ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১

সরিয়ে নেওয়া হয় গরু-ছাগল

বিতর্কিত সাদিক অ্যাগ্রো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৫, ২৮ জুন ২০২৪

বিতর্কিত সাদিক অ্যাগ্রো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে

সাদিক অ্যাগ্রোতে বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযান চালায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন

ছাগলকাণ্ডে তোলপাড় হওয়ায় টনক নড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশানের। অবৈধভাবে সরকারি খাল ও সড়ক দখল করে সাদিক অ্যাগ্রো গড়ে তোলার অভিযোগ ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় অ্যাকশনে নেমেছে ডিএনসিসি। বৃহস্পতিবার সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিতর্কিত গরু খামারের একাংশ। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট  মোতাকাব্বীর আহমেদ এ অভিযান চালিয়ে উদ্বার করেছেন, রামচন্দ্র খালের বেশ অংশ। তবে অভিযানের বিষয়ে আঁচ করতে  পেরে আগেভাগেই নামিদামি অনেক গরু ছাগল সরিয়ে নেন সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন। 
অভিযানে নবীনগর হাউজিং ৭ নম্বর রোডের মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে গড়ে তোলা সাদিক অ্যাগ্রোর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষে মালামাল নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষে জব্দ করা মালামাল উন্মুক্ত নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। নিলামে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা সকল মালামাল কিনে নিয়েছেন। তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিলামে কেনা মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। আগামী তিন দিন অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন অভিযান চালাবে বলেও জানান তিনি।
অভিযানে ডিএনসিসির অভিযান পরিচালনাকারী দলের সদস্যরা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে পরিচ্ছন্নতা কর্মী অংশ নেন। এ ছাড়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত ছিলেন।
অভিযানের শুরুতেই খালের অংশে দখলে থাকা অস্থায়ী স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সাদিক অ্যাগ্রো ছাড়াও বেশ কিছু অস্থায়ী স্থাপনা এখানে গড়ে উঠেছিল, সেগুলো উচ্ছেদ করেছে ডিএনসিসি। মূলত খালের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছিল সাদিক অ্যাগ্রোর খামার। পাশাপাশি সড়কের জায়গাও দখল করে তারা। মূলত সেই কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে ডিএনসিসি।
এত বড় খামারে অভিযানের সময় কৌতূহলী জনতার ভিড় দেখা যায় সকাল থেকেই।  ছিল বিপুল সংখ্যক গণমাধ্যম প্রতিনিধিরাও। এ সময় অভিযান সম্পর্কে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, অভিযানে  দেখেছেন রামচন্দ্রপুর খালের তীর দখল করে স্থাপনা করা হয়েছে।  সেই স্থাপনা থেকে দখল উচ্ছেদ করা হয়েছে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সবাইকে আইন মেনে ব্যবসা করতে হবে।  কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান নয়, আমাদের অভিযান অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান শেষে তিনি এসব কথা বলেন।  মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, রামচন্দ্রপুর খালের দুই ধারে যারা অবৈধ দখলদার ছিল তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান। খালের জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি করপোরেশন থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগে এখান  থেকে উত্তর সিটির মেয়র ট্রাক স্ট্যান্ড সরিয়েছেন, বহুতল ভবন  ভেঙেছেন। এটা আমাদের নিয়মিত অভিযানের অংশ।

সাদিক অ্যাগ্রোর মালিককে ঈদের আগেও আমরা নোটিস দিয়েছি। অবৈধ স্থাপনা থাকলে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। আমরা ঈদের আগে উচ্ছেদ অভিযান করিনি। কারণ এর ফলে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি  তৈরি হতো। আমরা এমনটা চাইনি বলে উচ্ছেদে যাইনি।  সেই নোটিসের কোনো ব্যবস্থা নিইনি।
জমির মালিকের অভিযোগ তিনি  কোনো নোটিস পাননি। তা হলে সাদিক অ্যাগ্রো ভাড়াটিয়া হিসেবে নোটিস কীভাবে পায়- জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, খালের একটা নীতিমালা আছে। খালের প্রবাহীকার ৩০ ফিটের ভেতরে কোনো স্থাপনা থাকতে পারবে না, এই নীতিমালা রয়েছে। জমির মালিক কাগজ দেখিয়েছেন ৪ শতাংশের কিন্তু দখল করেছেন এক বিঘা। আর আমরা উচ্ছেদ করেছি অবৈধ স্থাপনা, জমির মালিককে নয়। খালের ভেতরের যে অংশ আছে,  সেটা আমরা উচ্ছেদ করেছি।

তবে ‘ছাগলকা-ের সঙ্গে সাদিক অ্যাগ্রোতে উচ্ছেদ অভিযানের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের নির্দেশ কেউ খাল দখল করতে পারবে না। অবৈধ দখলদারদের কাউকে  বৈধ নোটিস দেওয়া হবে না। তার পরও আমরা সাদিক অ্যাগ্রোকে নোটিস দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা গুরুত্ব দেয়নি।
সাদিক অ্যাগ্রোর পেছনে ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালযের জায়গা দখল করা হয়েছে জানিয়ে মোতাকাব্বির বলেন, আশপাশে যারা খাল দখল করছে তাদেরও উচ্ছেদ করা হবে। এক ব্যক্তি চার শতাংশ জায়গার মালিকানা দাবি করেছেন জানিয়ে এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এই ব্যক্তি পর্যাপ্ত কাগজপত্র দাখিল করতে পারেননি। এখানে ২০ শতাংশর ওপরে জায়গা আছে। বাকি জায়গাার মালিক আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। কেউ আমাদের জানাননি। কাজেই যারা দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে খাল খনন কাজ শুরু হবে জানিয়ে মোতাকাব্বির আহমেদ বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে খাল দেখতে পাবেন।
উত্তর সিটি করপোরেশনের এ কর্মকর্তা বলেন, অভিযানে একজন জমির মালিক এসেছিল। সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেউ আসেনি। আর সাদিক অ্যাগ্রোকে গত ১৮ তারিখ নোটিস করা হয়েছে যেন খালে বর্জ্য না ফেলে। কিন্তু তারা কোনো সহযোগিতা করেননি। আমরা খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করছি। এর পর আমরা আমরা খাল পরিষ্কার অভিযান চালাব।

×