মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কের আমঝুপি পর্যন্ত সড়কের পাশের গাছগুলো কাটার জন্য চিহ্নিত করা হয়
মেহেরপুর থেকে মুজিবনগর ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কের আমঝুপি পর্যন্ত সড়কের পাশের প্রায় দেড় হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে মেহেরপুর সড়ক বিভাগ। এ নিয়ে গাছগুলো কাটার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মেহেরপুর জেলা পরিষদ বরাবর চিঠি দিয়েছে সড়ক বিভাগ। তবে রাস্তার পাশে সড়ক বিভাগের দেওয়া চিঠি অনুযায়ী সব গাছ কাটতে নারাজ জেলা পরিষদ। কারণ হিসেবে জেলা পরিষদ জানাচ্ছেন, তালিকভুক্ত অনেক গাছই কাটার উপযোগী নয়।
যে গাছগুলো কাটার উপযোগী সার্বেয়ারের (পর্যবেক্ষক) মাধ্যমে শুধুমাত্র সেই গাছগুলোই কাটা হবে বলে জানিয়েছেন মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের পাশের সারি সারি এই গাছগুলোই প্রতিদিন মানুষের যেমন উপকার করছে তেমনি নয়নাভিরাম এক মনোমুগদ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। তবে সেই নয়নাভিরাম মনোমুগদ্ধকর পরিবেশ থাকবে না খুব বেশিদিন। এরইমধ্যে রাস্তা প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে মেহেরপুর সড়ক বিভাগ। ফলে কাটা পড়বে এই সড়কের পাশে মার্কিং করা ৯৭৬টি গাছ।
শুধুমাত্র এই সড়কই নয় মেহেরপুর থেকে আমঝুপি পর্যন্ত করা হবে ফোর লেন ফলে প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তার পাশে ৪৬৪টি গাছ কাটা হবে। শতবর্ষী, অর্ধশতবর্ষী কিংবা ছোট গাছ মানা হয়নি কোনটিই। কড়ই, মেহগনি, নিমসহ প্রায় সব গাছই সড়ক বিভাগ লাল রং করে নাম্বারিং করেছে। কিছু গাছ রয়েছে সড়কের কিছুটা ওপরে, আবার বেশিরভাগ গাছ রয়েছে সড়কের বাইরে। তবে প্রায় সবগুলো গাছই নাম্বারিং এর আওতায় এসেছে। এসব গাছগুলো কেটে ফেলার উদ্যোগে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে মেহেরপুরের সাধারণ মানুষ। সচেতন মহলের দাবি, শতবর্ষী পুরানো গাছগুলো কেটে ফেলা হলে মেহেরপুর আর বসবাসের উপযোগী থাকবে না। প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসবে।
সরেজমিনে মেহেরপুর থেকে মুজিবনগর ও মেহেরপুর থেকে আমঝুপি সড়ক ঘুরে দেখা যায়, শতবর্ষী কড়ই, মেহগনি, শিমুল ও নিম গাছগুলোকে সড়ক বিভাগ লাল রং করে নাম্বারিং করা হয়েছে। কিছু গাছ রয়েছে সড়কের কিছুটা ওপরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়, আবার বেশিরভাগ গাছ রয়েছে সড়কের বাইরে।
মুজিবনগর উপজেলার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উন্নয়ন যেমন আমাদের প্রয়োজন আছে তেমনি গাছও আমাদের অতি জরুরি। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে দিনের বেলায় চলাচল করার উপায় নেই। একে প্রচ- গরম অন্যদিকে এই সড়কের সব গাছ কাটা হয়েছে। অথচ বছরখানেক আগেও এই রাস্তাটি ছিল সবুজে ঘেরা একটি রাস্তা। এখনো মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়া সড়কে গাছ লাগানো হয়নি। সেই রাস্তা মরুভূমির মতো হয়ে গেছে।
পথচারী সাব্বির হোসেন বলেন, মেহেরপুরে এবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শত শত বছর ধরে যে গাছগুলো আমাদের প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করছে সেই গাছগুলো যদি কাটা হয়, আগামীবছর হয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আর মেহেরপুরে বসবাস করতে পারব না। আমাদের গরমের সময় প্রচণ্ড গরম অনুভূত হবে। অন্যদিকে আবহাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়বে।
মেহেরপুরের পরিবেশ কর্মী মাসুদ রেজা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পুরো বিশ্ব কাজ করছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বার বার গাছ রোপণের তাগিদ দিচ্ছেন। তারপরও গাছগুলো কাটার উদ্যোগ নেওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। রাস্তার পাশে অনেক জায়গা আছে প্রয়োজনে গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রাস্তা প্রশস্ত করার পরিকল্পনা করা হোক। আর যদি সবগুলো গাছ কাটা পড়ে তাহলে আবারও ১৫ থেকে ২০ বছর লাগবে এসব গাছ বড় হতে। কোনো গাছ মারা যাবে আবার কোনো গাছ জীবিত থাকাবে। আমরা চাই উন্নয়নের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনাসহ রাস্তার পাশে যেন অধিক পরিমাণে গাছ লাগানো হয়। এতে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। তাহলেই আমরা আবার সেই আগের রূপ ফিরে পাব।
মেহেরপুর সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, অনেক গাছই সড়কের ওপরে চলে এসেছে ফলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। গাছগুলোর কারণে সড়ক সংস্কার বা প্রশস্ত করাও যাচ্ছে না। গাছগুলো কাটার জন্য জেলা পরিষদকে চিঠির মাধ্যমে তালিকাসহ জানানো হয়েছে। রাস্তার পাশে গাছ কাটার জন্য সড়ক বিভাগের দেওয়া চিঠি অনুযায়ী গাছ কাটতে নারাজ মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, যে গাছগুলো কাটার উপযোগী সার্বেয়ারের (পর্যবেক্ষণ করে) মাধ্যমে শুধুমাত্র সেই গাছগুলোই কাটা হবে। সড়কের কাজ শেষ হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বনায়ন করা হবে। ফলে প্রকৃতির ওপর সেই প্রভাব আর পড়বে না।