ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি ৮ লক্ষাধিক মানুষ

আবার প্লাবিত সিলেট

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:০৭, ২০ জুন ২০২৪

আবার প্লাবিত সিলেট

বন্যার পানিতে ভাসছে সিলেট উপশহর এলাকা

দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে সিলেট। ১৬ জুন রাত থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সর্বত্র বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি ঘটে। ২৭ মে জেলায় প্রথম দফা বন্যার সৃষ্টি হয়। সেই বন্যার পানি নেমে না যেতেই পুনরায় ভারি  বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দ্রুত ফের বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে সিলেট। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বুধবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এ সময় পর্যন্ত মহানগরের ২৩টি ওয়ার্ড ও জেলার ১০৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন বন্যা আক্রান্ত হয়েছে।

এর মধ্যে সিলেট মহানগরে অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি। বন্যায় ঝুঁকিতে পড়েছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার বিদ্যুতের সাবস্টেশন। সেটি রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করছে সেনাবাহিনী। এদিকে সুনামগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারেও বন্যা দেখা দিয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রংপুরের নি¤œাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নেত্রকোনায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কিছু স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করে নদীসংলগ্ন নীলফামারী ও গাইবান্ধার নি¤œাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতার। 
প্রথমে দুটি উপজেলায় বন্যা দেখা দিলেও ঈদের দিন ভোর থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারি বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় মহানগরের অনেক এলাকা। পুরো জেলায় বিস্তৃতি ঘটে বন্যার। সোমবার বিকেলে বৃষ্টি থামলে ধীরে ধীরে কিছুটা কমে পানি। কিন্তু মঙ্গলবার ভোর থেকে ফের শুরু হয় বৃষ্টি। উজানেও বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। জেলার প্রধান দুই নদী- সুরমা ও কুশিয়ারার পানি দু-একটি পয়েন্টে ওঠানামা করলেও বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে বুধবারও সিলেট অঞ্চলে ফের ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিলেট বিভাগে বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সে সঙ্গে সিলেটের কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘণ্টায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।  সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বেড়ে যাওয়ায় বুধবার সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ফের পানি উঠতে শুরু করেছে। এতে বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশীদ পয়েন্টে বুধবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। মঙ্গলবার সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বুধবার সকালে তা অনেকটা কমে বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বুধবার সকাল নয়টায় বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। 
এদিকে মঙ্গলবার রাত ১২টায় জেলা প্রশাসন জানায়, সিলেট জেলায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত না হলেও উজানের ঢলে নদ-নদীর ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিনদিন ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একজন ডেডিকেটেড অফিসার ও ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। তাছাড়াও বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। 
সিলেটের সীমান্তবর্তী পাঁচ উপজেলা গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জের পাশাপাশি বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায়। এসব উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলা ও নগর মিলিয়ে ৬২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে নগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭ হাজার ২৮৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

তবে বন্যাদুর্গত বেশিরভাগ মানুষ নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক নন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন পাড়া-প্রতিবেশীদের উঁচু বাসা-বাড়ি বা আত্মীয়-স্বজনের ঘরে। অপরদিকে সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।  কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
ঈদের দিনে দুর্ভোগ ॥ ঈদের দিন ভোর থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারি বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় নগরের অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থানেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। মাটি হয়ে যায় সিলেটের ঈদ আনন্দ। ঈদের আগের রাত ও ঈদের দিন ভোরে ভারি  বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নগর-গ্রাম সর্বত্র প্লাবন দেখা দেয়। এতে অধিকাংশ স্থানে নামাজের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়।

বিভিন্ন স্থানে ঈদগাহ ময়দান ও মসজিদে পানি প্রবেশের কারণে মুসল্লিদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। নগরীর শাহী ইদগাহে প্রতি ঈদে লক্ষাধিক মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে জামাতে ছিল মাত্র কয়েক হাজারের উপস্থিতি। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শাহী ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাতে অংশ নেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গ এবং ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।

নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। ঈদের দ্বিতীয় জামাত হজরত শাহজালাল (র) দরগাহ মসজিদে নির্ধারিত সময়ের পরে অনুষ্ঠিত হয়। গ্রাম এলাকায় বন্যার কারণে অনেকেই কোরবানি সম্পন্ন করতে পারেননি। নগরীতেও বৃষ্টিজনিত কারণে কোরবানি নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়। 
বিদ্যুতের সাবস্টেশন রক্ষায় সেনাবাহিনী ॥ পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ঝুঁকিতে পড়েছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার বিদ্যুতের সাবস্টেশন। সুরমা নদী ছাপিয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এটি প্লাবিত হলে দক্ষিণ সুরমার  ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়তে পারেন। মঙ্গলবার বিকেল থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষায় কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। তাদের সহায়তা করছে সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ। নদীর পাড়ে বালির বস্তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করছে তারা।

সেনাবাহিনীর সদস্যরা এখানে সর্বক্ষণিক নজরদারি রেখেছেন। এই উপকেন্দ্র থেকে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন, বরইকান্দি, কামালবাজার, মাসুকগঞ্জ, বিসিক, লালাবাজার, শিববাড়ী ও কদমতলীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২২ এর বন্যায় এই উপকেন্দ্রটিতে পানি উঠে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে বেশ কিছুদিন বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়েছে কেন্দ্রটির আওতায় থাকা বিদ্যুতের গ্রাহকদের।
সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা ॥ পানি বেড়ে যাওয়ায় সিলেটের প্রায় সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। এসব পর্যটন কেন্দ্রে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত যাতায়াত বন্ধ থাকবে। জননিরাপত্তা বিবেচনায় জাফলং, জলারবন, রাতারগুল, বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই, কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন উপজেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম। 

