ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৪ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১

মন্ডু শহর দখলের শঙ্কায় বেকায়দায় জান্তা বাহিনী, অনুপ্রবেশের চেষ্টা

প্রতিনিধি, উখিয়া, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ১৯:২৫, ১ জুলাই ২০২৪

মন্ডু শহর দখলের শঙ্কায় বেকায়দায় জান্তা বাহিনী, অনুপ্রবেশের চেষ্টা

সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শহর মংডু যেকোনো মুহূর্তে আরাকান আর্মির হাতে চলে যেতে পারে। আর তাতে বেকায়দায় রয়েছে জান্তা বাহিনী। ফলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় আছে বাংলাদেশ।

সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে মংডু শহরের ৯০ শতাংশের বেশি এলাকা থেকে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি। শহরটিতে মিয়ানমারের বিজিপিসহ অন্যান্য বাহিনীর ৪ হাজার সৈন্য রয়েছে। আর এই শহরটি চারপাশে ঘিরে রেখেছে আরাকান আর্মি। এর জের ধরে গত ৩ দিন ধরে চলছে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাবর্ষণ, মর্টার শেল বর্ষণের ঘটনা। বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পাচ্ছে নাফ নদের এপারে থাকা বাংলাদেশের মানুষ। 

মিয়ানমারের মংডু থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, মংডু শহর দখলের সর্বশেষ পরিস্থিতির কারণে কয়েকটি এলাকার লাখের অধিক রোহিঙ্গার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এসব রোহিঙ্গা নাফ নদের ওপারে প্যারাবন, চাষের জমি, বন-জঙ্গলে অবস্থান করছে। তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য নানাভাবে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে অনেক রোহিঙ্গা এখন সংঘাতের মাঝামাঝি এলাকায়। যাদের একপাশে আরাকান আর্মি এবং অপর পাশে বিজিপি। যাদের সরতে দিচ্ছে না মিয়ানমারের জান্তারা। 

অভিযোগ উঠেছে, এসব রোহিঙ্গা মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে চরম ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এসব রোহিঙ্গার মধ্যে। 

সূত্র বলছে, এর আগে মংডু শহরের দক্ষিণের কিছু অংশে কয়েকটি বিজিপির চৌকি ছিল। ওইসব চৌকি হয়ে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ নাফ নদের ওপারে অবস্থান করে খাদ্য ও গোলাবরুদ সরবরাহ করত। কিন্তু গত সপ্তাহে দক্ষিণের ওইসব চৌকিও আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এতে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজও পিছু চলে গেছে। ফলে এ পরিস্থিতিতে মংডু শহরে আটকে পড়া মিয়ানমার বাহিনীকে সহায়তা করতে পারছে না নৌবাহিনী। ফলে গোলবরুদ ও খাদ্য সংকটে দুর্বল হয়ে পড়েছে ৪ হাজার সেনা সদস্য। এতে আর বেশিক্ষণ আরাকান আর্মির সঙ্গে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। ফলে যেকোনো সময় মংডু শহর আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। ওখানে আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর মাঝামাঝি রয়ে গেছে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ। যাদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী শেষরক্ষার চেষ্টা করছে।

টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ওপারে মর্টার শেল, গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণের শব্দের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে নাফ নদ অতিক্রম করে মিয়ানমারের লোকজনের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় আছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্ট গার্ড বাহিনী। গোয়েন্দা নজরদারি, টহলও বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও সীমান্তবাসীও সজাগ রয়েছে।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ওটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এর জের ধরে কোনোপ্রকার অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। অনুপ্রবেশ করতে দেওয়ার কোনো সুযোগও নেই। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।’

 

এম হাসান

×