোগে মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর 

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ৬ জুলাই ২০২৪

জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, চরম দুর্ভোগে মানুষ

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বসতঘর। 

জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির মাত্রা কমেছে। শনিবার (৬ জুলাই) ভোরে যমুনার পানি এক সেন্টিমিটার কমলেও বিপদসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। 

জেলার সাতটি উপজেলায় বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়লেও মূলত জেলার দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলায় প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। নারী-শিশু ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বন্যার্তরা। শুধু বসতঘর নয়, রান্না ঘর, টিউবওয়েল, শৌচাগার রাস্তাঘাট সবকিছুই তলিয়ে গেছে।  স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী ও বকশীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসহ সরকারি অফিসে পানি ঢুকে পড়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় বসতঘরের পাশাপাশি রান্নাঘর, টিউবওয়েল, শৌচাগার, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। রান্না করে খাওয়া খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বন্যার্তরা পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তার দাবি জানিয়েছেন। 

সরেজমিনে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দেওয়ানগঞ্জের অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ সড়ক তলিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পেড়েছে। বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে টিউবওয়েল, শৌচাগার। গরু-ছাগল নিয়ে উঁচু সড়ক, আশ্রয়ন কেন্দ্রে ও রেলওয়ে স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যার্ত অনেক পরিবার। ইসলামপুর উপজেলাতেও বন্যার পানিতে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। 

ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়নের পশ্চিম বলিয়াদহ নুরুল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দার মেঝেতে বসে ছিলেন খট্টু মন্ডল (৬২)। তিনি জানান, তার চার সদস্যের পরিবার। ঘরে বন্যার পানি ওঠেছে তাই এই স্কুলে এসে বসে আছেন। রান্না করে খাওয়ার মাটির চুলা তলিয়ে গেছে। শুকনা কয়টা খাবার খেয়ে এখানে আসছেন। 

তিনি বলেন, সারাদিন এখানে থাকবো, বিকালে বাড়িতে যাবো। ঘরের মধ্যে পানি, কই থাকবো। বসে থাকার তো কোন উপায় নেই। ঘরে ও আঙিনায় পানি, থাকা তো যায় না। 

একই উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের কাছিমা এলাকার শরবানু ও সমত্তবানু বলেন, তিনদিন আগে ঘরে পানি উঠছে। কোন রকম খেয়ে, না খেয়ে এই তিনদিন থাকলাম। তাই আশ্রয় কেন্দ্রে যাইতাছি। খুব কষ্টের মধ্যে আছি। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, সারা জেলায় বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়লেও মূলত জেলার ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জসহ চারটি উপজেলায় বেশি বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত ৩২০ মেট্রিক টন চাল, চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সহায়তার পাশাপশি ও নগদ অর্থও বিতরণ করা হবে। এছাড়াও আশ্রয়ন কেন্দ্রে চিড়া, গুড়, মুড়ি ও খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীর পানি এক সেন্টিমিটার কমে শনিবার ভোর থেকে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে স্থীতিশীল অবস্থায় রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা ধীরগতিতে পানি বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে।

এম হাসান

×