ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১

সোনারুর স্বর্ণযুগ আর নেই

জাহাঙ্গীর আলম

প্রকাশিত: ০১:২৪, ৫ জুলাই ২০২৪

সোনারুর স্বর্ণযুগ আর নেই

সাভার নামাবাজার স্বর্ণ পট্টিতে কারিগর হিসেবে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন কৃষ্ণ সাহা

গহনা তৈরিতে পারদর্শী স্বর্ণকারদের স্বর্ণযুগ এখন আর নেই। নিপুণ হাতের নিখুঁত কাজের নির্মাতা স্বর্ণকার রেতি, সোল্ডারিং, করাত, ফোরজিং, ঢালাই পরবর্তী পলিশিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করেন নারীর সৌন্দর্যের অলঙ্কার। মূল্যবান ধাতুর কারিগর এ গোষ্ঠীটি নানান ডিজাইনের কারুকাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের জন্য চুড়ি, বাজুবন্দ, হার, হাঁসুলি, সীতাপাটি, দুল, কানপাশা, নোলক, নথ, নকছাবি, মূল ইত্যাদি তৈরি করে। স্বর্ণকারের দোকানে দেখা যায় গহনা তৈরির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ডিজাইনের ক্যাটালগ, স্বর্ণ মাপার ডিজিটাল যন্ত্র, স্বর্ণকে তারে রূপান্তরের মেশিন, সোহাগা, জ্বালাইয়ের গ্যাস লাইট, মেরাথন মেশিন ইত্যাদি। স্বর্ণকাররা জানান, এ সব যন্ত্রপাতি তারা ঢাকার তাঁতিবাজার থেকে সংগ্রহ করেছেন।
এক শ্রেণির কারিগর স্বর্ণের সঙ্গে খাদ মিশিয়ে নানান ডিজাইনে অলংকার তৈরি করে। প্রতিটি সোনারুর দোকানেই দেখা মেলে ছোট আকারের চুল্লি ও হাপরের ব্যবহার। স্বর্ণকার রাজিব পাল রনি জানান, আমার পূর্ব পুরুষরা শুধু এ পেশাতেই নিয়োজিত ছিল। এখন খরিদ্দার কম, মালের দাম বেশি, দিনভর দোকান খুলে বসে থাকি হতাশায় আছি আয়-উপার্জন কম। ভালো নেই।
স্থানীয়রা জানান, স্বর্ণকাররা এখন স্বর্ণের কারিগরই নন তারা স্বর্ণ বন্ধক আর নগদ টাকার সুদের ব্যবসায় জড়িয়ে গেছেন। কেউ কাপড়ের দোকান, মুদি দোকান, চায়ের দোকান দিয়ে চলছে। কেউ অটোরিক্সা ও চালাচ্ছে। স্বর্ণকাররা আরও জানান, ইমিটেশন অলঙ্কারের আবির্ভাব আর আলঙ্কার তৈরির আধুনিক প্রযুক্তি এই পেশাটাকে সঙ্কুচিত করেছে। দোকানে কিছু স্বর্র্ণালঙ্কারের স্যাম্পল রাখতে হয়। মালের দাম বৃদ্ধির কারণে পুঁজি সংকটে রয়েছি। রয়েছে আইনগত নানান জটিলতাও তাছাড়া স্বর্ণ পাচারকারীদের বিস্তারও বেড়েছে।
এক সময় এ পেশায় হিন্দুদের প্রাধান্য ছিল। এখন মুসলমানরা নানাভাবে জড়িয়ে গেছে জুয়েলারি ব্যবসায়। আর তাতেই স্বর্ণকার সম্প্রদায় তাদের বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছেন। নাদিরা সুলতানা নামক গৃহিণী জানান, আমার বিয়ের সময় বাবা ৫ ভরি স্বর্ণালংকার দিয়েছিল। ১৬ হাজার টাকা দরে কেনা ছিল। স্বামী বিদেশে যাওয়ার সময় বিক্রি করে দেয়। এখন লাখ টাকার ওপর সোনার দর তাই আর কেনা হয়নি।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলা স্বর্ণকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার ব্রাহ্মণ জানান, দোকানে দোকানে কারিগররা অলস সময় পার করছে। মূল্য বৃদ্ধির কারণে স্বর্ণের ব্যবহার কমে গেছে। আমাদের উপজেলার টঙ্গীবাড়ী, বালিগাও, দীঘিরপাড়, হাসাইলসহ অন্য বাজারগুলোতে দুই শতাধিক দোকানে পাঁচ শতাধিক লোক কাজ করে। নিত্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে অথচ আমাদের কাজ নেই। কোনো রকম সংসার চালাচ্ছি।
স্বর্ণকার সমিতির সভাপতি মৃদুল পাল জানান, ২ জুলাই থেকে ২২ ক্যারেট সোনা ১,১৭,২৮২ টাকা আর ২১ ক্যারেট ১,১১,৯৫১ টাকা ভরি বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণের উচ্চ মূল্যের কারণে স্বর্ণালঙ্কার কেনা সাধারণ ক্রেতাদের সামর্থ্য নেই। স্বর্ণের বাজার অস্থির, দিন দিন বাড়ছে দাম। স্বর্ণ এখন আর সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেই। বিয়ে শাদিতে টুকটাক ধনী শ্রেণির লোকের কিছু স্বর্ণালঙ্কার দেন তাও আবার জুয়েলারি দোকান থেকে সরাসরি বানানো অবস্থায় ক্রয় করে।
জাহাঙ্গীর আলম, টঙ্গীবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ

×