ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:১২, ২৭ জুন ২০২৪

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

হলিক্রস ও বিজ্ঞান কলেজের সামনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার

বাইরের যে কোনো দেশের নতুন বা পুরনো শহরে প্রথম পা রাখলে মন ভরে যায়। ইউরোপ তো ছবির মতো সুন্দর। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা প্রতিদিন সেখানে যাচ্ছেন। মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখছে আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্য এমনকি এশিয়ার অনেক দেশ। নিজেদের শহর নগরের ইতিহাস ঐতিহ্য আধুনিকতা উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে প্রচেষ্টার অন্ত নেই তাদের। অথচ আমাদের দেশ, আমাদের রাজধানী শহর এসবের একদমই বাইরে।

এখানে বায়ুদূষণ শব্দদূষণ যানজট জলযট মানুষজটসহ বিচিত্র দুর্ভোগ। বিড়ম্বনা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বলতে কোনো শব্দ নেই। বিশেষ করে পোস্টারে গোটা রাজধানী ঢাকা পড়েছে। আর কিছু দেখার উপায় নেই। রাস্তায় নামলে পোস্টারে নোংরা চারপাশটাকেই দেখতে হয় শুধু। অফিস আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেওয়াল, প্রাচীন স্থাপনা, পুরাকীর্তি বিদ্যুতের খাম্বা সব কিছুর গায়ে পোস্টার। তবে আশা করা হয়েছিল ঢাকার উড়ালসেতু, মেট্রোরেল বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারগুলো এই আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাবে।

কিন্তু চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী। সিটি করপোরেশন একদিকে উড়াল সেতুর পিলারে রং করছে ছবি আঁকছে, অন্যদিকে অন্য কোথাও প্রতিযোগিতা করে মারা হচ্ছে পোস্টার। পিলারগুলো অনেক বেশি দৃশ্যমান হওয়ায় দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রচারপ্রিয় নষ্ট মানুষ হামলে পড়েছে। সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হিসেবে তেজগাঁও এবং ফার্মগেট এলাকার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এখানে হলিক্রস কলেজ ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অবস্থান। আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি।

ফলে কোচিং ব্যবসায়ীরা পোস্টার সাঁটানোর জন্য এলাকাটিকে লুফে নিয়েছে। মাত্র কদিন আগে কাজ শেষ হওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারগুলোকে এখন আর চেনা যাচ্ছে না। প্রথম দিকে অল্প করে পোস্টার লাগানো হয়েছে। বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে কোনো বাধা আসে কিনা। আসেনি। আর কে রুখে! বর্তমানে পোস্টারে বিজ্ঞাপনে লিফলেটে গোটা এলাকাটাই নোংরা হয়ে গেছে। কিন্তু কেউ যেন দেখার নেই। কেউ নেই পিলারগুলো বাঁচানোর। আছে? 
সূচকেও বসবাস অযোগ্য ॥ আন্তর্জাতিক সূচকেও বসবাস অযোগ্য ঢাকা। বৃহস্পতিবার ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রকাশিত দ্য গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স-২০২৪ অনুযায়ী, পৃথিবীর ১৭৩টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৬৮তম। গত বছর ছিল ১৬৬তম স্থানে। সেখান থেকে অবস্থান দুই ধাপ পেছাল। বাসযোগ্য কতটা সে বিবেচনায় করা তালিকার একেবারে শেষের দিক থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে বাংলাদেশের রাজধানী। ভাবা যায়? স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো এবং পরিবেশসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তালিকাটি করা হয়েছে।

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা রয়েছে এ তালিকায় প্রথম স্থানে। ওপরের দিকে আরও আছে কোপেনহেগেন (ডেনমার্ক), জুরিখ (সুইজারল্যান্ড), মেলবোর্ন (অস্ট্রেলিয়া) এবং ক্যালগেরি (কানাডা)। শীর্ষ দশের মধ্যে এশিয়ার শহর হিসেবে আছে জাপানের ওসাকা। ওসাকার পয়েন্ট ৯৬। ঢাকার পয়েন্ট ৪৩। বায়ুদূষণেও বিশ্বের ১১৯টি শহরের মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ছিল ১৫তম। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? কবে আমরা সচেতন হবো? কবে ঢাকা সত্যিকার বসবাসযোগ্য শহর হবে? কে দেবে উত্তর!

×