ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

বর্ষা নামুক...

এমএ রকিব

প্রকাশিত: ০১:১৮, ২১ জুন ২০২৪

বর্ষা নামুক...

বর্ষা নামুক...

ভ্যানচালক নিয়ামত হোসেনের শরীরে লেপটে আছে শার্ট। ঘামে জবজব। ঘাড়ের গামছা দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে রাস্তার পাশে একটি গাছের ছায়ায় এসে দাঁড়াল। একটু জিরিয়ে নেবে। অন্যদিন সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত ভ্যান চালালেও আজ প্রচ- গরমে দুপুর না গড়াতেই তিনি হাঁপিয়ে উঠেছেন। ক্লান্ত দেহ আর চলছে না। তিনি বলেন, ‘প্রচ- গরম পড়ছে, মনে হচ্ছে; সূর্য আজ মাথার ওপর নেমে এসেছে। তাপে গা পুড়ে যাচ্ছে। তৃষ্টা পাচ্ছে বার বার।

ভ্যান আর চালাতে পারছি না। গাছের নিচে একটু জিরিয়ে নেই’। ষড়ঋতুর আমাদের এই দেশে জলবায়ুতে পরিবর্তন স্পষ্ট। তবে ঋতু চক্রের পরিক্রমায় ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে তার আপন গতিতে। আমাদের দেশে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাস গ্রীষ্মকাল। রূপের পালাবদলে গ্রীষ্মকাল বাংলার বুকে কাঠফাটা রোদ্দুর আর অসহ্য গরম নিয়ে জানান দেয়। কখনো কখনো প্রকৃতি রুদ্ররূপ ধারণ করে। প্রকৃতি যতই তার অগ্নিমূর্তি ধারণ করুক না কেন বাস্তবে এর তপ্ত প্রকৃতি কোনো না কোনোভাবে সবাইকে মুগ্ধ করে।

গ্রীষ্মের খাঁ-খাঁ অবস্থার মধ্যেও প্রকৃতিজুড়ে যায় সবুজ পত্রপল্লবের দুলুনিতে। থাকে বিহঙ্গের শান্ত কুজন, বিস্তৃত খেতজুড়ে সোনালি ধানের ঢেউ আর রং-বেরঙের ফুল-ফলের মন মাতানো ঘ্রাণ। এ সময় বৃক্ষের নিচে ক্লান্ত পথিকের মনজুড়ানো দৃশ্যও খুব সাধারণ বিষয়। গ্রীষ্মের মতো অপরিসীম নান্দনিকতা আর কোনো ঋতুতে খুঁজে পাওয়া যায় না। এ সময় প্রকৃতিতে থাকে কড়া রোদের মাতামাতি। চৈত্র ও বৈশাখের চেয়েও তীব্র দাবদাহ নিয়ে হাজির হয় জ্যৈষ্ঠ মাস।

এ সময় দিন বড় হয়, আর প্রকৃতিতে থাকে তাপপ্রবাহের তা-ব। সূর্যের প্রখর তাপে সমস্ত প্রকৃতি যেন ঝিমিয়ে পড়ে। তীব্র গরমে শরীর দিয়ে ঘাম ঝরে। খাল-বিল মাঠ-ঘাট শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। প্রখর তাপপ্রবাহ আর গরমে ঘরে-বাইরে মানুষের থাকে হাঁসফাঁস অবস্থা। জনজীবন এক রকম বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এবারের তাপপ্রবাহ যেন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মাথার ওপর গনগনে সূর্য আর অসহ্য গরমে ঘরে-বাইরে একদ- টিকে থাকাই মুশকিল।

কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকার বাসিন্দা বিলকিস বেগম বেলা ১২টার দিকে বাসা থেকে বের হন কিছু কেনাকাটা করতে। তিনি বলেন, ‘গরমটা আজ টের পাচ্ছি। দাবদাহ অনেক বেশি। রোদ যেন সরাসরি মাথায় এসে পড়ছে’।
 তীব্র এই গরমে অস্থির হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী-সাধারণ মানুষ। মাঝবয়সী রিক্সাচালক মিন্টু বলেন, ‘প্রচুর গরম পড়ছে। গরমের কারণে আজ দেরিতে বের হইছি। কী আর করার, রিক্সা চালানো তো লাগবেই। গরমের কারণে আয়ও কমেছে। মানুষজন ঘর থেকে খুব প্রয়োজন না হলে বের হচ্ছে না’। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চুয়ামল্লিকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাদ উদ্দিন (৭৫) বলেন, ‘আমার লাইফে এমন গরম কোনো বছরেই পড়েনি। ফ্যানের নিচে বসে থেকেও যেন নাড়ি-ভুঁড়ি পর্যন্ত গরম হয়ে যাচ্ছে। শীতল একটু পরশের জন্য মাঝে মাঝে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল বের করে গায়ে চেপে রাখি। 
 এমএ রকিব, কুষ্টিয়া

×