ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১

নিজস্ব পরিবহন চালু না করলে স্কুল বন্ধ ॥ মেয়র আতিক

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২২, ৩ জুলাই ২০২৪

নিজস্ব পরিবহন চালু না করলে স্কুল বন্ধ ॥ মেয়র আতিক

রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় যেসব স্কুল রয়েছে, তাদের নিজস্ব পরিবহন সেবা চালুর তাগিদ দিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। পরিবহন সেবা চালু না করলে স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মেয়র। বুধবার রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বাস সেবা উদ্বোধনকালে মেয়র এই হুঁশিয়ারি দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। স্বাভাবিকের চেয়ে হাজার গুণ বেশি বেতন আদায় করেও অধিকাংশ ইংলিশ মিডিয়াম ও অভিজাত স্কুল শিক্ষার্থীদের নানাভাবে বঞ্চিত করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
মেয়র আতিক বলেন, ‘যানজট নিরসনে বিভিন্ন স্কুলে বাস সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। সেজন্য বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। স্কুলগুলো বলছে, কোনো একটা স্কুলে বাস চালুর পর কী হয় তা দেখতে চায় তারা। আমরা এটা শুরু করতে পারছিলাম না। দফায় দফায় বৈঠক করতে হয়েছে।’ 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব পরিবহন সার্ভিস চালুর তাগিদ দিয়ে আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘যারা ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় স্কুল গড়ে তুলেছেন, তাদের সময় এসেছে স্কুলবাস সেবা চালুর। নইলে কিন্তু স্কুল বন্ধ করে দিতে বাধ্য থাকব। এভাবে শিক্ষামন্ত্রীও আমাদের বলে গেছেন। সহযোগিতা করেন, নইলে আমাদের কঠোর হতে হবে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আপনারা একেকটি বাচ্চার কাছ থেকে মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা ফি নিচ্ছেন। কিন্তু কোনো স্কুলবাস চালু করছেন না। আপনারা আবাসিক এলাকায় স্কুল করেছেন, গাড়ির আধিক্যে ওই এলাকাবাসীর ভোগান্তি হচ্ছে। ডিএনসিসি এলাকার সব স্কুলে বাস চালু করতে হবে।’
মেয়র বলেন, ‘সন্তানরাই বাবা-মায়ের সব থেকে মূল্যবান সম্পদ। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। স্মার্ট স্কুল বাসগুলোয় সিসি ক্যামেরাসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। অ্যাপসের মাধ্যমে ট্র্যাকিং ব্যবস্থাও থাকবে। একটি হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে অভিভাবকেরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে পারবেন।’ মেয়র আতিক বলেন, ‘সব শিক্ষার্থীর বাসার ঠিকানা অনুযায়ী বাসের রুট নির্ধারণ করা হবে। রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে একটি বাসে নির্দিষ্ট রুটের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করবে। এর ফলে খরচ অনেক কমে আসবে।’

এই সার্ভিসের সুবিধার কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে অভিভাবকদের জন্য রয়েছে বিশেষ অ্যাপ। সার্ভিসটি মনিটরিংয়ের জন্য রয়েছে অভিভাবক, স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং ডিএনসিসির আলাদা ড্যাশবোর্ড। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রতিটি বাসে থাকবে নিবেদিত ট্রিপ ম্যানেজার, বাসের ভেতর সিসিটিভি ক্যামেরা, আইএসই সার্ভিস এবং পাওয়া যাবে ২৪/৭ হটলাইন সাপোর্ট। পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই স্মার্ট বাসে চলাচলে ৪৫০ জন শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এক হাজার গুণ বেশি ফি নিয়ে অনেক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কেন নিজস্ব ক্যাম্পাস তৈরি করতে পারছে না। বিদ্যালয়ের রুমগুলো কনভার্ট করে পরিচালিত হবে- সেটা সাময়িকভাবে দেওয়া যায়, কিন্তু আজীবন আমি সেখানে থেকে যাব, আর বিদ্যালয়ের যে সারপ্লাস হবে সেটা আমরা যারা উদ্যোক্তা তারা পকেটে করে নিয়ে যাব, বিদ্যালয়ের জন্য কোনো ক্যাম্পাস করব না, সেই অরাজকতা আমরা চলতে দিতে পারি না।’ ডিএনসিসির নতুন এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান শিক্ষামন্ত্রী। তবে চলমান ষাণ¥াসিক মূল্যায়নের প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে, নেতিবাচক কিছু দেখতে নারাজ বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
ডিএনসিসি জানায়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এই নিরাপদ ও আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক, নিরাপদ এবং অ্যাপসভিত্তিক স্মার্ট স্কুল বাস চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার হিসেবে মাসিক ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। উদ্যোগটি সফল হলে পরবর্তী সময়ে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সম্প্রসারিত করা হবে।
২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘোষণা দেন-স্কুলে যাতায়াতের জন্য ডিএনসিসির ব্যবস্থাপনায় স্কুলবাস চালু করা হবে। এরপরেই তিনি শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, বিআরটিসি, মেট্রোপলিটন পুলিশসহ (ডিএমপি) সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেন। অবশেষে মেয়রের একান্ত প্রচেষ্টায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ডিএনসিসি এলাকায় চালু হচ্ছে ‘স্মার্ট স্কুল বাস’ সার্ভিস।
বনানী বিদ্যানিকেতনে শিক্ষার্থী প্রায় চার হাজার ৮০০। শুরুতে ৪৬০ জন অভিভাবক সন্তানকে স্কুলবাসে নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। অভিভাবকরা আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত দেখবেন সব ঠিক আছে কি না, তারপর তারা এ ব্যবস্থায় আসবেন। সব শিক্ষার্থী পরিবহনে ২০টি দ্বিতল বাস নামানো হবে।

×