ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

ভাঙন ঠেকানো চেষ্টায় অপচয়

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা

প্রকাশিত: ২২:২১, ২৪ জুন ২০২৪

ভাঙন ঠেকানো চেষ্টায় অপচয়

পটুয়াখালীর গলাচিপায় রাবনাবাদ নদীর ভাঙন ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা ও রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তার ভাঙন (ডানে)

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়েক মাস ধরে জিও ব্যাগ (বালুর বস্তা) ফেলে রাবনাবাদ নদীর ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই ভাঙন রোধ হচ্ছে না। এতে করে একদিকে জিও ব্যাগের পেছনে অর্থ অপব্যয় বাড়ছে। অন্যদিকে, নদীভাঙনের ব্যাপকতা ক্রমে বাড়ছে। আঞ্চলিক মহাসড়ক, ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ আশপাশের স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।

বিশেষ করে আঞ্চলিক সড়কটি নদীগর্ভে ধসে পড়লে গলাচিপা উপজেলা সদরের সঙ্গে পাঁচটি ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এ ছাড়া আরও তিনটি উপজেলার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যাহত হবে। ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে ডাকুয়া ইউনিয়নের আটখালী, ডাকুয়া ও হোগলবুনিয়া গ্রাম। উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের তেঁতুলতলা গ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ রাবনাবাদ নদীর ভাঙনের সঙ্গে বাঁধের ওপর কার্পেটিং সড়কও ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।  
পাউবো পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৭৬-১৯৭৭ অর্থবছরে গলাচিপার রাবনাবাদ, কলাগাছিয়া ও লোহালিয়া নদীর  তীরবর্তী ৫৫/১ নম্বর পোল্ডারের আওতায় ৪৬ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস থেকে মানুষের জানমাল রক্ষায় এ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এলজিইডি সূত্র জানায়, পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৯৯৫-১৯৯৬ অর্থবছরে এ বেড়িবাঁধের ওপর ২১ কিলোমিটার বিটুমিন কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ করে।

সড়কটি গলাচিপা উপজেলা সদরের সঙ্গে ডাকুয়া, কলাগাছিয়া,  চিকনিকান্দি,  গজালিয়া ও বকুলবাড়িয়া- এই পাঁচটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ সহজ করে। এ ছাড়া সড়কটির মাধ্যমে গলাচিপা উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী জেলা সদর, দশমিনা ও বাউফল উপজেলার সহজ যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি বর্তমানে উপজেলার অন্যতম ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়েছে।  
পাউবোর পটুয়াখালীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিরাজ গাজী জানান, জোয়ারের সময় রাবনাবাদ নদীর প্রবল স্রোতের আঘাতে তেঁতুলতলা এলাকার বাঁধের ১০০ মিটার অংশ ভাঙনের কবলে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল ও পূর্ণিমার জোয়ারে বাঁধের ১০ মিটার অংশ ধসে পড়েছে। সঙ্গে সড়কও ভেঙে পড়েছে। ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ বা বালুর বস্তা ফেলার কার্যক্রম চলছে। ভাঙন সংলগ্ন এলাকার ডাকুয়া ইউনিয়নের আটখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক দীপক নারয়ণ ভূঁইয়া জানান, জোয়ারের সময় রাবনাবাদ নদীর প্রবল স্রোত সরাসরি বাঁধে আঘাত করছে। বিশেষ করে অমাবস্যা-পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের প্রবল চাপে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে, যা এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না।

ডাকুয়া এলাকার সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা গাজী গোলাম মোস্তফা জানান, যেভাবে বাঁধের সঙ্গে সড়ক নদীতে বিলীন হচ্ছে, তাতে অচিরেই সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। 
ডাকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিশ^জিত রায় জানান, নদী ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদের কবরস্থান, ইউনিয়ন পরিষদ, দুটি স্কুল, এলাকার দুইশ’ বছরের পুরনো জমিজারবাড়ি, মসজিদ, মন্দির, তেঁতুলতলা বাজারের সমস্ত দোকানপাট, স্থাপনা ও বাড়িঘর। যান চলাচল বন্ধ হলে ভোগান্তিতে পড়বে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের কমপক্ষে দেড় লাখ মানুষ। নদী শাসন ও খনন করে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে এভাবে ভাঙন থামানো যাবে না।

গলাচিপা উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ভাঙন ও সড়কে ফাটলের স্থান পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন ঠেকাতে প্রথমে বাঁধ মেরামতসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। বাঁধের ওপর কার্পেটিং সড়ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বাঁধের কাজ শেষ হলেই সড়ক নির্মাণ শুরু করা যাবে।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন জানান, ভাঙন রোধে প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে নদী সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ৭২ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ১২ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তবে তাতে কাজ হচ্ছে না। আসলে পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের প্রবল চাপের কারণে ভাঙন বেড়েছে। তারপরও পাউবো তেঁতুলতলার স্থায়ী ভাঙন রোধে দেওয়াল নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আশা করা যায়, এতে ভাঙন ঠেকানো যাবে। 

ভাঙনের দুশ্চিন্তায় তিস্তাপাড়ের মানুষ
স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী থেকে জানান, তিস্তা নদীর বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। বিশেষ করে তিস্তা নদীর রংপুরের কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন তীব্র হচ্ছে। নদীপাড়ের মানুষজন জানায়, তিস্তা আর আগের জায়গায় নেই। গত বছরের উজানের ঢলের সঙ্গে পলিমাটি এসে প্রায় এক ফিট উঁচু হয়ে গেছে তিস্তার তলদেশ।

যার ফলে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই এই পানি মুহূর্ত দক্ষিণ তীরের নিম্ন অঞ্চলে প্রবেশ করে আর শুরু হয় ভাঙন। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড নিষ্ক্রিয় হওয়ায় বালুর বস্তা ফেলে ও বাঁশের খুঁটি পুঁতে নিজ খরচে পরিবারগুলো বসত ঘর রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যার যা সামর্থ্য আছে তাই দিয়ে চেষ্টা করছেন তারা। আবার অনেকে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন বাড়িঘর।
ভাঙন কবলিতরা অভিযোগ করেন, বর্ষা মৌসুমে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, সেইসঙ্গে এখনো তাদের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। 
পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, পানি কমলেও ভাঙনের আশঙ্কা আছে। ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এক মাস আগে এক হাজার বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। ভাঙন রোধে চেষ্টা চলানো হচ্ছে।

×