বন্যার পানিতে ভেসে ১জনের মৃত্যু ॥ জকিগঞ্জে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে স্রোতে ভেসে আব্দুল হালিম (৫৫) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি মুহিদপুর গ্রামের মৃত রনই মিয়ার ছেলে ও পেশায় পিকআপ চালক। ঘটনাটি বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর এলাকায় ঘটেছে। জানা গেছে, সকাল ৯ টায় বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে আব্দুল হালিম নিখোঁজ হন। এর পর দুপুর ২টার দিকে শাহবাগ মুহিদপুর এলাকায় তার লাশ ভেসে ওঠে। 
সবাইকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবেÑমেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ॥ সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, বন্যায় সিলেটে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিসিকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারাদিন আমি ও আমার পরিষদের সকল কাউন্সিলর বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। সিসিকের তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করব।

আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষ যেন ভোগান্তি না পোহান সেদিকে নজর রাখা হয়েছে। শুকনো ও রান্না করা খাবার তাদের দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে প্রয়োজনীয় ওষুধও দেওয়া হচ্ছে। বন্যার্তদের দুর্ভোগ কমাতে যথাযথ সব করা হবে। মঙ্গলবার রাত ৯টায় নগরভবনের সম্মেলনকক্ষে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন তিনি। সিসিক মেয়র আরও বলেন, যতদিন বন্যার পানি না কমছে ততদিন আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। নগরভবনে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এখান থেকে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এসব কার্যক্রম আমি নিজে তদারিক করব। মেয়র বলেন, দলমত নির্বিশেষ সবাইকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

পাশাপাশি প্রবাসীরাও আশা করি এ দুর্যোগ সময়ে সিলেটবাসীর পাশে দাঁড়াবেন।
সুনামগঞ্জে বন্যা ॥ সুনামগঞ্জ শহরসহ তলিয়ে গেছে সাত উপজেলার নি¤œাঞ্চল। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন মানুষ। বানের পানিতে ভেসে গেছে খামারের মাছ। গবাদিপশু, গোলার ধান-চাল নিয়ে দারুণ বিপাকে পড়েছেন মানুষ। জেলার দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলায় বন্যায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে নি¤œাঞ্চলের মানুষ। বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, মধ্যনগর, ধর্মপাশা উপজেলার গ্রামগুলোতেও প্রবেশ করেছে পানি। তলিয়ে গেছে নি¤œাঞ্চলের গ্রামীণ রাস্তাঘাট।

জেলা সদরের সঙ্গে তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওড়সহ জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। এদিকে বন্যার পানি শহরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে সুনামগঞ্জের হাটবাজারগুলোর চিত্র। নিমিষেই বাজারগুলো থেকে উধাও হয়ে গেছে মোমবাতি, চিড়া ও সিলিন্ডার গ্যাস। সেই সঙ্গে ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে দামও যেন হয়ে উঠেছে আকাশছোঁয়া। বন্যাকবলিত মানুষরা বলেন, বাজারে মোমবাতি, চিড়া ও সিলিন্ডারের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে।
মাধবপুর ॥ মঙ্গলবার ভোররাত থেকে প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মাধবপুরের আন্দিউড়া ইউনিয়নের মরারচর এলাকায় সোনাই নদীর এক পাড়ের বাঁধ ভেঙে সুন্দাদিল, নজরপুর, আলাকপুর, হরিশ্যামা, বারো চান্দুরা, মুরাদপুর, হাড়িয়া ও দুর্গাপুরসহ প্রায় আটটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০-২৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ৮০ হেক্টর জমির আউশ ধান ও ৩৫ হেক্টর সবজি খেত আংশিক পানিতে তলিয়ে গেছে। কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

নেত্রকোনা ॥ কলমাকান্দার বড় নদী উব্দাখালীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কলমাকান্দা ও খালিয়াজুরী উপজেলার নি¤œাঞ্চলের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া জেলার অন্য নদীগুলোতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। 
নালিতাবাড়ী ॥ শেরপুরের এ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। বুধবার সকাল থেকে খরস্রোতা চেল্লাখালী ও ভোগাই নদী কানায় কানায় ভরে প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাটির দিকে নালিতাবাড়ী, যোগানিয়া, বাঘবেড় ও কলসপাড় ইউনিয়নের কমপক্ষে ১০টি গ্রামের মানুষের বাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। 
লালমনিরহাট ॥ তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিসহ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রবল স্রোতে প্রবাহিত হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তিস্তার দুই পাড়ের মানুষ। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রংপুরের নি¤œাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

নীলফামারী ॥ উজানের সিকিম পাহাড়ে টানা ভারি বর্ষণের কারণে সেখানকার নামচি নামক স্থানে তিস্তা নদীর পানি ফুঁসে ওঠায় বিকেল ৪টায় হলুদ সংকত জারি করা হয়েছে। সেখানে তিস্তা যে কোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানানো হয়। ওই পানি ধেয়ে আসছে বাংলাদেশে। বুধবার কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ইতোমধ্যে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে রাখা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম ॥ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা ও দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি করে বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন জেলায় বজ্রসহ ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। 
কক্সবাজার ॥ টেকনাফে অতিবৃষ্টির কারণে চারটি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। 
জানা যায়, অতিবৃষ্টির ফলে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কানজরপাড়া, উলুবুনিয়া, উংচিপ্রাং, সাতঘড়িয়াপাড়া, হারাংখালী হ্নীলা ইউনিয়নের ছৈয়দ নূরপাড়া, সুলিশপাড়া, পূর্ব সিকদারপাড়া, মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং, চৌধুরীপাড়া, রঙ্গিখালী লামারপাড়া, বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শিলখালী, নতুন বাজার, পশ্চিমপাড়া, টেকনাফ পৌরসভার এলাকার বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, খাল দখলের কারণে বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় তাদের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।

×