ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১

ট্রেনে তরুণী ধর্ষণ ॥ ৪ জন গ্রেপ্তার কর্মকর্তা সাসপেন্ড

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২৭ জুন ২০২৪

ট্রেনে তরুণী ধর্ষণ ॥ ৪ জন গ্রেপ্তার কর্মকর্তা সাসপেন্ড

চট্টগ্রামে চলন্ত ট্রেনে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪ আসামি

সিলেট থেকে চট্টগ্রামে আসার পথে আন্তঃনগর ট্রেনে ধর্ষিত হয়েছেন এক তরুণী। উদয়ন এক্সপ্রেসের খাবার ও আসবাব রাখার জন্য সংরক্ষিত বগিতে এ ঘটনা ঘটে। তরুণীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে পুলিশ মোট ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে বুধবার ট্রেন থেকে ৩ জনকে এবং বৃহস্পতিবার ভোরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর এলাকা থেকে একজনকে পাকড়াও করা হয়। দায়িত্বে অবহেলার কারণে ওই ট্রেনে দায়িত্বরত রেলওয়ের এক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার তরুণী চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 
রেল পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক ২০বছর বয়সী তরুণীর বাড়ি বান্দরবান জেলায়। তিনি আত্মীয়ের সঙ্গে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় থাকেন। মঙ্গলবার রাতে ওই তরুণী ভৈরব থেকে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন। টিকিট না থাকায় ওই তরুণী খাবার ও আসবাব রাখার জন্য সংরক্ষিত বগিতে অবস্থান করছিলেন। ট্রেনটি লাকসাম অতিক্রম করার পর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তিনি ধর্ষিত হন। সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি বুধবার সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে এসে পৌঁছায়।

এর পর তরুণী রেলওয়ে থানায় গিয়ে ধর্ষিত হওয়ার অভিযোগ করেন। তবে এর আগে তরুণী ধর্ষিত হওয়ার ঘটনাটি অবগত হয়ে রেলওয়ে পুলিশ ওই বগিতে গিয়ে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন মো. জামাল (২৭), মো. রাশেদ (২৭) ও মো. শরীফ। সেখান থেকে পালিয়েছিল একজন। বৃহস্পতিবার সকালে নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় চতুর্থ আসামি আবদুর রব রাসেলকে। এই চারজনই খাবার পরিবেশনকারী প্রতিষ্ঠান এসএ কর্পোরেশনের কর্মী। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) আবদু রহিমকে।
রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ভুক্তভোগী তরুণী নিজেই বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুততার সঙ্গে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি একজন পালিয়ে গেলেও তাকেও নোয়াখালী থেকে ধরা হয়েছে। আদালতের আদেশে আসামিদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আদালতের আদেশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে আন্তঃনগর ট্রেনে তরুণী ধর্ষণের ঘটনার পর ট্রেনে খাবার সরবরাহ প্রতিষ্ঠান এসএ কর্পোরেশনের সকল কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি সিলেট রুটের উদয়ন ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে খাবার সরবরাহ করে আসছিল। তদন্তে পাওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে চুক্তিও বাতিল করা হবে। 
পূর্বাঞ্চলীয় রেলের অতিরিক্ত প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক মো. আবু বকর সিদ্দিকী সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের খাবার সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম স্থগিদের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘গত ২৫ জুন দিবাগত রাত ১০টায় সিলেট স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী ৭২৪ নম্বর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিস প্রদানের জন্য আপনার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারী শরীফ ও তার সহযোগীরা একটি অপরাধ সংঘটিত করেছে মর্মে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত পাহাড়িকা-উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে আপনার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।’ 
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম নাজমুল ইসলাম জানান, তরুণীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকলেও তাদেরও গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 
ট্রেনে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসএ কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী মো. শাহ আলম জানিয়েছেন, রেলওয়ে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জঘন্য এই ঘটনার জন্য তারাও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেবেন।

×