সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ও শাহজাহানপুর এলাকা রক্ষা প্রকল্পের নির্মাণকাজ ৬০ ভাগ সম্পন্ন
এক বছর সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ও শাহজাহানপুর এলাকা রক্ষা প্রকল্পের নির্মাণকাজ। সোয়া চার বছরে কাজ হয়েছে ৬০ ভাগ। বাকি ৪০ ভাগ সম্পন্ন করতে বর্ধিত সময়ের হাতে আছে মাত্র দুই মাস। অথচ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের জুনে।
পরে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। তবে সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। এখন চলছে দ্বিতীয় বারের মতো মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত কাজ শেষ করে কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি ও বসতবাড়ি রক্ষা করার।
বর্ষা মৌসুম এলেই আতঙ্কে দিন পার হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাগডাঙ্গা ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের। আগাম প্রস্তুতি নিতে হয় ঘরবাড়ি ভেঙে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের। দফায় দফায় বাসস্থান পরিবর্তন করেও রক্ষা হয় না এ দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের।
এমন পরিস্থিতিতে দুই ইউনিয়নের নদীপাড় রক্ষায় ৬০৩ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের জুনে। পরে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। সংশোধিত প্রকল্পে সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়। শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৬৬ কোটি টাকা। সংশোধনের পর প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৭ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০৩ কোটি টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি আবার সংশোধন হবে, বাড়ানো হবে সময়। পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের দাবি, গত কয়েক বছর ধরে ধীরগতিতে চলছে বাঁধ নির্মাণের কাজ। দ্রুত শেষ করা না গেলে নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি ও বসতবাড়ি।
পদ্মা নদীতে বর্ষায় দুই কূল উপচে পড়ে পানিতে, যার কারণে বছরের ৩ থেকে ৪ মাস কাজ বন্ধ থাকে। তারপরও দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা রয়েছে। এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হতে আরও এক বছর লাগতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, ‘গত ৯ বছরে আমরা ৭ বার বাড়ি ভেঙেছি।
যখনই বর্ষা আসে, তখনই আতঙ্কে থাকি। গত কয়েক বছর ধরে বাঁধের কাজ করা হচ্ছে; কিন্তু শেষ হচ্ছে না। যত দ্রুত কাজ শেষ হবে, তত উপকারে আসবে কয়েক হাজার বাসিন্দার। আমরা চাই, কাজটি দ্রুত সময়ের মধ্যে করা হোক।
ষাটোর্ধ্ব আমজাদ আলী বলেন, বাঁধ নির্মাণ করা হলে দুটি ইউনিয়ন রক্ষা পাবে ভাঙন থেকে। অথচ কাজ চলছে অনেক ধীরগতিতে। এই বাঁধকে ঘিরে আমাদের অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা। কিন্তু কাজে অনেক গাফিলতি। আমরা চাই, অনিয়ম দুর্নীতি রোধ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা হোক।’
প্রকল্প এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনকবলিত চরবাগডাঙা ইউনিয়ন এলাকায় ১৭টি প্যাকেজ এবং শাজাহানপুর ইউনিয়নে ১২টি প্যাকেজের আওতায় ৬.১০ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণের কাজ রয়েছে। চরবাগডাঙা এলাকার ১৭ প্যাকেজের মধ্যে ৭ এবং শাহজাহানপুর এলাকার ১২ প্যাকেজের মধ্যে তিনটি সম্পন্ন হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, পদ্মার ভাঙন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ও শাহজাহানপুর এলাকা রক্ষা প্রকল্পের এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৬২ শতাংশ। বর্ধিত মেয়াদের সময় শেষ হবে চলতি বছরের জুনে। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হবে। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা সময় বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যায়। কাজের মান নিয়ে যেন কোনো ফাঁকিবাজি না হয়, সেজন্য প্রকৌশলীরা নিয়মিত তদারকি করছেন। সঠিক মানে কাজ বুঝে নেবে পাউবো।
দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে সব ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ। তিনি বলেন, পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মেগা প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। কিন্তু কাজটি দ্রুত করতে সরকারের বিভিন্ন মহলে অনুরোধ করা হবে। যাতে কম সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করে পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের রক্ষা করা যায়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রকল্পটি গ্রহণ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ৩ মার্চ একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটির অনুমোদন দেন। প্রকল্পের টেন্ডার হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে, কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে।