ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১

তিন ফসলি জমি নির্বাচন

স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ কৃষক

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ৫ জুলাই ২০২৪

স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ কৃষক

হাইমচর উপজেলার উত্তর আলগী গ্রামে স্টেডিয়ামের জন্য প্রস্তাবিত তিন ফসলি জমি

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় খাস জমি থাকলেও তিন ফসলি জমিতে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করার প্রস্তাবনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে কৃষক এলাকাবাসী। কৃষক ইতোমধ্যে জেলা উপজেলা প্রশাসনের নিকট ফসলি জমি রক্ষার জন্য স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।

সরেজমিনে উপজেলার আলগী দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের উত্তর আলগী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রস্তাবিত ফসলি মাঠে অনেক কৃষকই কাজ করছেন।

সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে হওয়ার কারণে বছরে খুব সহজেই জমিগুলোতে একাধিক ফসল উৎপাদন হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালে হাইমচর উপজেলার লামচরি গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাস জমিতে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করার জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। ওই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি অবগত না করায় ওই প্রস্তাবনাটি বাতিল হয়। এরপর আলগী দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত উত্তর আলগী মৌজায় দশমিক ১৯০০ একর ভূমি পতিত নাল জমি দেখিয়ে স্টেডিয়ামের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়। অথচ এই তিন ফসলি মাঠই উপজেলার সবচাইতে বড় সম্পদ। কৃষক তাদের জমিতে স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণের পর বালু দিয়ে ভরাটের খবর পেয়েই ফুঁসে ওঠেন।

উত্তর আলগী গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, এখানে স্টেডিয়াম হলে আমাদের ক্ষতি হবে। কারণ এই জমিগুলোতে তিনটি ফসল উৎপাদন হয়। আমাদের ফসল উৎপাদন করেই চলতে হয়। আমরা চাই সরকার মিনি স্টেডিয়াম করুক। তবে ফসলি জমিতে নয়, যেখানে পরিত্যক্ত জমি আছে সেখানে করা হোক।

কৃষক মকসুদ মিয়া বলেন, আমাদের এই মাঠে অনেকে নিজের জমির সঙ্গে অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ফসল করেন। এখানে স্টেডিয়াম হলে কি করে খাবে? আমরা এই স্থানে স্টেডিয়াম চাই না।

ওই মাঠে কয়েক একর জমি আছে শহীদ গাজীর। তিনি বলেন, এই মাঠের রাস্তার পাশের জমি প্রতি শতাংশ বিক্রি লাখ টাকা করে। এখানে মিনি স্টেডিয়াম হলে আমরা সঠিক মূল্য পাব না এবং ফসল উৎপাদন বন্ধ হবে। আমাদের স্টেডিয়ামের প্রয়োজন নাই।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, কৃষক যেখানে আপত্তি জানাচ্ছে, সেখানে না করে আমাদের ইউনিয়নের লামচরিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি আছে। সেখানেও করা যেতে পারে, যদি কারও আপত্তি না থাকে।

হাইমচর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার বলেন, উপজেলায় যেখানে মিনি স্টেডিয়াম করার প্রস্তাবনা হয়েছে, সেখানকার কৃষক আমাদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারই প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করে দিয়েছেন। ওই কমিটি রিপোর্ট দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তবে এই বিষয়ে ভিন্ন মতামত দিলেন হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, যেখানে আমরা স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রস্তাবনা দিয়েছি, সেখানে কোনো কৃষকের ক্ষতি হবে না। বরং এলাকার উন্নয়ন হবে। ছাড়াও ভালো কাজ করতে গেলে সামান্য কিছু মানুষের ক্ষতি হলেও উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের উপকার হবে।

×