ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

বৃক্ষপ্রেমী চিত্তরঞ্জন

তালবীজ লাগানো তার নেশা, রোপণ করেছেন তিন লাখ

সাজেদ রহমান

প্রকাশিত: ০০:০৮, ১২ মে ২০২৪

তালবীজ লাগানো তার নেশা, রোপণ করেছেন তিন লাখ

যশোরে অভয়নগরের ধোপাদী গ্রামের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন দাস ১৬ বছর ধরে রাস্তার পাশে এভাবে তালের বীজ রোপণ করছেন

পেশায় ক্ষুদ্র কাঠ ব্যবসায়ী হলেও তালের বীজ লাগানো তার নেশা। বর্ষায় আকাশ যখন ভারি মেঘে ছেয়ে থাকে নরম মাটিতে তখন তিনি তালের বীজ রোপণ করেন। ২০০৮ সাল থেকে নিজ অর্থায়নে ২ লাখ ৮৮ হাজার তালের বীজ রোপণ করেছেন তিনি। বলছিলাম তালগাছ প্রেমী নাম চিত্তরঞ্জন দাসের কথা। যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামের বাসিন্দা তিনি।

শুধু তালগাছই নয়, প্রায় ৩৫ হাজার খেজুর গাছের চারাও ইতোমধ্যে রোপণ করেছেন। কর্মকা-ের শুরুতে কেউ কেউ ‘পাগল’ সম্ভাষণ করেছেন। সময়ের পরিচয়ে এখন তিনি সবার কাছে বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে পরিচিত। গোটা যশোরবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।

বৃক্ষপ্রেমী চিত্তরঞ্জন দাস জানান, মরা কাঠের ব্যবসা করতে করতে ২০০৮ সালে নিজ উদ্যোগে শুরু করেন তালের বীজ রোপণ। তালগাছ নিয়ে আমেরিকান এক গবেষকের গবেষণার সংবাদ দেখে তিনি এই মহৎ কাজে নামেন। প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তালের বীজ রোপণ করেন তিনি। বছরের বাকি সময়টা থাকেন পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছে নাতি অর্পণ দাস। ধোপাদী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সে।  
সাইকেলে চড়ে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে তালের বীজ সংগ্রহ করেন চিত্তরঞ্জন দাস। প্রতি এক হাজার বীজ কিনতে তার খরচ হয় প্রায় দুই হাজার টাকা। বহন খরচ দিয়ে বীজ রোপণ পর্যন্ত খরচ হয় প্রায় পাঁচ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, খেজুর গাছের চারা লাগাতে প্রতি বীজে খরচ হয় এক টাকা। ১৬ বছরে তিনি বৃক্ষ রোপণের পেছনে ব্যয় করেছেন আনুমানিক ৮-১০ লাখ টাকা। অভয়নগরের সরখোলা, ধোপাদী, বৈকারা, ডুমুরতলা, হাটগাছা, মশিয়াটি, বাইড়েদা, সুন্দলী, বিহারকুল, গোবিন্দপুর গ্রামসহ আশপাশের আরও কিছু উপজেলার সড়কের পাশে তাল গাছের বীজ রোপণ করেছেন চিত্তরঞ্জন।
সরখোলা গ্রামের আব্দুল্লাহ সুমন বলেন, চিত্তরঞ্জন কাকাকে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার পাশে তাল গাছের চারা লাগাতে দেখে আসছি। তার বাড়ির অবস্থা বা আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না। তবু তার যে আয় হয় তা দিয়েই তিনি সাংসারিক খরচ চালিয়ে বাকি টাকা বৃক্ষ রোপণে ব্যয় করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা এমএম হারুন অর রশিদ বলেন, চিত্তরঞ্জন দাসকে এখন সবাই বৃক্ষপ্রেমী নামে চেনেন। তিনি নিজ উদ্যোগে যে তালগাছ রোপণ করছেন এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। একটা সময় তিনি থাকবেন না, কিন্তু এই তালগাছের সুফল আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভোগ করবে। 
ধোপাদী পূর্বপাড়া গ্রামের জাফর আলম বলেন, একটা সময় ছিল এই অভয়নগরে তালগাছ তেমন চোখে পড়ত না। মাঠে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে অহরহ কৃষক মারা গেছে। চিত্তরঞ্জন দাস বিগত ১৬ বছর ধরে যা করছেন তা পরিবেশের জন্য অনেক বড় অবদান। প্রথমদিকে তাকে সবাই পাগল বলত। আসলে তিনি বৃক্ষপাগল, বৃক্ষপ্রেমী।
চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, একদিন আমেরিকান এক গবেষকের গবেষণার খবর দেখে জানতে পারিÑ একটা তালগাছ কয়েক লাখ প্রাণীর অক্সিজেনের জোগান দেয়। শুধু তাই নয়, পরিবেশের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি বজ্রপাত থেকেও রেহাই দেয় এই তালগাছ। ওই সময় আমাদের গ্রামে অনেকে মাঠে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যেতেন। এমন ঘটনায় ২০০৮ সাল থেকে তালগাছের বীজ রোপণ শুরু করি। 
তিনি বলেন, অনেকে অনেক রকম কথা বলে আমাকে নিয়ে। কারও কথায় কান দেই না। কান দিলে হয়তো এতদূর এগোতে পারতাম না। প্রতিবছর আমার এই কার্যক্রমের পেছনে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। 
তিনি জানান, তার কার্যক্রমে খুশি হয়ে জেলা প্রশাসন থেকে পুরস্কার এবং উপজেলা প্রশাসন থেকে তাল গাছের বীজ উপহার পেয়েছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার সহযোগিতা করলে আমি সারাদেশে ১০ লাখ তালগাছের বীজ রোপণ করে দিয়ে যাব। ইতোমধ্যে আমার কাছ থেকে অনেক জেলা থেকে অনেক বৃক্ষপ্রেমী বীজ সংগ্রহ করেছেন।

×