ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

চট্টগ্রামে সেমিনারে ফখরুল

বেনজীরকে বাঁচাতেই সরকার গোপনে পাচার করে দিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ৪ জুন ২০২৪

বেনজীরকে বাঁচাতেই সরকার গোপনে পাচার করে দিয়েছে

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদকে বাঁচানোর জন্যই গোপনে তাকে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে।  এ সরকার অসংখ্য বেনজীর-আজিজ তৈরি করেছে। আমাদের লজ্জা হয়, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করেছে। তার দুর্নীতি ও দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করার কারণেই মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞা।
মির্জা ফখরুল বলেন, এক সময় আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব ছিল না। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যখন বাকশাল করা হয়েছিল তখন আওয়ামী লীগ ছিল না, বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছিল শহীদ জিয়াউর রহমান যখন বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করলেন তখন। আওয়ামী লীগ তখন দরখাস্ত করে নিবন্ধন করেছিল।

তারা সারাক্ষণ একটি কথা বলতে থাকে, জিয়াউর রহমানের কৃতিত্ব নাই। অনেক কথা বললে তাদের গায়ে আগুন জ¦লে। পাক বাহিনী যখন আক্রমণ করল ’৭১ সালে তখন সবাই পালিয়ে গিয়েছিলেন। একমাত্র নেতা থেকে গিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমপর্ণ করেছিলেন। এসব স্মরণ করিয়ে দিতে চাই না। কিন্তু তারা এসব কথা বলতে থাকে একজন মাত্র ব্যক্তিকে মহীয়ান করে। যেন আর কেউ নেই। এক নেতা এক দেশ, শেখ মুজিবের বাংলাদেশ এ ছাড়া আর কোনো কথা বলে না।

সেদিন এ জাতি ২৬ মার্চ কণ্ঠ খুঁজে পেয়েছিল জিয়াউর রহমানের। চট্টগ্রামের বেতারে সেদিন মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। 
মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মিলনায়তনে চট্টগ্রাম ফোরামের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে, অত্যাচারে, নির্যাতনে হতাশ হয়ে যাওয়া জাতিকে ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবীদের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে তখন নতুন করে জাতিকে আশান্বিত করেন জিয়াউর রহমান। তিনি সেদিন বলেছিলেন জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন আছে। সে স্বল্পকালীন সময়ে তিনি তা প্রতিষ্ঠা করেন।

বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক কাঠামো  যেটা আওয়ামী লীগের যন্ত্রণায় ভ্রান্তনীতির কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল, তখন বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রর্বতন করেছিল শহীদ জিয়া। গণতন্ত্র একটি প্রাতিষ্ঠানিক সিস্টেম। সব  দলের সম্মিলনে গণতন্ত্র বিকশিত হবে। ফুলের বাগান তৈরি হবে। এ স্বপ্ন পূরণ তিনি করতে চেয়েছিলেন। 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) চায় এদেশ তারাই শাসন করবে। অন্য কেউ শাসন করবে না। তারা লুটপাট করবে। আওয়ামী লীগ সংবিধান কাটাছেঁড়া করে নষ্ট করেছে। বিশেষ ক্ষমতা আইন, জরুরি আইন করেছে। সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করেছিল। বাকশাল ছিল জনগণের বিরুদ্ধে।

ভিন্নমত থাকবে না, এক নেতার এক দেশ। সেই আওয়ামী লীগ আবারও নতুন করে বাকশাল প্রতিষ্ঠার জন্য গত ১৫ বছর ধরে কাজ করছে। জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থাকে তারা পছন্দ করে না। এগুলো বললে তারা জিয়াউর রহমানকে গালিগালাজ করে। আমরা  কোনো রাজনৈতিক নেতাকে ছোট করি না। ৪৭ সালের আগে থেকে যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রেখেছিলেন তাদের স্মরণ করতে চাই।

তাদের সম্মান দিতে চাই। কিন্তু আওয়ামী লীগ দিতে চায় না। তাদের কাছে শুধু একজন। তাদের কাছে তাজউদ্দিন সাহেবও নেই, মুক্তিযোদ্ধারাও নেই, জিয়াউর রহমান তো নেই-ই। ইতিহাস ধারণ করছে জিয়াউর রহমানকে তাকে ছোট করে দেখানোর সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে নয়, সব সময় তারা একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাস করে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা সব সময় ওই বাকশালে বিশ্বাস করে। নতুন ছদ্মবেশে আবরণে গণতন্ত্রের আবরণ দিয়ে বাকশাল কায়েম করতে চায়।

এ জন্য ১৫ বছর ধরে সম্পূর্ণভাবে বেআইনিভাবে, বিনা ভোটে, জনগণের ভোট ছাড়াই রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে আছে। ৭১ সালে আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম সেই স্বপ্ন ধুলিসাৎ ও খান খান করে দিয়ে শুধু একটি দল, কিছু ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এদেশকে লুট ও চুরির রাজত্ব  তৈরি করেছে। ভাবতে লজ্জা হয়, বলতে লজ্জা হয় যে পুলিশ বাহিনীর সাবেক প্রধান, র‌্যাবের সাবেক প্রধান তার বিরুদ্ধে প্রতিদিন পাতায় পাতায় হাজার হাজার দুর্নীতির খবর বের হয়।

সারা বাংলাদেশে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে সে জায়গা কিনে নাই! এমনকি হিন্দু সম্প্রদায়ের জায়গাও জোর করে জায়গা দখল করেছে। তিনি বলেন, এ সরকার কি করছে? ওই চোরকে, ওই ডাকাতকে বাঁচানোর জন্য গোপনে তাকে পাচার করে দিয়েছে। লজ্জা হয়, আমাদের সেনাবাহিনী, যাদের ওপর ভরসা করি। যাদের ওপর আস্থা রয়েছে সেই বাহিনীর সাবেক প্রধানকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
আজিজের দুর্নীতি ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে বাধা দেওয়ার কারণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা বেনজীর নয়, আজিজ নয় তারা অসংখ্য বেনজীর-আজিজকে তৈরি করেছে। চতুর্দিকে দেখবেন আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্টরা রাক্ষস হয়ে উঠেছে। মাফিয়া চক্র তৈরি করেছে তারা। গোটা দেশকে গিলে খাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ আইনের শাসনকে ধ্বংস করে, সরকারি ব্যবস্থাকে শেষ করে, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে ভোট ডাকাতি করে তারা আমাদের ‘ডামি ও মধ্যরাতের’ নির্বাচন দিয়েছে। মানুষ এসব সহ্য করবে না। মানুষ লড়াই প্রতিবাদ সংগ্রাম করছে। আমরা ১৫ বছর ভয়াবহ দানবের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। 
বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, কয়েকদিন আগে তারা বললেন- কোনো একটা শক্তি মিয়ানমারের একটি অংশ নিয়ে নতুন ভূখ-  তৈরি করতে চায়। আমরা জানতে চাই, পরিষ্কার করে এসব কথা জনগণের সামনে তুলবেন। কেন চায়, কীভাবে চায়, কারা চায়? এসব কথা বললে তো হবে না। জনগণকে জানাতে হবে।
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চাইলে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাইলে তা হলে অবশ্যই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে আহ্বান জানাতে চাই, শুধু বিএনপি কিংবা দলের স্বার্থে নয়; দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে দেশমাতৃকার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে হবে। এর বিকল্প নেই।

×