ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১

ভাঙনের আগে শেষ রান্না

শফিকুল ইসলাম শামীম

প্রকাশিত: ০১:০৬, ২৮ জুন ২০২৪

ভাঙনের আগে শেষ রান্না

মাজেদা বেগম

বয়স্ক মাজেদা বেগম ছল ছল চোখে বলেন, স্বামীর এই বসত ভিটায় আর হয়তো থাকতে পারবো না। এই রান্না হয়তো শেষ রান্না। এই রান্না আমি শেষ করতে নাও পারি। কারণ নদী ভাঙন শুরু হলে দৌড়ে পালানো  লাগবে। অশ্রু ভেজা দৃষ্টি নিয়ে বয়স্ক এই মহিলা আরোও বলেন, ঘরে বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে নিয়ে ঘুম ধরে না। স্বামীর বয়স হওয়ার কারণে আগের মত কাজ করতে পারে না। কিন্ত দিন দিন সংসারে অভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথায় যাবো কি খাবো একমাত্র উপরওয়ালা জানে।
নদীর পারে বসতি বয়স্ক বারেক মৃধা বলেন, সব হারানোর পথে। আমার সব শেষ। এই বাড়ী নদীতে চলে গেলে মেয়েগুলো নিয়ে কোথায়ও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। সারারাত ঘুম হয় না। কোথায় গিয়ে, কি করে চলবো। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) অবহেলার কারণে দৌলতদিয়া ৬ ও ৭নং ফেরি ঘাট এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। সময় মত ব্যবস্থা নিলে একটা চাপ পরতো না। 

ঘরে মেঝেতে ২৮ বছরের অসুস্থ্য ছেলে। সুচিকিৎসা না পেয়ে বিছানায় মৃত্যুর যন্ত্রনায় কাঁতরাচ্ছেন জম্মের পর থেকে। ঘরে খাবার নেই। অসুস্থ্যতার কারণে ভারি কাজ করতে পারেন না আতর আলী। বয়স ৮০ কোঠা পার হলেও জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুলের কারণে ৬০ বছর পূরণ হয়নি। যে কারণে বৃদ্ধ বয়সেও আতর-মাজেদা দম্পতি সরকারী সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নদী পারে বসে ভারাক্লান্ত কণ্ঠে কথা গুলো বললেন রাজবাড়ী জেলার দৌলতদয়িা পদ্মা নদীর পারের বসতি মাজেদ মিয়া। 
তিনি বলেন, আশ্বাস আছে, তবে বাস্তবায়ন নেই। মেম্বার, চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং এমপি এরা মাঝে মধ্যে আসে তবে কোন কাজ করেন না। আসেন, দেখেন, চলে যান। কোন কাজ হয় না। তবে এই নেতাগুলো একটার পর একটা আশ্বাস দেন। ভারি কণ্ঠে বলেন, আর একটা চাপ পরবে না। কিন্ত চলে যাওয়ার পর আর কোন খোঁজ খবর থাকে না। 
আপনার বসতবাড়ী’র অর্ধেক নদীতে চলে গেছে এখন কোথায় যাবেন এমন প্রশ্নে দিনমজুর আতর আলী বলেন, আমার যাওয়ার কোন জায়গা-জমি নেই। এই ভিটা ছেড়ে আমি কোথায়ও যাবো না। ঘরে বিয়ে’র উপযুক্ত মেয়ে ও ২৮ বছরের অসুস্থ ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে নদী পাড়ে এই বাড়ীর ভিটা মাটি কামড় দিয়ে থাকবো। নদীতে ভেঙ্গে গেলে আমরাও ভেসে যাবো। ফাঁকে গিয়ে না খেয়ে মরার চেয়ে পরিবারের সবাই মিলে এক সাথে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মরা অনেক ভাল। তবুও এই জায়গা থেকে কোথায়ও যাবো না। আমার যাওয়ার মত সামর্থও নেই। 
বর্ষার শুরুতে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা দৌলতদিয়া ৬ ও ৭নং ফেরি ঘাট এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ৯টি পরিবার ও একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অন্য জায়গায়চলে গেছে। ভাঙন আতংতে তিন শতাধিক পরিবারের ঘর বাড়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।    
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারমান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, আমাদের ফেরি ঘাট সেখানে হুমকির মুখে পরবে সেখানে কাজ করা হবে। আমরা একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছি যে ঘাটগুলো সংস্কার করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই কাজ চলমান রয়েছে। 
শফিকুল ইসলাম শামীম, রাজবাড়ী

×