ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

চট্টগ্রামে বসেছে ১০ হাট

কোরবানির পশু বিক্রি শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২২:২২, ৮ জুন ২০২৪

কোরবানির পশু বিক্রি শুরু

সিটি করপোরেশন অনুমোদিত পশুর হাট

এবার স্থায়ী তিনটির পাশাপাশি আরও ৭টি পশুর হাট বসার অনুমতি মিলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। এ ১০ হাটে জমজমাট বিক্রি শুরু না হলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ছে। এবারও স্থানীয় উৎপাদনে কোরবানি পশুর চাহিদা মিটবে না চট্টগ্রামে। যার ফলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু-মহিষ নিয়ে হাটে আসতে শুরু করেছে বেপারিরা।

চট্টগ্রামের পশুর হাটের ইজারাদারেরা জানিয়েছে, হাটে বেশিরভাগ বেপারি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার। স্থানীয় খামারিরা যেমন পশু মোটাতাজা করেছে তা উপজেলা পর্যায়ের হাটেই বিক্রি হয়। শনিবার থেকে নগরীর পশুর হাটগুলো পুরোদমে বসেছে। গত কয়েকদিন ধরে উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, নাটোর, নওগাঁ, কুষ্টিয়া ও সিরাজগঞ্জ থেকে বেপারিরা গরু নিয়ে এসেছে। শুক্রবার রাতেও নগরীর বিভিন্ন হাটে পশুবাহী ট্রাক এসেছে। যা অব্যাহত থাকবে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত। 
চট্টগ্রামে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার কোরবানি পশুর সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৮৫ হাজার। তবে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৫২ হাজার। চাহিদার বিপরীতে সংকট রয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার। প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোরবানি পশু দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামের হাটগুলোতে নিয়ে আসে বেপারিরা। চাহিদার বিপরীতে ওই সংকট নিরসন সম্ভব হবে বলে মনে করছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
বেপারিরা জানিয়েছেন, এবার পশুর দাম গতবারের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে গোখাদ্য এবং পরিবহন খরচের কারণে। যার ফলে এক লাখ টাকার গরু এবার ১ লাখ ৩০ হাজারের কাছাকাছি। অবশ্য হাটে বেপারিরা কোরবানি পশুর অত্যাধিক দাম চাইছে বলছেন ক্রেতারা।
বরাবরের মতো এবারও স্থানীয় তিনটি হাটে ভেটেরিনারি টিম থাকবে।

চট্টগ্রামে তিনটি পশুর বাজার হল সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। অস্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে নূর নগর হাউজিং এস্টেট, বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ, উত্তর পতেঙ্গার টিএসপি মাঠ, সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ওয়াজেদিয়া মোড় এবং আউটার রিং রোডের সিডিএ বালুর মাঠ।


চাঁদপুরে চাহিদার চেয়ে কম

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁদপুর থেকে জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ইতোমধ্যে পশুর হাট জমে উঠতে শুরু করেছে। তবে এ বছর চাঁদপুর জেলার কোরবানির পশুর চাহিদার তুলনায় সংকট রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে এই সংকট থাকবে না। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির পশুর আমদানি হবে। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যানুযায়ী জেলায় খামারি আছে ৩ হাজার ২৬৯ জন।

এ খামারিরাই কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখেন। ব্যক্তি উদ্যোগ ও খামারি মিলিয়ে এ বছর জেলায় ষাঁড়, বলদ, গাভী, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া লালন পালন করে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এসব পশুর সংখ্যা ৬১ হাজার ৪৮৯। চাহিদা রয়েছে ৭৮ হাজার।
জেলা সদরের বাগাদী ইউনিয়নের নানুপুর গ্রামের ডেইরি খামারি খালেদ মুন্সি বলেন, আমি প্রতিবছরই কোরবানিতে বিক্রির জন্য ২৫ থেকে ৩০টি গরু লালন পালন করি।

