ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

জলাবদ্ধতায় দুই শতাধিক একর জমি অনাবাদি

খাল দখলে আওয়ামী লীগ বিএনপি এককাট্টা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২৫ জুন ২০২৪

খাল দখলে আওয়ামী লীগ বিএনপি এককাট্টা

গন্ধবপুর খাল দখল করে প্রভাবশালীদের মার্কেট

রামগঞ্জে পানিয়ালা থেকে গন্ধবপুর সরকারি খালের পানিয়ালা বাজার অংশ দখল করে স্থায়ীভাবে বহুতল দুইটি মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজান এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক নেতা সহিদ উল্যা মিলে ২০১৮ সালে এ মার্কেট নির্মাণ করেন। মার্কেট নির্মাণে খাল ভরাট ও পানি চলাচলের সংযোগ ব্রিজ বন্ধ করে দেওয়ায় ১০ কিলোমিটার খালটি বর্তমানে মরা খালে পরিণত হয়েছে।

এতে ৭ গ্রামের সহ¯্রাধিক কৃষক বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ও শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে চাষাবাদে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ বছর ২ শতাধিক একর জমিতে  আমন ধান চাষ করতে পারেনি কৃষকরা। এভাবে প্রতি বছর অনাবাদি হয়ে পড়ছে শত শত একর জমি। এ ছাড়া পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টিতে পানিয়ালা বাজারে পানি জমে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।  
পানিয়ালা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি শেখ সুমন, ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন দেলু, কবির মোল্লাসহ ব্যবসায়ীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা  মোহাম্মদ শাহাজান ও বিএনপির নেতা শহিদ উল্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা দুইজন মিলেমিশে খাল লিজ নিয়েছেন এ কথা প্রচার করে ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সরকারি খালের উৎসস্থল বাজার অংশের প্রায় ২০ শতাংশ ভরাট করে মেঘনা সুপার শপিং কমপ্লেক্স ও শহিদ মার্কেট নির্মাণ করেন। এতে বাজারের পানি নিষ্কাশন হয় না।

একটু বৃষ্টিতে বাজারে পানি জমে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তারা ক্ষমতাশালী বিধায় কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। তারা আরও জানান, আমাদের জানামতে, সরকারি খাল লিজ হয় না, তা ছাড়া লিজকৃত জায়গায় বহুতল স্থায়ী পাকা ভবন করাও অবৈধ। এ ব্যাপারে  সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিলে কারও পক্ষে কোনোকিছু করা সম্ভব নয়। পানিয়ালা থেকে গন্ধবপুর খাল পাড়ের পানিয়ালা, ডোন নদী, আশার কোটা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক বাচ্ছু মিয়া (৬৫), এনামুল হক (৬০), সোহাগ (৪৫), আবুল কালাম (৫৫), আবুল কাশেম (৫৭), মিজান (৪০) বলেন, এক সময় জমিতে তিন ফসল হতো। খালের মুখ বন্ধ করে দোকানপাট করায়, খালে পানি থাকে না ও বর্ষাকালে জলাবদ্ধ থাকে। তাই এখন এক ফসল করতেও খুব কষ্ট হয়। এজন্য বেশিরভাগ জমি পতিত থাকে। কৃষিকাজ করে সংসার চালানো যায় না।  খালে পানি প্রবাহ ঠিক থাকলে চাষাবাদ করা সম্ভব হবে। নতুবা আস্তে আস্তে সবাইকে কৃষিকাজ ছেড়ে দিতে হবে।       
মেঘনা শপিং কমপ্লেক্সের মালিক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজান জানান, খাল ছিল সত্য, কিন্তু অনেক বছর আগে খালশ্রেণি পরিবর্তন করে, আমি লিজ নিয়েছি। সকল নথিপত্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আছে। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মার্কেট করেছি। আমি দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে অনৈতিকভাবে কোনোকিছু করতে পারি না।  উপজেলা কৃষি অফিসার সৈয়দ রায়হানুল হায়দার জানান, খালটি দখল ও ভরাটের কারণে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এটা সত্য।

এজন্য পানিয়ালা, নোয়াগাঁও, ডোননদীসহ ওই অঞ্চলের কৃষকের জলাবদ্ধতায় আমন ধানসহ চাষাবাদ করতে কষ্ট হয়। গত মৌসুমে কয়েকজন কৃষককে প্রণোদনা দিয়ে আমন ধান চাষ করানো হয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। 
খালগুলো সংস্কার করা জরুরি। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবব্রত দাস জানান, সরকারি খাল দখল বা ভরাট করার কোনো বিধান নেই। এরপর কীভাবে খাল ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। তা আমার জানা নেই, বিষয়টি জেনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

×