ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১

এক গাছে ৫ রকমের আম 

সংবাদদাতা, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম 

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ২৯ জুন ২০২৪

এক গাছে ৫ রকমের আম 

আম বাগান।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরমা কেশুয়া এলাকায় আবু তৈয়বের শখের ফল বাগানে এক গাছে ৫টি শাখায় পাঁচ রকমের আমের ফলন হয়। সেই সঙ্গে শোভা পাচ্ছে নবাব সিরাজউদ্দৌলার টেবিলের দুষ্প্রাপ্য আম কহিতুর। এই বাগানে প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফলের চাষ হচ্ছে। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. আলী আজাদীর ভাতিজা আবু তৈয়ব। বাগান করা তার কাছে শুধু বাণিজ্যিক বিষয়ই নয়, বরং বিভিন্ন প্রজাতির ফলের সমাহার ঘটানো তার শখ।  

বাগান মালিক মো. আবু তৈয়বের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি দীর্ঘ ১৯ বছর প্রবাসে থেকে ২০১১ সালে দেশে ফিরে শখের বাগান শুরু করেন। ৬৫ শতক জমি ক্রয় করে ১০ বছর ধরে এ বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির আম, কাঠাঁল, কলা, মাল্টা, শরিফা, লিচু, লেবু, কমলা, জাম্বুরা, নারকেল, পেয়ারা চাষ করে যাচ্ছেন। 

বাগানে রয়েছে আলফ্রান্সো, সূর্যডিম, নামডকমাই, কিউজায়, অকরং, মহাচনক, তাইওয়ান রেডম্যাঙ্গো, গ্রিনম্যাঙ্গো, চোকানান, বেনানা, কল্যাণ ভোগ পালমার, থ্রিটেস্ট, সাকাপাত, চোষা ইন্ডিয়ান, চোষা পাকিস্তান, পুসা সোরাইয়া, রাণি পছন্দ, জর্দালু, তোতাপুরী, আনোয়ার রাতাউল, দশেরী, হাইব্রিড-১০, বেগমফুলী, কোহিতুর, চিয়াংমাই, শীতাভোগ, কোশরী, ইমাম পছন্দ, নুরজাহান (প্রতিটি আমের ওজন ৪-৫ কেজি), কেনচিনটন প্রাইড, থাই কাঁচামিঠা, বি.এম-৭ বা বেগুণী আম, কেশর, ম্যাংগোমিন, সদাবাহার, সেভেন স্টেপ আর-২, ই-২, কাটিমন, মল্লিকা, গৌরমতি, হাড়িভাঙ্গা, বারি-৪, আম্র্রপালিসহ নানা জাতের আম।  

থাইল্যান্ডের রেড আই রবিকে বাংলাদেশে চ্যাংমাই থাই-১ আম বলা হয়ে থাকে। এ বাগানে নুর জাহান ও মাংগোমিন প্রজাতির আম প্রতিটি ২ থেকে ৫ কেজি ওজনের হয় বলে জানালেন তিনি। ১২ মাস আমের ফলন হয় এমন গাছও রয়েছে, যে গাছেগুলোতে জানুয়ারি মাসে ফল এলেও এখনো পর্যন্ত এসব ফল পরিপূর্ণ পরিপক্ক হয়নি। 

তার মতে, ৭ থেকে ৮ মাস পর তথা জুলাই’র পর থেকে এসব আম পাকা শুরু হবে, যখন দেশে প্রচুর পরিমাণে আম পাওয়া যাবে না। বাগানে সবচেয়ে মূল্যবান আম হিসেবে কহিতুর প্রজাতির আমকে দুলর্ভ হিসেবে আখ্যায়িত করে আবু তৈয়ব জানান, এ আমটি নবাব সিরাজদৌল্লা’র মহলে খাওয়ানো হত। নবাব পরিবারের মধ্যে এ আম উপহার হিসেবে দেওয়ার প্রচলন ছিল। 

