ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৪ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১

হলি আর্টিজানে নিহতদের স্মরণে র‌্যাব ডিজি

আর কখনো জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের উত্থান হবে না

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৫, ২ জুলাই ২০২৪

আর কখনো জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের উত্থান হবে না

২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক

এ দেশে হলি আর্টিজানের মতো আর কোনো জঙ্গি হামলা চালানোর সুযোগ নেই। বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ একটি নিরাপদ দেশ। দেশে আর কখনোই জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের উত্থান হবে না। যদিও অনলাইনে জঙ্গিরা এখনো সক্রিয় রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেটার ওপরও সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। সোমবার সকালে গুলশানে দীপ্ত শপথ ভাস্কর্যে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় এ ধরনের কথা বলেছেন র‌্যাবের প্রধান, এসবি পুলিশের প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার। তারা সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন।

এ সময় জঙ্গি নির্মূলে বাংলাদেশ কতটুকু সফল জানতে চাইলে র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ২০১৬ সালের এই দিনে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। এ ঘটনায় বিদেশী নাগরিকসহ পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন। পরবর্তী সময়ে র‌্যাব ও পুলিশ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে। অনেক জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস করতে র‌্যাব ও পুলিশ সক্ষম হয়। অনেক জঙ্গিকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এখন আর সেভাবে জঙ্গি তৎপরতার তথ্য নেই। জঙ্গিবাদ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে এখন নিরাপদ একটি দেশ।
জঙ্গি দমনে র‌্যাবের সফলতা নিয়ে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, র‌্যাব সূচনালগ্ন থেকে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কাজ করে আসছে। জঙ্গিবাদের বিষয়ে র‌্যাবের নজরদারি রয়েছে। র‌্যাব এখন একটি আধুনিক এবং পেশাদার বাহিনী। ভবিষ্যতে এ দেশে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। র‌্যাবের সেই সক্ষমতা আছে।
জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের আদালত থেকে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ বলেন, সার্বক্ষণিক জঙ্গিদের বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিরা এক সময় নানা প্রচার চালানোর চেষ্টা করেছে। জঙ্গিরা ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করেছে এক সময়। আমরা এসব বিষয়েও নজরদারি করছি। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডেও নজরদারি রয়েছে। আমরা মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই- এই দেশে আর কখনোই জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের উত্থান হবে না।

একই অভিমত ব্যক্ত করে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম বলেছেন, জঙ্গিরা অনলাইন ও বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে পুলিশের অভিযানের ফলে দেশে এখন জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে। আপনারা জানেন, জঙ্গিরা একটি ভুল মতাদর্শ নিয়ে কাজ করে। ফলে এটি দমন করা অনেক লম্বা সময়ের বিষয় ও জটিল প্রক্রিয়া। এই মতাদর্শ এখনো রয়েছে। তাই তারা অনলাইন ও বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোয়েন্দা তথ্য, গবেষণা ও ক্ষেত্রবিশেষে অভিযান পরিচালনা করছে। জঙ্গিবাদ এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আছে।
তিনি বলেন, আজ থেকে আট বছর আগে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নারকীয় জঙ্গি হামলা হয়েছিল। এদিন দুই পুলিশ সদস্যসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিক বিশ্বেও আলোচিত ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। তারা মনে করেছিল, এই জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। আরও জঙ্গি হামলা করলে বাংলাদেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে বলে অনেকে ভেবেছিল।

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা সর্বাত্মক অভিযানে নামি। গোয়েন্দা তথ্যে অভিযানের পাশাপাশি সচেতনতাসহ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নানা কৌশল গ্রহণ করি। হলি আর্টিজানের পরপরই শোলাকিয়াতে একটি হামলা হয়। এরপর থেকে জঙ্গিরা ছোট কিংবা বড় কোনো হামলা করতে পারেনি। জঙ্গিরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করলে আমরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে তাদের বিরুদ্ধে আগেই অভিযান পরিচালনা করি। ফলে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং এখনো আছে।
একই ইস্যুতে গুলশানে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান অনলাইনে জঙ্গি তৎপরতা পুলিশের বড় চ্যালেঞ্জ উলেখ করে বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে অল্প সময়ের ভেতরে অল্প খরচে বেশি মানুষকে সংক্রমিত করা যায়। এ ক্ষেত্রে পুলিশের তৎপরতার পাশাপাশি সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সচেতন শ্রেণির মানুষ ও অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে তার সন্তান কীভাবে চলছে, কার সঙ্গে চলছে, কতক্ষণ তার সন্তান মোবাইলে থাকছে, একা একা থাকছেÑ সবকিছু খেয়াল রাখতে হবে।
জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বাংলাদেশেও এর থেকে মুক্ত নয়। এরপরও পুলিশের সিটিটিসি, এটিইউ ও জঙ্গি দমনে অন্যান্য বাহিনীর দক্ষতা ও দূরদর্শিতা বাংলাদেশকে সুন্দর অবস্থায় রেখেছে। জঙ্গি দমনে বিশ্বে রোল মডেল পরিচিত পেয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, বিভিন্ন দেশে দেখে থাকি জঙ্গি আক্রমণের পরে অপারেশন হয়, কিন্তু বাংলাদেশই একমাত্র উদাহরণ যে জঙ্গি আক্রমণ হওয়ার তথ্য পুলিশের কাছে ছিল এবং ইন্টেলিজেন্স পুলিশিং করে জঙ্গিদের অ্যাটাক করতে পেরেছি এবং অনেক ক্ষেত্রেই নির্মূল করতে পেরেছি। বর্তমানে যে কোনো ঘটনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা রয়েছে। আশা করি, চলমান শান্তিপূর্ণ অবস্থা সংরক্ষণ করতে সক্ষম হব।
জঙ্গিদের অর্থায়নে বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্সের জড়িত থাকার অভিযোগের প্রশ্নে তিনি বলেন, জঙ্গি সংশ্লিষ্ট যে কোনো প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি কিংবা সংগঠন- তাদের পেছনে পুলিশের তৎপরতা রয়েছে এবং সেটি অব্যাহত থাকবে।

×