ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব কাঠের বাড়ি যাচ্ছে ইউরোপে

বাবুল সরদার, বাগেরহাট 

প্রকাশিত: ২১:০২, ২৭ জুন ২০২৪

নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব কাঠের বাড়ি যাচ্ছে ইউরোপে

কাঠের বাড়ি

বাগেরহাটের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশি কাঠের বাড়ি। এই বাড়ির কাঠামো, দেয়াল, দরজা-জানালা এমনকি ছাদও কাঠের তৈরি। এতে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন বাজার ও কর্মসংস্থান, আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে এই উদ্যোগ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ন্যাচারাল ফাইবার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ। প্রথমবারের মত নিজ দেশের পণ্য ইউরোপের বাজারে রপ্তানিতে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে কর্মসংস্থান হওয়া শ্রমিকরা খুব খুশি।

পরিবেশের ক্ষতি করে না এমন পণ্য ব্যবহার করে ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম থেকে চলতি বছরের প্রথম দিকে ১২০টি বসতবাড়ি তৈরির অর্ডার পান বাগেরহাট বিসিক শিল্পনগরীর উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ । এরপর থেকে পরিবেশ বান্ধব বসতবাড়ির তৈরির উদ্যোগ নেয় তার প্রতিষ্ঠান ন্যাচারাল ফাইবার।ব্যবসায়ী মোস্তাফিজ আহমেদ বলেন, বেলজিয়ামের একটি ইকো পার্কের জন্য বায়াররা অর্ডার দিয়েছেন। পরিবেশ বান্ধব কাঠের তৈরী তাদের ১২০ টি এমনবসত ঘর প্রয়োজন। যা আগামী দুই বছরের মধ্যে এই ঘরগুলো বেলজিয়ামে পাঠানোর জন্য চুক্তি হয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের চুক্তি হয়েছে, দেশি মেহগনি কাঠ দিয়ে এই ঘরগুলো তৈরি করতে হবে। এছাড়া এসব বাড়ির কাচামাল বায়োগ্রেডিবল বা পরিবেশে মিশে যায় এমন হতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন পণ্য চলবে না। আশেপাশের এলাকা থেকে সংগ্রহ করা কাঠ দিয়ে এসব বসতবাড়ি তৈরি করা হচ্ছে।  

সরেজমিনে দেখা যায়, বাগেরহাটের সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কররীতে নিজস্ব কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে কাঠের এসব বসতবাড়ি। শ্রমিকদের মধ্যে কেউ তৈরি করছেন বসতঘরের দরজা জানালা, কেউ ফ্রেম আবার কেউ তৈরি করছেন দেয়াল। এমনকি কাঠ জোড়ানোর জন্য লোহার পরিবর্তে ‘কাঠের তৈরী খিল’ ব্যবহার করা হচ্ছে।  সবশেষে শ্রমিকদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় রং ও পালিশের মাধ্যমে শেষ করা হচ্ছে নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব কাঠের বসতবাড়িগুলো। প্রথমে কাঠ কেটে ও সাইজ করে পুরো বাড়িটি তৈরি করেন শ্রমিকরা। এই ঘরটি ১১ মিটার লম্বা এবং চাওড়া সোয়া ৪ মিটার। সম্পুর্ন কাঠের তৈরি।এরপর বিভিন্ন অংশকে ছোট আকারে খন্ড খন্ড করা হয়। এর ফলে পুরো বাড়িটিকে স্বল্প স্থানে পরিবহন করা সহজ। পরবর্তীতে এই খন্ডাংশগুলো জুড়ে দিলে সহজেই যেকোন জায়গায় স্থাপন করা যায় এই বাড়িগুলো। 

কাঠমিস্ত্রী মোজাহিদ বলেন, আমাদের প্রথমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারপরে ডিজাইন দেখে সম্পুর্ন একটি বসতঘর তৈরী করেছি। এরপর কোম্পানী ও বিদেশী লোকজন দেখে পছন্দ করছেন। এখন আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে প্রতিটি বসতঘর তৈরী করতে এক সপ্তাহ সময় লাগে। আমাদের বসত তৈরী করতে প্রায় দুইশো শ্রমিক কাজ করছে। 

কারখানার শ্রমিক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা আগে কখনও এই ঘর তৈরী করেনি। এখন দেখছি খুবই সুন্দর হয়েছে ঘরগুলো । সম্পুর্ন কাঠ দিয়ে এই ভাবে ঘর তৈরী করা যায় কখনও ভাবতেও পারেনি। সাইফুল নামের অপর এক শ্রমিক বলেন, আমাদের হাতে তৈরী কাঠের ঘর বিদেশে যাচ্ছে, এটা আমাদের জন্য গর্বে। আমরা এই ঘর তৈরী করতে পেরে আনন্দিত। 

বাগেরহাট ন্যাচারাল ফাইবার এর কনসালটেন্ট মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা শাহিন বলেন, সম্পূর্ন লোকাল কাঠ মেহগনি দিয়ে তৈরী বসতঘর যদি মোংলা দিয়ে রপ্তানি করা হতো তাহলে সময় ও অর্থ সাশ্রায় হতো। আমাদের পন্য চট্রগ্রাম বন্দর থেকে পাঠানো লাগে। সরকারের কাছে আমাদের দাবী যাতে মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারি। 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের বাগেরহাটের শিল্পনগরী কর্মকর্তা ইউনুস আর রাফি বলেন, এ ধরনের পন্য বিদেশে গেলে আমাদের দেশের সুনাম বাড়বে। দেশীয় পন্যের বিদেশের বাজারে রপ্তানী করতে ইচ্ছুক উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।”

এর আগে কারখানাটিতে তৈরি কাঠের বিভিন্ন পণ্য বেশ সাড়া ফেলেছিলো ইউরোপের বাজারে। সেসময় প্রতিষ্ঠানটিতে তৈরি হত কাঠের সাইকেল, সানবেড, হোটেল বেড, কুকুর-বিড়ালের খেলনাসহ পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন পণ্য। তবে বর্তমানে শুধু কাঠের বাড়ি তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। 

 

শহিদ

×