কহিতুর আমের বৈশিষ্ট্য হলো- আমটি পাকার পর বাশেঁর চিলা দিয়ে কাটতে হয়, ধাতব পদার্থ আমে লাগলে আমের প্রকৃত স্বাদ হারিয়ে যায়। তাছাড়া আমটি দিনে বা রাতে যে সময় পরিপক্ক হবে তখনই গাছ থেকে ছিড়ে নিতে হবে। আমটি পরিপক্ক হওয়ার সাথে সাথে পড়ে যায়, আর নিচে পড়ে গেলে আমের প্রকৃত স্বাদ হারিয়ে যাবে। 

তৈয়ব বলেন, টেলিভিশনে শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে শাখা কলম শিখে তিনি নিজে এখন তার বাগানে একটি গাছে ৪ থেকে ১২ রকমের আমের ফলন ফলাচ্ছেন। বাগানে নাগপুরি, দার্জিলিং, পাকিস্তানি-১,২, ভূটানি, মিশরীয়, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, চায়না, ডেকোফন, চাতকের কমলা, ফিকিনে অরেঞ্জ, বারি-১, বাউ-৩, মাল্টা তারাকো (ব্ল্যাড মালটা), মোরো, চেনগুনিলো, হিয়ারলোম নেভেল মালটা, কাগজী এলাচ, সিডলেস লেবু, হলুদ লেবু, কাফের লাইন, দেশী লেবু, বলসন্দুরী কুল, সিডলেস কুল, কাশ্মিরী কুল, এসএনবি, ইসরাইলী, চায়না, সিলেটি, সিয়াম জাম্বুরা, ভাগুয়া অস্ট্রোলিয়ার আনার, বারমাসি পিংক কাঠাঁল, ভিয়েতনামী লাল কাঁঠাল, চায়না কাঁঠাল, চেম্পাডাক কাঁঠাল, দেশী নারিকেল, কেরালা, ভিয়েতনামের কাট জাতের নারিকেল, চায়না-৩, চায়না-২, হুম্পেরিয়াল, এফোরার, এম্পেরার, ক্লেমন্টিন, নেপালি, গোল্ড নাগেত, ভ্যান্সিয়া, বেবি, আমেয়া-৮ কমলা, পাকিস্তানি মাল্টা,  জিনাইন, সাগর, চাঁপা, বাংলা কলা, থাই মাধুরী, কাঞ্চননগরের বাতাসা পেয়ারা, আলু বোখরা, সফেদা, বিভিন্ন প্রজাতের শরিফা, তিংক এনোনিয়া শরিফা, রোনানিয়া শরিফা, বিলেতি গাফ, কদবেল, আমড়া, কামরাঙ্গা, ফার্সিমন, লটকন, কারিপাতা, আলূবখড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের বাগান করে যাচ্ছেন এ প্রবাসী। 

সৌখিন খামারি আবু তৈয়বকে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন কৃষি অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পীযূষ রায় চৌধুরী। নিজের প্রচেষ্টায় তৈয়ব দীর্ঘ সময় ধরে বাগান করতে গিয়ে গাছের সঙ্গে মিশে গেছেন। তার বাগানের গাছে কখন কোন সার, পানি এবং কেমন রোদের তাপ দরকার তিনি তা বুঝতে পারেন। এক কথায় তাকে গাছের বন্ধু হিসেবে বৃক্ষপ্রেমিক বলা যায়।

বাগানের উৎপাদিত ফল তিনি বিক্রি না করে স্বজনদের মাঝে বিলি করে দেন। তার একটি গাছে এক মৌসুমে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার আম উৎপাদন হয়। তিনি বলেন, মানুষ কাঠের গাছ রোপন করে ২০ বছর পর ২০/৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করায় আশায়। অথচ ফলজ গাছ রোপন করলে ১ বছর পর থেকেই হাজার হাজার টাকার ফল বিক্রি করা যায়।  

এসআর

×