ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

অন্যত্র ঝরল ১১ প্রাণ

সেতু ভেঙে গাড়ি নদীতে ৯ কনেযাত্রী নিহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:১৫, ২৩ জুন ২০২৪

সেতু ভেঙে গাড়ি নদীতে ৯ কনেযাত্রী নিহত

বরগুনায় বেইলি ব্রিজ ভেঙে মাইক্রো ও অটোরিক্সা নদীতে পড়ে যায়

বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার চাওড়া নদীর ওপর নির্মিত হলদিয়া হাট সেতু ভেঙে বিয়ের ৯ কনেযাত্রী নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন রয়েছে। অন্যরা সবাই পরস্পর আত্মীয়স্বজন। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ ভারি হয়ে উঠেছে। শনিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে উপজেলার এ দুর্ঘটনা ঘটে। 
এ ছাড়া অন্য আট জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় শনিবার আরও ১১ জন প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাটে বাসচাপায় বাবা-ছেলে, মুন্সীগঞ্জ ও ফরিদপুরে দুজন করে এবং টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, নাটোর, কুষ্টিয়া ও জামালপুরে একজন করে প্রাণ হারিয়েছেন। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা দায়সারা সেতু নির্মাণ করেছে। ফলে নির্মাণের ৫ বছরের মাথায় সেতুর মাঝখানের বিম ভেঙে যায়। গত ১০ বছর ধরে এ ভাঙা ও নড়বড়ে সেতুর ওপর দিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন ও চাওড়াসহ উপজেলার অন্তত অর্ধ লক্ষ মানুষ চলাচল করত। সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার শাস্তি দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছে।  
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমির সহকারী শিক্ষক উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহ মনিরের মেয়ে হুমায়রা আক্তারের সঙ্গে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমতলী পৌর শহরের খোন্তাকাটা এলাকার বাসিন্দা সেলিম মাহমুদের ছেলে ডা. সোহাগের বিয়ে হয়। গত শুক্রবার ওই কনেকে বরের বাড়ি তুলে আনেন। শনিবার মেয়ের পক্ষের লোকজন বরের বাড়িতে মাইক্রো এবং অটোরিক্সায় যাচ্ছিল। পথিমধ্যে হলদিয়া সেতু পার হওয়ার সময় সেতুর মাঝের অংশ ভেঙে যায়। এতে মাইক্রোবাস ও অটোরিক্সাটি নদীতে পড়ে যায়। অটোরিক্সার যাত্রীরা সকলে সাঁতরে কিনারে উঠতে পারলেও মাইক্রোবাসের যাত্রীরা নদীতে তলিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা ওই মাইক্রোতে থাকা লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়।
খবর পেয়ে আমতলী ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। ততক্ষণে মাইক্রোবাসে থাকা কনে পক্ষের ৯ যাত্রী প্রাণ হারায়। নিহতরা হলেন রুবিয়া (৪৫), রাইতি (২২), ফাতেমা (৫৫), জাকিয়া (৩৫), রুকাইয়াত ইসলাম (৪), তাহিয়া মেহজাবিন আজাদ (৭), তাসফিয়া (১৪), ঋধি (৪) ও রুবি বেগম (৩৫)। এদের মধ্যে রুকাইয়াত ইসলাম ও জাকিয়ার বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামে। অপর ৭ জনের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কোকরার চর গ্রামে। এরা কনে হুমায়রার মামা বাড়ির আত্মীয়স্বজন। 
এদিকে এ ঘটনার পরপর সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার বিচার দাবিতে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। খবর পেয়ে বরগুনা-১ আসনের সাংসদ গোলাম সরোয়ার টুকু, জেলা প্রশাসক মোহ. রফিকুল ইসলাম,  উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ গোলাম সরোয়ার ফোরকান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তারেক হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 
মাইক্রোবাসে থাকা সোহেল মিয়া বলেন, মাইক্রোবাসে কনে পক্ষের ১৬ জন যাত্রী বরের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে হলদিয়া হাট সেতুর ওপর ওঠামাত্রই সেতু মাঝখান দিয়ে ভেঙে মাইক্রোবাসটি নদীতে পড়ে যায়। আমিসহ ৩ জন সাঁতরে কিনারে উঠতে পেরেছি। পরে স্থানীয়, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। 
একই পরিবারের তিন নিহতের স্বজন আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার কিছুই রইলো না। আমার দুই কন্যা ও স্ত্রী মারা গেছে। সব হারিয়ে আমি এখন অসহায়।’
আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু জানান, সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস নদীতে ডুবে বিয়ের কনে পক্ষের ৯ জন মানুষ মারা গেছে। নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। 
মুন্সীগঞ্জ ॥ সিরাজদিখান উপজেলার খারশুর তালতলার ঢাকা-নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে শনিবার সকাল ১০টার দিকে বাসের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিক্সার সংঘর্ষে দুই জন নিহত ও চার জন আহত হয়েছেন। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দোহার থেকে ঢাকাগামী রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিক্সা এবং ঢাকা থেকে নবাবগঞ্জগামী নবকলি পরিবহনের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

