ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১

প্রথম পর্যায়ে গেল ২০০ কেজি

হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানি হলো জার্মানিতে

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ২৬ জুন ২০২৪

হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানি হলো জার্মানিতে

রংপুরের বিখ্যাত জিআই পণ্য হাঁড়িভাঙা আম ঝুলছে গাছে

উত্তরবঙ্গের রংপুর অঞ্চলের বিখ্যাত জিআই পণ্য হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানির খাতায় নাম লিখেছে। বুধবার রংপুর কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে কৃষি মন্ত্রীর সহযোগিতায় ২০০ কেজি আম জার্মানিতে রপ্তানি করা হয়েছে। জার্মানি আরও আম নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জের মো. খলিলুর রহমানের বাগান থেকে ওই আম জার্মানিতে সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি  অচিরে তা বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর  কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল আবেদীন জানান,  ২১ জুন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে জিআই পণ্য হাঁড়িভাঙা আমের মেলা ও প্রদর্শনী হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ। সেখানে তিনি হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

মূলত কৃষি মন্ত্রীর আগ্রহে ঢাকার গ্রিন গ্লোবাল অ্যাগ্রো লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার কাওসার আহমেদ স্যা¤পল হিসেবে ২০০ কেজি হাঁড়িভাঙা আম জার্মানিতে পাঠিয়েছেন। গ্রিন গ্লোবাল অ্যাগ্রো লিমিটেড নিয়মিত বিভিন্ন জাতের আম রপ্তানি করে আসছে। বর্তমানে হাঁড়িভাঙা আম নেপাল ও থাইল্যান্ডে রপ্তানির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। 
কৃষি অফিস সূত্রমতে জিআই পণ্য স্বীকৃতি পাওয়ার পূর্বেই গত পাঁচ বছরের মধ্যে জনপ্রিয় হাঁড়িভাঙা আম সরকারের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন দেশে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণে হাঁড়িভাঙা আম দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও সুমান ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন রংপুরের আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।  
রংপুরে প্রতিবছর জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে বাজারে পাওয়া যায় স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় আঁশহীন সুমিষ্ট হাঁড়িভাঙা আম। শুরুর দিকে দাম কিছুটা চড়া হলেও হাঁড়িভাঙার স্বাদ নিতে হাট-বাজারে কমতি নেই ক্রেতাদের। এই আম ঘিরে চাষি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমানে আকারভেদে প্রতি মণ হাঁড়িভাঙা আম ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বছর প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙার ফলন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে দেড় থেকে দুইশ’ কোটি টাকার ওপরে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

বড় সাইজের এক মণ (তিনটিতে এক কেজি) আম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। মাঝারি সাইজের আম ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। আর ছোট সাইজের এক মণ আম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা।হাঁড়িভাঙা আমের বৈশিষ্ট্য হলো এটি আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু। এ আমের আঁটিও খুব ছোট। ছাল পাতলা। প্রতিটি আমের ওজন হয় ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম।

এদিকে বিষমুক্ত ও অতি সুমিষ্ট আঁশহীন হাঁড়িভাঙা আমের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। কয়েক বছর ধরে ফলন ভালো হওয়ায় বেড়ে চলেছে আম উৎপাদনের পরিধিও। রংপুর সদর, মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার বিস্তৃত এলাকার ফসলি জমি, বাগানসহ উঁচু-নিচু ও পরিত্যক্ত জমিতে চাষ হচ্ছে এই আম।
কৃষি বিভাগ জানায় রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি অফিস প্রকল্প নিয়েছে। পাঁচ একর আয়তনের বাগান মালিককে উৎকৃষ্ট আম উৎপাদনে প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি অফিস থেকে আম বাগানে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।
এদিকে রংপুর অঞ্চলে হাঁড়িভাঙা আমের ফলন বেশি হলেও ফজলি, সাদা ল্যাংড়া, কালা ল্যাংড়া, মিশ্রিভোগ, গোপালভোগ, আম্রপালিসহ আরও নানা প্রজাতির আম উৎপাদন হয়ে আসছে। এসব আমের ভিড়ে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা হাঁড়িভাঙার। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি হাঁড়িভাঙা আম রংপুরের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।

×