এ বছর প্রায় ৩০টি ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত আছে। এগুলো আমার খামারের নিজস্ব জাতের। ঘাসসহ দানাদার খাবার খাওয়ানো হয়। তবে খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের খরচও বেড়েছে। আমার খামারে ৮০ হাজার থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকা মূল্যমানের ষাঁড় আছে।
একই ইউনিয়নের অপর খামারি আহমদ উল্লাহ। তার খামারে আছে শতাধিক গরু। এরমধ্যে কোরবানিতে বিক্রির জন্য প্রস্তুত প্রায় অর্ধশত ষাঁড়। 
এদিকে জেলার সবচাইতে বড় পশুর হাট সদরের সফরমালি ও হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ঘুরে দেখা গেল প্রচুর পরিমাণ কোরবানির পশু উঠেছে এই দুই হাটে। তবে ক্রেতারা এখন শুধুমাত্র দরদাম করছেন। এই সপ্তাহের শেষ দিকের হাটগুলোতে বেচাবিক্রি বাড়বে।
সদরে সবচাইতে দীর্ঘ সময় কোরবানির পশুর হাট বসে ইচুলী চৌরাস্তায়। এই বাজারের ইজারাদার জাকির হোসেন খান বলেন, আগামী ১০ জুন থেকে এই হাটে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হবে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে কোরবানির পশু নিয়ে আসবেন ব্যাপারীরা। আবার প্রতিবছরই এই হাট থেকে পার্শ্ববর্তী জেলা লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী থেকেও লোকজন গরু কিনতে আসেন। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, জেলার ৮ উপজেলার ৩ হাজারের অধিক খামারি এ বছর কোরবানিতে বিক্রির জন্য ৬১ হাজার ৪৮৯টি পশু প্রস্তুত করেছেন।

জরিপ করে দেখা গেছে জেলার চাহিদানুসারে আরও ১৭ হাজার পশুর ঘাটতি আছে। তবে এই ঘাটতি থাকবে না। কারণ উত্তরবঙ্গ থেকে অনেক ব্যাপারী জেলার হাটগুলোতে পশু আমদানি করবেন। আশাকরি আমাদের চাহিদা পূরণ হবে এবং সবাই কোরবানি করতে পারবেন। 
মাগুরায় ন্যায্যমূল্যে বিক্রি

নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট জমে উঠেছে। আমদানি ব্যাপক হলেও এ বছর দাম বর্তমানে বেশ ভালো। ফলে খামারিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। জানা গেছে, মাগুরায় জমে উঠছে কোরবানির পশু হাটগুলো। গরু, ছাগলের আমদানি ভালো হচ্ছে।

এ বছর সদর উপজেলার, কাটাখালী, আলমখালী, রামনগর, আলোকদিয়া, মহম্ম্দপুরের বেথুলিয়া, নহাটা, শালিখার আড়পাড়া, সীমাখালী, পুলুম, শ্রীপুরের  লাঙ্গলবাধ ও সারঙ্গদিয়া প্রভৃতি স্থানে কোরবানির পশু হাট বসছে। হাটে বিভিন্ন আকারের গরু ও ছাগল উঠেছে বিক্রির জন্য। প্রতিটি গরু ৫০ হাজার টাকা থেকে এক-দেড় লাখ টাকার মধ্যে। ছাগলে দাম প্রকারভেদে ৮ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। 


সিরাজগঞ্জে নজর কাড়ছে ‘নাতিবাবু’

স্টাফ রিপোর্টার সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, ঈদুল আজহায় ‘নাতী বাবু’ নামের ষাঁড়টি বিক্রির জন্য দাম চেয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। 
জেলার শাহজাদপুর উপজেলার ঘোরশাল নতুনপাড়া গ্রামে কৃষক ঠা-ু প্রামানিকের খামারে বেড়ে উঠেছে এই নাতি বাবু নামের ষাঁড়টি। শাহজাদপুর উপজেলার নিভৃত গ্রামের একটি খামারে বেড়ে ওঠা বিশাল আকৃতির নাতিবাবু এখন সবার আলোচনায়।

