ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

আসামিকে না পেয়ে স্ত্রীর মাথায় পিস্তল ঠেকালো পুলিশ কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ১৩ মে ২০২৪

আসামিকে না পেয়ে স্ত্রীর মাথায় পিস্তল ঠেকালো পুলিশ কর্মকর্তা

স্ত্রীর মাথায় পিস্তল ঠেকান পুলিশ কর্মকর্তা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার থলিয়ারা গ্রামে আসামি না পেয়ে বাড়ির নারী ও শিশুদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যের বিরুদ্ধে। একপর্যায়ে ডিবির এক পুলিশ কর্মকর্তা মামলার আসামির স্ত্রীর মাথায় পিস্তল ঠেকান। 

গত শুক্রবার জেলার সদর উপজেলার থলিয়ারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। 

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন সোমবার দুপুরে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন দিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার সূত্রে জানা গেছে, এক থেকে দেড় মাস আগে জেলার সদর উপজেলার বিশ্বরোড এলাকার আবদুল কুদ্দুস বাদী হয়ে স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগে নূরুল আলমের নামে একটি মামলা করেন। নূরুল আলম সৌদি আরব থেকে আবদুল কুদ্দুসের এক আত্মীয়ের সাড়ে ৮০০ গ্রাম স্বর্ণ আনেন। কিন্তু পুরো স্বর্ণ বুঝিয়ে না দিয়ে কুদ্দুসকে মাত্র ৪০০ গ্রাম স্বর্ণ দেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পুলিশকে নির্দেশ দেন। এদিকে সৌদিপ্রবাসী নূরুল আলমের বাড়িতে শুক্রবার বিকেলে আসামি গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তখন বাড়ির নারীসহ অন্যদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। 

ডিবি পুলিশের উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম একপর্যায়ে নূরুল আলমের স্ত্রী বন্যা বেগমের দিকে পিস্তল তাক করেন। পরে আসামিকে না পেয়ে পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে চলে যান।

এ ব্যাপারে কথা হয় নূরুল আলমের ভাই সারোয়ার আলমের সঙ্গে।  তিনি বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে বাড়িতে অনুষ্ঠান চলছিল। সে সময় আমার ভাই বাড়িতে ছিলেন না। ভাইকে না পেয়ে তাঁর স্ত্রী বন্যা বেগম (৩৩), আমার বোন তাসলিমা বেগমসহ (৩২) কয়েকজনকে মারধর করেন। আমার ভাইয়ের শিশুসন্তানকে চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যান। এসব দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও করায় আমার এক ভাতিজিকেও তাঁরা মারধর করেন। তার মাথায় পিস্তল দিয়ে আঘাত করেন পুলিশ সদস্যরা। তাঁদের বাঁচাতে গেলে পুলিশ সদস্যরা আমাকে ও ভাবিকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়েন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ তল্লাশি করে আমাদের ঘরের মালামাল, স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। পুলিশ পিস্তল তাক করার পাশাপাশি গুলিও করেছে। গুলির খোসাগুলো আমাদের সংরক্ষণে আছে। পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটি তারা তদন্ত করলে বিস্তারিত জানতে পারবে। এই নিয়ে আমরা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ) জয়নাল আবেদীনকে। অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. বিল্লাল হোসেন, জেলা পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক (ক্রাইম) মো. হাবিবুল্লাহ সরকার। 

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ) জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নিয়েছি। দ্রুত ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করব।’

এ ঘটনার পর মোবাইল ফোনে ও তাঁর অফিসে গিয়ে ডিবি পুলিশের এসআই রেজাউল করিমকে পাওয়া যায়নি। তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আসামি গ্রেপ্তার করতে গেলে বাড়ির নারীসহ অন্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে নারীদের সরিয়ে দিয়ে দরজার দিকে পিস্তল তাক করি। এর ভিডিও আছে। তাঁরা আসামিকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন।’

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

শহিদ

×