এতে অটোরিক্সাটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং অটোরিক্সাযাত্রী শেখ মো. রহমান (৫৮) ও শাহীন হোসেন (২৬) গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় লোকজন নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া অটোরিক্সাটির চালক এবং অপর তিন যাত্রীকে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 
এর আগে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের বেজগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে ঢাকাগামী প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কদ্বীপের রেলিং, বাস ও মাইক্রোর সঙ্গে ধাক্কায় চার জন আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 
মির্জাপুর, টাঙ্গাইল ॥ শনিবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গোড়াইতে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ এলাকায় বাসের ধাক্কায় রুবেল মোল্লা (৩৬) নামে এক লেগুনাচালক নিহত হয়েছেন। নিহত রুবেল মোল্লার  বাড়ি উপজেলার আমড়াইল তেলিপাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম আবুল মোল্লা।
ফরিদপুর ॥ ফরিদপুর সদর ও ভাঙায় পৃথক দৃটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুর ও শুক্রবার গভীর রাতে তারা মারা যায়। 
এর মধ্যে শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার শিবরামপুরের জিপি টাওয়ার এলাকায়  মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পর অজ্ঞাত গাড়ির চাপায় মোটরসাইকেলচালক মো. রাসেল (৪০) এক নিহত হয়েছেন। তিনি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দী উপজেলার বাসিন্দা। তিনি একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন।
এ ছাড়া ভাঙায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রানা মাতুব্বরকে (১৮) শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন। নিহত রানা মাতুব্বর ভাঙা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাইশাখালী মহল্লার আজম আলী মাতুব্বরের ছেলে।
মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ ॥ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মুকসুদপুর উপজেলার ভাঙাপোল এলাকায় দ্রুতগামী ইমাদ পরিবহনের চাপায় রিপন শেখ (৪২) নামে এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। রিপন শেখ একই উপজেলার ঢাকপাড় গ্রামের আক্কাছ শেখের ছেলে।
বাগেরহাট ॥ শনিবার সকালে বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের ফকিরহাট উপজেলার পিলজংগ এলাকায় বাসচাপায় বাবা ও ছেলে নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, পটুয়াখালী জেলার গরিয়া এলাকার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে খলিলুর রহমান রাঢ়ী (৩৫) ও তার এক বছরের ছেলে। খলিলুর রহমানের স্ত্রী মিনু বেগমকে (৩০) গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে খুমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। 
ফকিরহাট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্টেশন লিডার মনিরুল ইসলাম বলেন, সকালে পটুয়াখালী থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে যশোরে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশে যাচ্ছিলেন খলিলুর রহমান রাঢ়ী।
লালপুর, নাটোর ॥ শনিবার দুপুর ১টার দিকে উপজেলার লালপুর-ঈশ্বরদী সড়কের তিলকপুর নামকস্থানে সড়ক পার হওয়ার সময় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় রহেনা (৫৫) নামে এক নারী নিহত হন। তিনি তিলকপুর এলাকার আনসার আলীর স্ত্রী। 
নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া ॥ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ভেড়ামারা-দৌলতপুর মহাসড়কের ভাঙাপুল নামক স্থানে ড্রাম ট্রাক ও বাইসাইকেলের সংঘর্ষে আব্দুস সালাম (৫৫ ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। বাইসাইকেলচালক আব্দুস সালাম ভেড়ামারা উপজেলার মাওলাহাবাসপুর গ্রামের বাসিন্দা।
জামালপুর ॥ বকশীগঞ্জ উপজেলায় অটোভ্যানের চাকার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে হাজেরা বেগম (৬০) নামের এক নারী মারা গেছেন। শনিবার বিকেল ৩টার দিকে বাট্টাজোড় ইউনিয়নের চন্দ্রাবাজ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। হাজেরা বেগম বাট্টাজোড় পশ্চিমপাড়া তালুক বাড়ির মোয়াজ্জেম হোসেন জজ তালুকদারের স্ত্রী। শ্রীবরদী উপজেলা থেকে মেয়ের জামাইবাড়ি থেকে অটোভ্যানে চড়ে বকশীগঞ্জে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন হাজেরা বেগম।

×