ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

টাঙ্গাইলে যমুনা পাড়ের মানুষের করুণ আর্তি

নদী ভাঙন থেকে বাঁচতে চাই

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ২০ জুন ২০২৪

নদী ভাঙন থেকে বাঁচতে চাই

সদর উপজেলার চরপৌলিতে যমুনায় তীব্র ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়িসহ গাছপালা 

সদর উপজেলার চরপৌলিতে যমুনায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে ইতোমধ্যে ৩৫ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এমন ভাঙনে পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ। নদী ভাঙনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি স্থানীয়দের। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙনরোধে জরুরি বরাদ্দের জন্য ঢাকায় আবেদন করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলার নাগরপুর থেকে সদর উপজেলার চরপৌলি পর্যন্ত জিও ব্যাগ ফেলে যমুনার তীরে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, কালিহাতীর পাথরঘাট থেকে আলীপুর পর্যন্ত ব্লক ফেলে যমুনার তীরে বেড়িবাঁধ করা হলেও মাঝখানে ১৬২৫ মিটার বাঁধ না থাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। 
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী জানান, গত মঙ্গলবার আকস্মিক বাঁধের বাইরে ভাঙন শুরু হয়। এতে ঘরবাড়িসহ গাছপালা, আসবাবপত্র যমুনা নদীতে মুহূর্তেই বিলীন হয়। সহায়সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব নদীপাড়ের মানুষ। চরপৌলি গ্রামের আব্দুল কাদের জিলানি বলেন, তিন দশকে চারবার বাপ-দাদার ভিটা হারিয়েছি। গত মঙ্গলবার বিকেলে আকস্মিক ভাঙনে আমাদের ৬০ শতাংশ বাড়ি যমুনায় বিলীন হয়ে যায়।  রাক্ষুসে যমুনার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।

আবাসস্থল ছাড়া সন্তানদের কোথায় রাখব সেটা নিয়ে চিন্তায় আছি। আমরা ত্রাণ চাই না, নদী ভাঙন থেকে রক্ষা চাই। চরপৌলি গ্রামের লালবানু বেগম বলেন, যমুনার ভাঙনে বাড়িঘর সরাতে সরাতে জীবন শেষ হয়ে গেছে। মঙ্গলবার ভাঙনের পর দুইদিন যাবত আসবাবপত্র সরাচ্ছি। রান্নাও করতে পারিনি। ঠিকমতো খেতেও পারিনি। ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছোট ছোট নাতি-নাতনিরা কান্না করছে। সরকারের কাছে দাবি, আমরা ভাঙন থেকে বাঁচতে চাই। 
একই গ্রামের হুনুফা বেগম বলেন, চোখের সামনেই ঘরের টিন, চেয়ার, টেবিল ও গাছপালা যমুনায় চলে গেল। কিছুই রক্ষা করতে পারলাম না। আমরা ত্রাণ চাই না। আমরা বাঁধ চাই। নিজেদের ভিটায় থাকতে চাই। সামাজিক সেবা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বেলাল হোসেন বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাঙন কবলিত এলাকার ঘরবাড়ি উদ্ধারে সহযোগিতা করি। গত মঙ্গলবার চোখের পলকে কয়েকটি ঘর চলে গেলো, রক্ষা করতে পারিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ৩০ বছর যাবত কাকুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে যমুনার ভাঙন শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার চরপৌলি গ্রাম যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়েছে। গত মঙ্গলবারের ভাঙনে ৩৫ পরিবারের প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাকি বাঁধের কাজ শেষ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় জিও ব্যাগ ফেলে যমুনার তীরে বাঁধের কাজ করা হয়। জেলার সদরের চরপৌলি, কালিহাতীর  ভৈরববাড়ী ও আলীপুর এলাকার বাকি ১৬২৫ মিটার বাঁধের কাজের জন্য নতুন প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। আগামী শুকনো মৌসুমে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। 
টাঙ্গাইল ৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় আড়াইশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে চরপৌলি এলাকায় চায়না বাঁধের মতো বাঁধ নির্মাণ করা হবে।

কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যার ভাঙ্গনে বিলীন আধাপাকা ঘর
সংবাদদাতা, কাপাসিয়া, গাজীপুর থেকে জানান, গত দুই দিনের ভারি বর্ষণে গাজীপুরের কাপাসিয়া শীতলক্ষ্যা নদীর আকস্মিক ভাঙনে নদীর তীরবর্তী এলাকায় আধাপাকা ঘরসহ পাঁচটি ঘর ডেবে ভেঙে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে একটি মাদ্রাসা ও ঈদগাহ মাঠসহ অর্ধশত ঘরবাড়ি। আকস্মিক নদী ভাঙনে আতঙ্কে রয়েছেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ফকির মজনু শাহ সেতু (ঈদগাহ মাঠ এলাকা) সংলগ্ন স্থানে এসব  ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা হেনা বেগম, মাসুদ মিয়া, রফিকুল ইসলাম, বাবুল মিয়া, আক্কাস আলী এবং কিরন মিয়া জানান, তাদের ঘরবাড়ি ডেবে গিয়ে ভেঙে গেছে। অন্যত্র ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও জায়গার অভাবে তারা সরাতে পারছেন না। খোলা আকাশের নিজে ছেলেমেয়েকে নিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে ওইসব পরিবারের সদস্যদের।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ওখানে বড় একটা গাইড ওয়াল দিতে হবে। সেই গাইড ওয়াল দিতে যে পরিমাণ টাকা লাগবে তা উপজেলা পরিষদ থেকে দেওয়ার সুযোগ নাই। গাজীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। যত দ্রুত সম্ভব উনি একটি টিম পাঠাবে ঘটনাস্থলে। ওনাদের মাধ্যমে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

×