ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

বন্যা শেষ না হতেই হাওরে নতুন আতঙ্ক আফাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, শাল্লা (সুনামগঞ্জ)

প্রকাশিত: ১৩:৫৪, ২২ জুন ২০২৪

বন্যা শেষ না হতেই হাওরে নতুন আতঙ্ক আফাল

নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার দুর্ভোগ এখনো কাটেনি।

দুশ্চিন্তায় দিশাহারা হাওর পাড়ের মানুষ। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করে জীবন যাপন করছে সাধারণ মানুষেরা। উজানের পানি এসে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার দুর্ভোগ এখনো কাটেনি। এর মধ্যেই আবার নতুন করে শুরু হয়েছে হাওরে আফাল আতঙ্ক। কাটছে নির্ঘুম রাত। বাড়ির চারিদিকে পানি থাকায় দুশ্চিন্তায় তাদের রাত-দিন একাকার। হাওরপাড়ের বাড়িগুলো টিকিয়ে রাখতে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে এলাকাবাসী। নতুন উপদ্রব ‘আফাল’। এই আফালই এখন হাওর এলাকার মানুষের আতঙ্কের নাম। 

তাই আতঙ্কের পাশাপাশি দুর্ভোগেও পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীর। রাক্ষুসে হাওরের উত্তাল এই ঢেউয়ের (আফাল) কবল থেকে রক্ষায় চলছে তাদের জীবনযুদ্ধ। নানা কৌশলে বসত ভিটা রক্ষায় কাজ করেও কোনো মতে আটকাতে পারছেন না বাড়ির ভাঙন। শাল্লা উপজেলার বড় বড় হাওরের পাড়ে বসবাসরত মানুষের চোখের সামনেই ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে তাদের যক্ষের ধন।

কিছুতেই রক্ষা করা যাচ্ছে না ঘরবাড়ি। তাদের শেষ ভরসাস্থল মাথাগুঁজার ঠাঁইটি এখন কেড়ে নিতে চায় আফাল। তাই নানা ভাবে আফালের কবল থেকে রক্ষা পেতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে তারা। কিন্তু সব চেষ্টাই যেন ব্যর্থ হওয়ার উপক্রম। 
ইতিমধ্যে আফালের(বড় ঢেউয়ের) আগ্রাসীর থাবায় বিলীনের পথে উপজেলার শতাধিক বাড়িঘর। হঠাৎ এমন দুর্ভোগে ভিটেমাটি হারানোর দুশ্চিন্তায় তারা নির্বাক। সরজমিনে ছায়ার হাওর, কালিয়াকোটা, ভান্ডারবিল, বরাম হাওর এলাকায় গেলে চোখে পড়ে মানুষের এমন দুর্দশার চিত্র। ওই এলাকার অধিকাংশ লোকজনই ঘরবাড়ি ফেলে কোনো জায়গায় যেতে চাচ্ছেন না। দু

র্ভোগগ্রস্ত উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের শৈলেন দাস  জানান, রাত দিন আফালের ভয়ে তারা তটস্থ থাকছেন। বন্যার পরে এখন  উত্তাল হাওরের ঢেউয়ে তাদের সব কেড়ে নিয়েছে। একই গ্রামের বিমল দাস জানান তাদের পরিবারে সদস্য ১১ জন। পরিবারের উর্পাজন কারী একজন। এখন কাজ নেই, টাকা নেই, ঘরে চালও নেই। তাই পেট ভরে খাবার নেই। এতদিন কোনরকম নিজের বসত বাড়িতে পানিবন্দি অবস্থায় টিকে ছিলেন। এখন আফালের জন্য বসতভিটাও আর রক্ষা করা যাবে না। এ নিয়ে রাত দিন তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।

আনন্দপুর গ্রামের গিয়ে দেখা গেল বাজারের পুর্ব পাশে ঘরের চারপাশে কচুরিপনা আর গাছের ডাল ও বাঁশের পালা (অগ্রভাগ) দিয়ে আফালের কবল থেকে রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বাড়ির লোকজন জানালেন বানের পানি শরীরে লাগলে চুলকায়। তাছাড়া রয়েছে সাপ ও জোঁকের ভয়। 

গেল কয়েক দিন থেকে আফাল শক্তিশালী হয়ে সবই কেড়ে নিতে চাইছে। তাই ঘরের ভিতরে থাকতে যেমন ভয় হচ্ছে। তেমনি বাড়ি ছেড়ে যেতেও মন চাচ্ছে না। কারণ বাড়ি ছেড়ে গেলে বাড়ি ঘরের চারপাশে কচুরিপানা দেয়া যাবে না। এমন সুযোগে আফাল আমাদের বাড়ি নিশ্চিহ্ন করে দিবে। তাই তারা বসতভিটার মায়ায় বাড়ি ছাড়ছেন না মনের টানে।

এদিকে যাত্রাপুর নতুন হাটিতেও গিয়ে দেখা যায় আফালের ভয়ে বাড়ি ঘরে বাঁশের আড়ি বেঁধে কচুরিপনা দিয়ে কোনো রকম রক্ষা করছে।

হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুবল চন্দ্র দাস বলেন, বর্ষার সময় হাওরবাসীর একটাই আতঙ্ক আফাল(বড় ঢেউ)। এই আফালের কারনে বাড়িঘরের ভাঙ্গন দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে হাওরপাড়ের এসব গ্রামগুলোর জন্য সরকারি ভাবে প্রতিরক্ষা দেয়ালের উদ্যোগ নিলে হয়তো শাল্লার হাওরপাড়ে বসবাসরত মানুষ কিছুটা উপকৃত হবে।  

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)  মো. আলউদ্দিন বলেন, এখনের সময়টাই হচ্ছে হাওরপাড়ের মানুষের বিপদজ্জনক। পানি বেড়ে যাওয়ার কারনে হাওরে বড় বড় ঢেউ সৃষ্টি হয়। আর এই ঢেউয়ের কারণে বাড়িঘর বেধেও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এই বিষয়ে পিআইও অফিসের সাথে কথা বলা হবে। আগামী মৌসুমে ভাঙ্গন এলাকা চিহ্নিত করে প্রতিরক্ষা দেয়ালের ব্যবস্থা করা হবে।

এসআর

×