ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

গাজীপুরে হাসপাতালের লিফটে আটকে রোগীর মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর 

প্রকাশিত: ১৫:৩০, ১২ মে ২০২৪; আপডেট: ১৫:৫০, ১২ মে ২০২৪

গাজীপুরে হাসপাতালের লিফটে আটকে রোগীর মৃত্যু

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল

গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেলের লিফটে আটকে পড়ে এক নারী রোগীর মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে।রবিবার সকালে হাসপাতালের ৩ নম্বর লিফটে এ ঘটনাটি ঘটেছে। পরে জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা গিয়ে লিফটে আটকে পড়া রোগীর লাশসহ অন্যদের উদ্ধার করেছে।  এ ব্যাপারে নিহতের স্বজনরা সাংবাদিকদের কাছে লিফট অপারেটরদের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ করেছেন। 

নিহত মমতাজ বেগম (৫০), গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়িগাঁও গ্রামের শারফুদ্দিন বিএসসি’র স্ত্রী। 

আরও পড়ুন : পল্লবীতে কথায় কথায় মানুষের কান কেটে দিচ্ছে ‘কানকাটা গ্রুপ’

নিহতের ভাগ্নে খন্দকার শাহদত হোসেন সেলিম জানান, তার মামী মমতাজ বেগম শ্বাস কষ্ট ও হৃদরোগ নিয়ে রবিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ওই হাসপাতালের ১১ তলার মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। পরে তাকে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে একই ভবনের ৪র্থ তলায় থাকা কার্ডিলজি বিভাগে ট্রান্সফার করেন। মামী হাটা চলা করতে পারলেও তখন তাকে দ্রুত হৃদরোগ বিভাগে নেয়ার জন্য ট্রলিতে উঠানো হয়। পরে মমতাজ বেগম, তার ছেলে আব্দুল মান্নান ও মেয়ে শারমিনসহ আমরা হাসপাতালের ৩ নং লিফটে উঠি। কিন্তু লিফটি হাসপাতালের ৯ম ও ১০ তলা মাঝমাঝি থাকা অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লিফটি হঠাৎ ঝাকুনি দিয়ে থেমে যায়। তখন আমি লিফটে থাকা মোবাইল নম্বরে একাধিক ব্যাক্তিকে বার বার ফোন করলেও তারা কোন কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু বার বার ফোন করায় তারা বিরক্ত হয়ে আমাদের গালিগালিজ করেন। 

এমতাবস্থায় রোগী ছটফট করতে থাকলে আবারো অপারেটরদের ও ৯৯৯ নম্বরে ফোন করি। আটকে থাকার  ৪৫ মিনিট পর এক পর্যায়ে কয়েকজন অপারেটর গিয়ে দরজা কিছুটা ফাঁক করে আবার দরজা বন্ধ করে তারা চলে যায়। এ সময় অকে কষ্টে আমরা তিনজন বেরিয়ে আসতে পারলেও মমতাজ বেগমকে বের করা সম্ভব হয়নি। পরে ৯৯৯ নম্বরে পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল যায়। কিন্তু ততক্ষণে লিফটের ভেতরই মমতাজ বেগম শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। পরে জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা দরজা খুলে মমতাজ বেগমের লাশ উদ্ধার করেছে। যদি সঠিক সময়ে তাকে উদ্ধার করা হতো তা হলে হয়তো তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হতো। 

এর আগে ৪ মে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার কারণে হাসপাতালের ১২তলার ভেতরের দেয়াল ও মেঝের মধ্যে থাকা ফাঁকা স্থান দিয়ে এক রোগী ১০তলায় পড়ে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনার সপ্তাহ না ঘুরতেই আবার এ দূর্ঘটনায় মমতাজ বেগম মারা গেলেন। এসব দায়িত্ব অবহেলা জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।   

হাসপাতালের উপপরিচালক মো.জাহাঙ্গীর আলম লিফটে আটকে পড়ে রোগীর মৃত্যুর খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে হাসপাতালে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে লিফটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এতে রোগী মমতাজ ও তার কয়েক স্বজনসহ হাসপাতালের ৯ম তলায় লিফটি থেমে গেলে তারা সকলেই সেখানে আটকা পড়েন। 

পরে লিফটের অপারেটর ও জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা লিফটি ফাঁক করে ঘটনার ১৫/২০মিনিট পরে মমতাজের লাশ ও তার স্বজনদের উদ্ধার করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। এ ঘটনায় কারো গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 

তাসমিম

সম্পর্কিত বিষয়:

×