ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

পাউবোর ১০ কিমি বাঁধ বিলীন

রেমালে ক্ষতি

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১ জুন ২০২৪

পাউবোর ১০ কিমি বাঁধ বিলীন

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কঁচা নদীর তীরবর্তী পাউবোর বেড়িবাঁধ বিলীন

নিজস্ব সংবাদদাতা, পিরোজপুর ॥ ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ইন্দুরকানীতে কঁচা নদীর তীরবর্তী পাউবোর ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধ ও নদী তীরবর্তী ২৫টি স্লুইসগেটের বাঁধ পানির চাপে ভেঙে যাওয়ায় ৪৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে অধিকাংশ কাঁচা ঘরের মেঝে পানিতে ধসে যায়।

বসতঘরে পানি ওঠায় হাজার হাজার বাসিন্দা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। পানি লোকালয় থেকে না সরায় স্থানীয় বাসিন্দাদের বসতঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কলা খেত, মৎস্য ঘের, ধান ও সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় ৭ দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। খাবার ও রান্নার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন প্রাণীর মৃতদেহ ও গাছের পাতা পচে নদী, খাল ও পুকুরের পানি বিনষ্ট হয়েছে।

কঁচা নদীর তীরবর্তী চণ্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মঞ্জু বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে তার এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জনসাধারণকে রক্ষায় সরকারের কাছে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি। মৎস্য ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার তিন শতাধিক মৎস্য ঘের ও পাঁচ শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালে এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পিরোজপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইব হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে কঁচা নদীর নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধসহ পুরনো বাঁধেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে প্রাক্কলন করে দ্রুত বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।

ত্রাণ চাই না, চাই বেড়িবাঁধ
সংবাদদাতা, দশমিনা, পটুয়াখালী থেকে জানান, রেমালের তা-বে ল-ভ- পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার উপকূলীয় এলাকার চরাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারি সহায়তা কিংবা ত্রাণ চান না। তারা স্থায়ী বেড়িবাঁধ চান। চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধের অভাবে কোটি কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। সিডর থেকে রেমাল পর্যন্ত কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কবলে পরে একাধিকবার সর্বস্বান্ত হয়েছে উপকূলীয় দশমিনার মানুষ।

দশমিনা উপজেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরাঞ্চল চরবোরহান, চরশাহজালাল, চরহাদী, চরবাঁশবাড়ীয়া, চরআজমাইনে বসবাসকারী কৃষকরা জানান, কয়েকবছর পর্যন্ত একের পর এক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে চরে বসবাসকারী কৃষকদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সারাবছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফলানো খেতের ফসল ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে নষ্ট হয়। চরাঞ্চলের কৃষকদের একমাত্র আয়ের উৎস ফসল।

বিগত কয়েকবছর রেমালসহ নানা ঘূর্ণিঝড়ের তা-বে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ কৃষকই দিশেহারা। অনেক কৃষক মহাজন এবং ব্যাংক ও এনজিও থেকে একাধিকবার ঋণ গ্রহণ করা। দশমিনা উপজেলার বুড়াগৌরাঙ্গ ও তেঁতুলিয়া নদীর বুকচিরে জেগে ওঠা প্রায় ২৫-৩০টি ছোট-বড় চর রয়েছে। এসব চরে প্রায় ৫০ হাজার লোকের জনবসতি। তিন যুগ পূর্ব থেকে উপজেলার নদীভাঙ্গা, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র মানুষরা এসব চরাঞ্চলে বসতি স্থাপন করে।

নির্বাচনের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা চরাঞ্চলের বেড়িবাঁধসহ উন্নয়নের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে কেউ কথা রাখেনি। চরের কৃষকরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, ত্রাণ নয় এবার বেড়িবাঁধ চাই। 
আজাদ মিয়া নামে চরের এক বাসিন্দা জানান, চরগুলোর বয়স প্রায় ৪০ বছরের কাছাকাছি হলেও সরকার এখন পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেনি। চরবোরহান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজির আহমেদ সরদার জানান, রেমালে তার ইউনিয়নের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা আগামী পাঁচ বছরে পূরণ হবে না। চরে বেড়িবাঁধ সবচেয়ে বেশি জরুরি।
পটুয়াখালী-৩ আসনের এমপি এসএম শাহজাদা জনকণ্ঠকে বলেন, খুব দ্রুত চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ নির্মাণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।
চাঁদপুরে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও মসজিদ
নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁদপুর থেকে জানান, সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের আখনের হাট এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব ও মেঘনার ঢেউয়ে সড়ক ও আখনের হাট জামে মসজিদের  পেছনের অংশ ভেঙে পড়েছে। একই সঙ্গে নদী এলাকায় বিলীন হয়ে গেছে গণকবর। বর্তমানে মসজিদ ও এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে মসজিদ, স্থানীয় লোকজনের চলাচলের একমাত্র সড়ক ও গণকবর ভেঙে পড়ার দৃশ্য দেখা যায়।
মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আবদুল্লাহ জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালে মসজিদের পশ্চিম অংশের মেঘনা নদীর পাড় এলাকায় বহু অংশ ভেঙে পড়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বাড়লে যে কোনো সময় মসজিদটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আখনের হাট জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নেছার আখন্দ জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মসজিদের সামনের অংশ ভেঙে পড়েছে। একই সঙ্গে মসজিদের উত্তর পাশসংলগ্ন আখনের হাটের সঙ্গে সংযুক্ত সড়কটি ভাঙনের মুখে পড়েছে। এই মুহূর্তে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধ না করা গেলে স্থানীয় লোকজনের চলাচল বন্ধ হয়ে পড়বে। স্থানীয় গ্রামপুলিশ আলমগীর হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ভাঙনের পরে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে জানানো হয়। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাখাওয়াত জামিল সৈকত জানান, ঘূর্ণিঝড়ের পরে চান্দ্রা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ব্যক্তিমালিকানা লোকজনের ঘর ভেঙেছে এমন তথ্য জানিয়েছেন। তবে আখনের হাট এলাকার সড়ক এবং মসজিদ এলাকার ভাঙনের কথা বলেননি। তবে এখন যেহেতু জানতে পেরেছি, ভাঙন প্রতিরোধ ও মেরামতের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

×