সাড়ে ৯ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট উঁচু হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান শংকর জাতের এই গরুটি নজর কেড়েছে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ভিড় করছে তাকে দেখতে। খামারের মালিক ঠা-ু প্রামাণিক ছোট একটি গরুকে চার বছর ধরে আদর-যতœ ও ভালোবাসায় লালন-পালন করে বিশালাকৃতির ষাঁড়ে পরিণত করেছেন।

দেশের অনেকেই জানেন- শাহজাদপুরের গো-ভূমিতে বেড়ে ওঠা দুধেল গাভীসহ ষাঁড়কে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়। ঠা-ু প্রামাণিকের খামারেও ভিন্ন ভিন্ন নামে গবাদিপশু রয়েছে। কিন্তু আলোচিত এই ষাঁড়টিকে নাতির মতো আদরে বড় করে তুলেছেন বলেই নাম রাখা হয়েছে ‘নাতিবাবু’। ৪৩ মণ ওজনের বিশালকার এই ষাঁড়টিই জেলার সবচেয়ে বড় গরু বলে দাবি ঠা-ু প্রামাণিকের।

স্থানীয়দের ধারণা এটাই দেশের সবচেয়ে বড় ষাঁড়। ঠা-ু প্রামাণিক জানান, চার বছর আগে শখের বসে গরুটি কেনেন তিনি। নিজের বাড়িতে ফার্ম করে সম্পূর্ণ দেশী খাবার-কাঁচা ঘাস, খৈল, ভূষি, খড়, সাইলেস ইত্যাদি খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে নাতিবাবুকে। বর্তমানে এর ওজন দাঁড়িয়েছে ৪৩ মণে। এবার ঈদেই ছেড়ে দিতে হবে নাতিবাবুকে। তাই কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরুর ব্যাপারীরা এসে দেখছেন গরুটি। বিশালাকার নাতিবাবুর দাম হাকানো হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। 
শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বিল্লাল হোসেন জানান এটাই উপজেলার সবচেয়ে বড় গরু। প্রাণিটির ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ নাতিবাবুর মতো বড় আকারের গরু পালনকারীদের পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করছে। 
ফরিদপুরে সুলতানের দাম হাঁকা হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা

নিজস্ব সংবাদদাতা ফরিদপুর থেকে জানান, কোরবানির ঈদে ফরিদপুরে নজর কাড়ছে দেশীয় প্রযুক্তিতে পালন করা ৩২ মণ ওজনের সুলতান নামে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড়। পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে বড় বড় জাতের গরু লালন পালন করেছেন খামারিরা। এখন সেসব গরু তারা ক্রেতাদের সামনে আনছেন। সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের গেরদা গ্রামের তাহেরা এগ্রো ফার্মস লিমিটেড খামারের ‘সুলতান’ ষাঁড়টি বিক্রির জন্য দাম ২৫ লাখ টাকা চাওয়া হলেও এ পর্যন্ত দাম উঠেছে ১৮ লাখ টাকা।  
সাড়ে চার বছর বয়সী কালো রঙের সুলতানের ওজন ৩২ মণ। প্রতিদিন দুপুরে তিনজন কর্মচারী চেষ্টা করে শেড থেকে বাইরে আনে গোসল করানোর জন্য। এরপর খেতে দেওয়া হয় সবুজ ঘাস। ফার্মের ব্যবস্থাপক আকবর হোসেন জানান, সুলতানকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ কেজি কাঁচা ঘাস খেতে দেওয়া হয়।

পাশাপাশি নিজেদের প্রক্রিয়াজাতকৃত গম, ভুট্টা, ছোলা ও খেসারির ডালের ভুসি দিয়ে বানানো দানাদার খাবার খেতে দেওয়া হয়। আমরা শতভাগ প্রাকৃতিক খাবার খেতে দিই। খামারের মালিক সৈয়দ আবরার নওশের বলেন, সুলতানের দাম আমরা ২৫ লাখ টাকা চেয়েছি। অনেক ক্রেতা এসে গরুটি দেখে বিভিন্ন দাম বলেছেন। সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ১৮ লাখ টাকা।

×