ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ০০:১৯, ৫ জুলাই ২০২৪

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে শাহবাগে সমাবেশ আয়োজন করলে দুর্ভোগে পড়ে হাসপাতালে আসা রোগীসহ সাধারণ মানুষ

সময় এখন আসলে নিষ্ঠুর। আসলেই বড় অচেনা। মাত্র অর্ধশতাব্দী আগের কথা, দেশে একটি মুক্তিযুদ্ধ হলো। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এর পর কত মৃত্যু! কত আত্মত্যাগ! এসবের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ হলো। কিন্তু আজকের প্রতারক সময় যেন ভুলিয়ে দিতে চাইছে সব। মুক্তিযুদ্ধকে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অস্বীকার করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। এই প্রবণতা না, দেশে নতুন নয়।

রণাঙ্গন থেকে ফেরার পরপরই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন তৃণমূলের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সদ্য স্বাধীন দেশে কিছু করে খাওয়ারও সুযোগ পাননি তাঁরা। আর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর তো প্রতিবিপ্লবই ঘটে গেল। দেশটা আর তাঁদের রইল না। সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলার পাত্র হলেন। করুণার পাত্র হলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা রিক্সা চালাচ্ছেনÑ এমন খবর একসময় নিয়মিত ছাপা হতো পত্রিকার পাতায়।

অন্যদিকে কুখ্যাত রাজাকাররা বনে গেল মন্ত্রী-মিনিস্টার! শহীদের রক্তে ভেজা পতাকা উঠল তাদের গাড়িতে। তবে আশার কথা যে, তরী সম্পূর্ণরূপে ডুবে যাওয়ার আগে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলো আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কিছু করার দায় অনুভব করল। এরই প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা করা হলো সম্মানী ভাতার। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এখন ২০ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা দেয় রাষ্ট্র। যৎসামান্য অর্থ। কারণ এই অর্থ তাঁদের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতেই শেষ হয়ে যায়।

এর পরও টাকাটা তাঁরা নিচ্ছেন। ‘নেব না’ যে বলবেন- সে অবস্থায় তাঁরা নেই। রাষ্ট্র তাঁদের গরিব বানিয়েছে। রাষ্ট্রই চেষ্টা করছে কিছুটা দায় শোধ করার। এর বাইরে সরকারি চাকরিতে যে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছিল, সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু ওই যে সময়ের কথা বলছিলাম, সময় এ পর্যায়ে এসে আবারও যেন ভিলেন হয়ে উঠল। রাজাকারদের উত্তরসূরিরা ফিসফিস করে বলতে শুরু করল, মুক্তিযোদ্ধাদের সব দিয়ে দেওয়া হচ্ছে! এটা কেমন কথা?

বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে গুরুতর আপত্তি তুলল তারা। প্রথমে গোপনে। ক্রমে তা প্রকাশ্যে আসে। সর্বশেষ, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে শুরু হয় কোটা সংস্কার ‘আন্দোলন।’ প্রথম বার এই ‘আন্দোলন’ কিছুটা হলেও সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছিল। সরকারও বাদ দিয়েছিল কোটা।  তবে অচিরেই পরিষ্কার হয়ে যায়, এটা আসলে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্ল্যাটফর্ম। অতি সম্প্রতি আদালতও কোটা বহাল রাখার পক্ষে রায় দেন। আর তাতেই নতুন করে শুরু হয় ‘আন্দোলন’।

দাবির পক্ষে এখন রাজধানীতে সভা-সমাবেশ হচ্ছে। এর ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন নগরবাসী। যানজটে শহর অচল হয়ে যাচ্ছে। তার চেয়েও বড় কথা, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা প্রকাশ্যে আসার সুযোগ পেয়ে গেল আবার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে অহর্নিশ কাজ করা মানুষেরা বলছেন, স্বাধীনতার পর এই একটি প্ল্যাটফর্ম থেকেই প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হচ্ছে। কোটা থাকা না থাকা এক বিষয়। আর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া আরেক বিষয়। বিষয়টি নিয়ে এখনই ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তা না হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আরও বড় সংকটে পড়বে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

×