ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি গতিশীল হবে

বেনাপোল-মোংলা ট্রেন চলাচল শুরু

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ১ জুন ২০২৪

বেনাপোল-মোংলা ট্রেন চলাচল শুরু

বেনাপোল থেকে শনিবার সকালে মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় কমিউটার ট্রেন

দীর্ঘ ৭৩ বছর পর রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হলো মোংলা বন্দর। শনিবার সকাল ১০টায় বেনাপোল থেকে প্রায় ছয়শ’ যাত্রী নিয়ে বেতনা এক্সপ্রেস ট্রেন মোংলায় পৌঁছায় দুপুর ২টায়। এরপর বেনাপোলের উদ্দেশে ছেড়ে যায় দুপুর আড়াইটায়। যদিও ট্রেনটি সকাল সোয়া ৯টায় ছাড়ার কথা ছিল। তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ৪৫ মিনিট দেরি হয়।
সপ্তাহে ছয়দিন চলবে এই ট্রেন। মঙ্গলবার থাকবে সাপ্তাহিক ছুটি। এই সার্ভিস চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণসহ গতিশীল হবে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি। গত বছরের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই রেলপথের উদ্বোধন করেন। সাত মাস পর আনুষ্ঠানিকভাবে চলাচল শুরু হলো। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
মোংলা বন্দরকে দেশের রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে ২০১৬ সালে শুরু হয় খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ। ২০১৯ সালে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও পাঁচ দফা সময় বাড়িয়ে নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরে। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে রয়েছে রূপসা নদীর ওপর পাঁচ দশমিক ১৩ কিলোমিটার একটি রেলসেতু, ১০৭টি ছোট-বড় কালভার্ট, আটটি প্ল্যাটফর্ম ও নয়টি আন্ডারপাস। 
মোংলা রেলস্টেশন মাস্টার এস এম মনির আহম্মেদ বলেন, এই পথে মঙ্গলবার বন্ধ রেখে সপ্তাহে ছয়দিন চলবে মোংলা এক্সপ্রেস নামে একটি কমিউটার ট্রেন। তবে আপাতত এ লাইনে নতুন সময়ের জন্য ট্রেন চালুর পরিকল্পনা নেই কর্তৃপক্ষের। আর মোংলা-বেনাপোল রুটে ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ টাকা এবং মোংলা-খুলনার ফুলতলা পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ টাকা। 
খুলনা-মোংলা রেলপথ ঘিরে অর্থনীতিতে খুলছে নতুন সম্ভবনার দুয়ার। ঢাকার সঙ্গে সহজ হবে মোংলা বন্দরের যোগাযোগ। একই সঙ্গে এই রেলপথ চালু হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তারা বলছেন, কম খরচে সহজে যাতায়াত এবং আরামদায়ক ভ্রমণও করতে পারবেন। চিকিৎসাসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজেও ভারতে যেতে এই রুট সহজ হবে তাদের। তবে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের দাবি, অফিস টাইম অনুযায়ী সকালে একটি ট্রেন চালুর।  
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও যাত্রী সাধারণ বলেন, বহুল কাক্সিক্ষত এই রেলপথ চালু হওয়ায় মোংলা বন্দরের সঙ্গে ভারত, ভুটান ও নেপালের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে। 
এর আগে ২০০০ সালে বেনাপোল ও খুলনার মধ্যে চালু হয় বেতনা এক্সপ্রেস নামে একটি কমিউটার ট্রেন। প্রতিদিন দুই বেলা সকাল-বিকেল ট্রেনটি খুলনা ও বেনাপোলের মধ্যে চলাচল করত। সম্প্রতি খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত নতুন রেল যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় বেতনা এক্সপ্রেসের রুট বর্ধিত করে মোংলা পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ রেল কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনের দিনে বেনাপোল রেলস্টেশনে কোনো আনুষ্ঠানিকতা না থাকলেও প্রথম দিনেই স্টেশনে যাত্রীদের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। 
বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের পরিচালক আবু নাঈম জানান, মোংলা কমিউটার ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল সোয়া ৯টায় বেনাপোল থেকে মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। দুপুর সাড়ে ১২টায় পৌঁছাবে মোংলা বন্দর রেলওয়ে স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেনটি প্রতিদিন রওনা হবে দুপুর ১টায়। বেনাপোলে পৌঁছাবে বিকেল সাড়ে ৪টায়। বেনাপোল থেকে ট্রেনটি বিকেলে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার সময় বেতনা এক্সপ্রেস নাম নিয়ে চলাচল করবে।
বেনাপোল রুটে যাত্রীসেবা বাড়াতে ব্যবসায়ী ও পাসপোর্টধারীদের দাবির মুখে রেল কর্তৃপক্ষ বেনাপোল-খুলনা-মোংলা রুটে চালু করেছে যাত্রীসেবা। ট্রেন চলাচলের জন্য চার হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়। 

খুলনা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত চলাচল করে বেতনা এক্সপ্রেস নামে একটি লোকাল ট্রেন। সেই ট্রেনটি ফেরার পথে খুলনার ফুলতলা জংশন থেকে মোংলার দিকে যাত্রা করবে, তখন ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ট্রেনটি ‘মোংলা কমিউটার’ নাম ধারণ করে চলবে। 
খুলনা থেকে ভোর ৬টায় ছেড়ে বেনাপোলে পৌঁছাবে সকাল সাড়ে ৮টায়। বেনাপোল থেকে ৯টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে মোংলা পৌঁছাবে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে। পরে দুপুর ১টায় মোংলা থেকে ছেড়ে ট্রেনটি বেনাপোল পৌঁছাবে বিকেল সাড়ে ৪টায়।
বেনাপোল রেলস্টেশনে অপেক্ষারত পাসপোর্টধারী যাত্রী মিনতি রানী বলেন, বেনাপোল-মোংলা রেলসেবায় এখন থেকে আমাদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।
এ প্রসঙ্গে অপর আরেক যাত্রী রমেশ চন্দ্র জানান, আগে বেনাপোল থেকে মোংলায় যেতে সড়কপথে আমাদের অনেক সময় লাগত, পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাতে হতো। তবে বর্তমানে বেনাপোল-মোংলা ট্রেন সার্ভিস চালু করায় আমরা অনেক খুশি।
এ বিষয়ে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট কাস্টমসবিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বিপুল বলেন, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি এই রুটে মালবাহী ট্রেন চালু করা হলে আমদানি ও রপ্তানি-বাণিজ্যে দুই বন্দরের মধ্যে গতিশীলতা ফিরে আসবে।
বেনাপোল রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ইনচার্জ আসাদুজ্জামান রানা জানান, বেনাপোল-মোংলা রেলসেবা চালু হওয়া বেনাপোল আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের ব্যস্ততা বাড়বে। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বাড়ানো হয়েছে।
বেনাপোল রেলস্টেশনের ম্যানেজার সাইদুজ্জামান জানান, বেতনা এক্সপ্রেস প্রতিদিন দুই বেলা খুলনা বেনাপোলের মধ্যে চলাচল করত। মোংলার সঙ্গে সংযুক্তির পর থেকে শনিবার সকালে ছেড়ে যাওয়া প্রথম ট্রেনটি খুলনায় যাত্রা সীমিত করে ফুলতলা হয়ে মোংলা যাবে। অন্ততত ১৫টি স্টেশনে এই ট্রেনটি থামবে।

×