ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

বন্যহাতির তাণ্ডবে নির্ঘুম রাত কাটছে গ্রামবাসীর

সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর 

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ১৬ মে ২০২৪

বন্যহাতির তাণ্ডবে নির্ঘুম রাত কাটছে গ্রামবাসীর

হাতির দল।

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্যহাতির অব্যাহত তাণ্ডবে নির্ঘুম রাত কাটছে গ্রামবাসীর। বোরো ধানের মৌসুমের শুরু থেকেই হাতির দল উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে। কৃষকরা তাদের আধাপাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন। 

আবার কোন কোন এলাকায় ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে। আবাদের শেষ প্রান্তে এসে চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। তাই জানমাল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই যুগ আগে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে একদল বন্যহাতি বিনা বাধায় বাংলাদেশর অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। প্রথম দিকে ৪০/ ৫০ বন্যহাতি থাকলেও দিন দিন বংশ বিস্তার করে এর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। তারা বর্তমানে কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে একযোগে পাহাড়ি এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি করে চলেছে। 

বেশির ভাগ মানুষ নানা জটিলতায় ক্ষতিপুরণ পাচ্ছেন না। নিজস্ব রেকর্ডীয় জমি না থাকায় পাহাড়ি ঢালে বসবাসরত অধিকাংশ ভূমিহীন পরিবার বন বিভাগের খাস জমিতে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তারা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার শর্ত পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন। 

এছাড়া বন কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা না করার অভিযোগও রয়েছে। তাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য শর্ত শিথিল করার দাবি এলাকাবাসীর।ওই এলাকার বুরুঙ্গা কালাপানি গ্রামের এরশাদ আলম ও মোবারক আলীসহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, ক্ষুধার্ত হাতিগুলোকে আগে মশাল জ্বালিয়ে ডাক চিৎকার চেচামেচি ও হৈ-হুল্লোড় করে ঢাকঢোল পিটিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু এখন আর কিছু মানতে চায় না। 

তাছাড়া বাংলাদেশের বনভূমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য না থাকায় হাতিগুলো ফসলের মাঠে চলে আসে। আবার মাঠে ফসল না থাকলে লোকালয়ে এসে তাণ্ডব চালিয়ে ঘরবাড়ি তছনছ করে গুড়িয়ে দেয়। কখনো বা গাছের কাঁঠাল খেয়ে সাবার করে দিচ্ছে। এসময় হাতিগুলোকে তাড়াতে গেলে পা দিয়ে পিষে মানুষ মারছে। একপর্যায়ে গ্রামের মানুষ জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। এতে বন্যহাতি আর মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এর সমাধান প্রয়োজন। 

তারা আরো জানান, বন্যহাতিগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবাধে চষে বেড়ালেও উত্তর দিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গহীন পাহাড়ের দিকে যেতে দেয় না ভারতীয়রা। যে কারণে যুগের পর যুগ শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ছুটাছুটি করে প্রায় প্রতি রাতেই কোথাও না কোথাও তাণ্ডব চালায়। 

গ্রামবাসীরা বলেন, উত্তর দিকে ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যে হাজার হাজার কিলোমিটার বনভূমি রয়েছে। এমনকি সেখানে হাতির পর্যাপ্ত খাদ্যও রয়েছে। কিন্তু সেখানে হাতিদের ফেরত যেতে দেওয়া হয় না। তাই দুই দেশের সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যৌথ সভায় বৈঠক করে হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার দাবি জানান তারা।

ময়মনসিংহ বনবিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যহাতি দ্বারা নিহত পরিবারকে ৩ লাখ, আহতকে ১ লাখ ও ফসলের ক্ষতিগ্রস্থকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে সরকার। 

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলিশায় রিছিল বলেন, বন্যহাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে। বন বিভাগের মাধ্যমে তাদেরকে সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। 

এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাতি তাড়াতে মশাল জ্বালানোর কেরোসিন তেল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
 

 এসআর

×