ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

গ্যাস বাবুর ৩ মোবাইল উদ্ধারে ঝিনাইদহ যাচ্ছে ডিবির টিম

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ২৬ জুন ২০২৪

গ্যাস বাবুর ৩ মোবাইল উদ্ধারে ঝিনাইদহ যাচ্ছে ডিবির টিম

আনোয়ারুল আজিম আনার

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকা-ের ঘটনায় পুকুরে ফেলে দেওয়া তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারে দু-একদিনের মধ্যে ঝিনাইদহে যাবে ডিবির টিম।   ডিবির টিমকে মোবাইল ফোন উদ্ধারের সহযোগিতা  করতে গ্যাস বাবুকে আদালতের নির্দেশে ঝিনাইদহ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঝিনাইদহ কারাগারে পাঠানো হয়।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামি শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা তিনটি মোবাইল ফোন পুকুরে ফেলে দেন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু। সেই মোবাইল ফোনগুলো উদ্ধারে ঝিনাইদহে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তদন্ত টিম। পুকুর থেকে মোবাইল উদ্ধার অভিযানে একজন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকবেন। 
সঙ্গে থাকবেন গ্যাস বাবুও। পানি থেকে আলামত উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ও জেলেদের কাজে লাগানো হবে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
ডিবি প্রধান জানান, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

জবানবন্দিতে মোবাইলগুলো কোথায় কোথায় ফেলেছেন সেগুলো তিনি বলেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আদালতের কাছে আবেদন করা হয়, বাবুকে সঙ্গে নিয়ে আলামত উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। গ্যাস বাবু আদালতে বলেছেন, তিনি একজন নেতার নির্দেশে আশপাশের কোনো এক নালা বা পুকুরে ফেলে দিয়েছেন মোবাইল। কোন নালা বা পুকুরে ফেলেছেন, তা তিনি আদালতে জানিয়েছেন। গ্যাস বাবুকে সঙ্গে নিয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আলামত উদ্ধারের চেষ্টা চালাবেন। 

আলামতগুলো কেউ যাতে সরিয়ে ফেলতে না পারে- সেজন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে হারুন বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। অবশ্যই সেটা নজরদারিতে থাকবে। ডিবি প্রধান বলেন, কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি তখন বলেছিলেন, মোবাইলগুলো হারিয়ে গেছে, তিনি জিডি করেছেন। কিন্তু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, একজন নেতার নির্দেশে তিনি সেগুলো পুকুরে ফেলে দিয়েছেন।

এই মোবাইলগুলো দিয়েই আনার হত্যার মূল ঘাতক আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া গ্যাস বাবুর সঙ্গে অসংখ্যবার কথা বলেছেন। এ ছাড়া অসংখ্য মেসেজ তারা তথ্য আদান-প্রদান করেছেন। মোবাইলগুলোতে ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত আছে বলে মনে করছি। না হলে গ্যাস বাবুর মোবাইলগুলো পানিতে ফেলে দেবেন কেন? মোবাইলগুলো পেলে মামলার তদন্তে অনেক সহায়তা হবে। সেজন্য মোবাইল উদ্ধার করা অনেক জরুরি।
এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন কবে নাগাদ কলকাতায় যাবেন? এই প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, কলকাতা পুলিশের সঙ্গে এমপি আনারের পরিবারের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। ডরিন কিছুটা অসুস্থ, এজন্য হয়তো দেরি হচ্ছে। তারা শীঘ্র কলকাতায় যাবেন ডিএনএ স্যাম্পল দেওয়ার জন্য। ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, মামলা যেহেতু এখনো চলমান। এই মুহূর্তে কে দোষী আর কে নির্দোষ তা বলতে পারছি না। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না।

আর কোনো দোষী ব্যক্তিকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। ভারতের কাছে শাহীন মোস্ট ওয়ান্টেড। শাহীনকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত চেষ্টা করবে।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার ম-লপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন আনোয়ারুল আজিম। বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়রুল আজিম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এই সংসদ সদস্যের।

২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে বা অন্য কোথাও তার মরদেহ মেলেনি।

×