ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

আমাগোর দুঃখ কেউ দেহে না

সংবাদদাতা, ঝিনাইগাতী, শেরপুর

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ১৩ মে ২০২৪

আমাগোর দুঃখ কেউ দেহে না

বর্ষা এলে মাঝে মধ্যে আসে জোয়ার। পানিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে নদী

দেশ স্বাধীন অইলো। আমগোর গ্রামডা দুই ভাগ অইলো। অর্ধেক ভারতে। আর অর্ধেক আমরা। ৫২ বছর অইলো। অহনও আমরা আগের মতোই। আমগোর দু:খ কেউ দেহেনা। এডা সেতুর লাইগা আমরা কত নেতা, মেম্বার চেয়ারম্যান গোরে কইলাম। কেউ দিলোনা। এডার লাইগা মেলা কষ্ট অয়। 

কথা গুলো বলছেন, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের হালচাটি গ্রামের কৃষক আদিবাসী সুরেন্দ কোচ। তিনি বলেন, যাতায়াতের এডা পথ পোলাপানগোরে কষ্ট আরো বেশি। কালাঘোষা নদীর ওপর এডা সেতু অইলে এই কষ্ট করতে অইবো না। 

আরও পড়ুন : শিশু রাশেদের মৃত্যু, দেয়াল ধ্বসে নাকি পরিকল্পিত হত্যা?

তার প্রতিবেশী প্রেমানন্দ কোচ বলেন, ভোটের লাইগা অনেকে আয়ে। মেলা কতা কয়। সেতু দিবো। ভোট অইলে আর আয়েনাধষঢ়;। এই গ্রামেরই আদিবাসী নারী নাইবালী কোচ। তিনি বলেন, বেডা মানুষরা কাপর তুইলা যাইতে পারে। আমরাতো কাপর ভিজাইয়া যাই। এই সেতু অইলে আমগোর মেলা উপকার অইবো। 

তিনি আরো বলেন, বর্ষাকালে মাঝে মধ্যেই জোয়ার আসে। নদীতে পানি ভইরা যায়। অহন চলাচল করতে পারিনা। কোনো মানুষ অসুখ অইলে চিকিৎসাও করাতে পারি না। ছেলে মেয়েরা পড়া লেহা করতে যাইতে পারে না। হাতির সমস্যাতো আছেই।

এভাবেই আক্ষেপ করে ওই নারী আরো বলেন, আমরা কি সারাজীবন এভাবেই কষ্ট করমু? রবিবার (১২ মে ) বিকালে সরেজমিন গেলে স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজনের কথা বলে ওঠে আসে এমন দুর্ভোগের চিত্র।

গ্রামবাসীরা জানান, হালচাটি গ্রাম। এখানে প্রায় অর্ধশত পরিবারের বসবাস। প্রায় সবাই আদিবাসী। তবে কোচ সম্প্রদায়েরই পরিবারের সংখ্যাই বেশি। গ্রামটির উত্তরে ভারতের বারাংগাপাড়ার হালচাটি গ্রাম। স্বাধীনতার আগের একই গ্রাম ছিল। পরে সীমানা ভাগ হলে গ্রামটি ভাগ হয়ে যায়। গ্রামের মাঝ দিয়ে হয় কাটাতারের বেড়া। বিভক্ত হয়ে পড়ে গ্রামবাসীরা। 

ভারত থেকে এ গ্রামের মাঝ দিয়ে নেমে এসেছে কালাঘোষা নদী। শুকনো মৌসুমে এনদীতে থাকে হাটু পানি। বর্ষা এলে মাঝে মধ্যে আসে জোয়ার। পানিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে নদী। কয়েকদিন বন্ধ থাকে হালচাটিসহ আশপাশের গ্রামবাসীদের চলাচল। চরম বিপাকে শতশত মানুষ। তাদের চলাচলের সড়কটিও দু’পায়ে পাহাড়ি পথ। চলেনা কোনো যানবাহন। 

স্থানীয় এক শিক্ষক যুগল কিশোর কোচ বলেন, কেউ অসুস্থ্য হলে তাকেকাধেঁ করে নিতে প্রায় এক কিলোমিটার। এর পর বর্ডার সড়ক। আমরা জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্ভোগের কথা বলি। কিন্তু শুধু প্রতিশ্রুতি দেন। বাস্তবায়ন হয় না। এখানে সেতু হলে হালচাটি গ্রামসহ আশপাশের গ্রামবাসীদের চলাচলে দুর্ভোগের অবসান হবে। বদলে যাবে গ্রামবাসীদের জীবনমান।

এ ব্যাপারে উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকসী বলেন, আমরাতো কোনো বরাদ্দ পাইনা। চেয়ারম্যানরা উদ্যোগ নিলে ত্রাণের টাকায় সেতু করতে পারে। 

হালচাটি গ্রামবাসীসহ যাতায়াতকারীদের দুভোর্গের সত্যতা নিশ্চিত করে কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর বলেন, বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই সেখানে সেতু নির্মাণ হবে। তিনি আরো বলেন, আমারতো সময় শেষ। সেখানে প্রশাসনের লোকজনসহ বিজিবির সদস্যরাও চলাচল করে। বর্ষা এলে চলাচলে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়। কালাঘোষা নদীর ওপর সেতু হবে। এ স্বপ্ন হালচাটিম গ্রামবাসীসহ যাতায়াতকারীদের। এতে বদলে যাবে গ্রামবাসীদের জীবনচিত্র।

এবি 

×