ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১

হালদায় এবার ডিম ছাড়েনি মা মাছ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১৭:১০, ৩ জুলাই ২০২৪

হালদায় এবার ডিম ছাড়েনি মা মাছ

হালদা নদী।

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ নামে পরিচিত হালদা নদীতে এবার অনুকূল পরিবেশ না পাওয়ায় কার্প র্জাতীয় মা মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) ডিম ছাড়েনি। ব্যাপক দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হালদা নদীতে মা মাছ ডিম না ছাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।

মেজর কার্পজাতীয় মাছের অত্যানুকুল তাপমাত্রা হচ্ছে (২২-৩০) ডিগ্রী সেলসিয়াস। তারা অল্প সময়ের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রী সে. পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। মেজর কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন আচরণ পানির তাপমাত্রার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত।

প্রজননের উপর উচ্চ তাপমাত্রার নিম্নলিখিত নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে: যেমন, প্রজনন চক্র/ সময় দেরি, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, ডিম্বাণুর পূণতা প্রাপ্তিতে দেরি, হরমোনের ভারসাম্যহীন হয়ে ডিম উৎপাদন কমে যাবে, কম সংখ্যক মা মাছ প্রজনন পরিপক্কতা অর্জন করে। পাশাপাশি উচ্চ তাপমাত্রা নদীর বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য শৃঙ্খলকেও প্রভাবিত করতে পারে। 

উচ্চ তাপমাত্রার প্রতি সংবেদনশীল অনেক জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণী মারা যেতে পারে। ফলে কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য উৎস কমে তাদের বৃদ্ধির হার এবং সামগ্রিক নদীর বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য ব্যবস্হাকে হ্রাস করতে পারে।

এছাড়াও উচ্চ তাপমাত্রায় মাছের বিপাকীয় হার বৃদ্ধির ফলে অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পায় ফলে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পেয়ে শ্বসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে প্রজনন সাফল্যকে হ্রাস করতে পারে। তাছাড়া, কল কারখানার বিষাক্ত বর্জ তো আছেই। সেই কারণে মৎস্য গবেষনাকারী, হালদা বিশেষজ্ঞও পরিবেশবিদরা রীতিমতো চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

চলিত মৌসুমে হালদা নদীর বিভিন্ন স্পনিং পয়েন্টে মা মাছের আনাগোনা দেখা গেলেও বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি পাত না হওয়ায় , পাহাড়ী ঢল নেমে পানিতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি না হওয়াতে  এবং পানির তাপমাত্রা কমে (২৭-২৯) ডিগ্রী সে. ও বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের মিত্রস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার প্রাকৃতিক অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। ফলে মা মাছ ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ পায়নি।

বিশেষজ্ঞরা জানান, চলিত মৌসুমে মা মাছ ডিম না ছাড়ায় জাতীয় অর্থনৈতিক খাতে অন্তত ৮'শ কোটি টাকার ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

এসআর

×