ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

দিন দিন উজাড় হচ্ছে বরগুনার টেংরাগিরি বন, অস্তিত্ব রক্ষার শঙ্কায় স্থানীয়রা

নিজস্ব সংবাদদাতা, বরগুনা 

প্রকাশিত: ১৪:১৬, ২৮ এপ্রিল ২০২৪; আপডেট: ১৪:১৭, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

দিন দিন উজাড় হচ্ছে বরগুনার টেংরাগিরি বন, অস্তিত্ব রক্ষার শঙ্কায় স্থানীয়রা

বরগুনার তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি বন।

সংরক্ষিত বনগুলো থেকে অবৈধভাবে গাছ কাটা, অগ্নিসংযোগ, দখল, বালু উত্তোলন, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা কারণে উজাড় হচ্ছে বরগুনার তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি বন। এতে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিও বাড়ছে।

বন বিভাগ ও পরিবেশকর্মীদের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জোয়ারের সঙ্গে সৈকতে বালি জমে গাছের শেকড় আটকে বনের গাছ মারা যাচ্ছে। তবুও আশানুরূপ তেমন কোনো প্রকল্প কিংবা উদ্যোগ নেই বললেই চলে।

সোনাকাটা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা বলেন, সমুদ্র তীরের সংরক্ষিত বনের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য অবলোকনের জন্য ছুটে যান তারা। এ বনে রয়েছে গেওয়া, কেওড়া, ছইলা, ঝাউবনসহ অসংখ্য প্রজাতির গাছ। প্রভাবশালী ও দুষ্কৃতিকারীদের নজর পড়ায় এর অস্তিত্ব রক্ষা নিয়ে শঙ্কায় স্থানীয়রা।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোফরেস্টি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন সাগরের পানির স্তর ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। বনায়নের দিকে সুনজর রাখতে হবে। নতুন নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে বনায়ন সৃষ্টি করার বিকল্প নেই।’

এই বনায়ন একটি সৌন্দর্য বহন করে। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় বিশাল ভূমিকা রাখে। এই বন আগুনে পুড়িয়ে এবং গাছ কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ বিষয়ে বন প্রহরীদের সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি পর্যটন ব্যবসায়ী, পরিবেশকর্মী সবার সক্রিয় হওয়া দরকার। যাতে এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রæত শাস্তির আওতায় আনা যায়।
বরগুনার তালতলী থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকত পর্যন্ত বিস্তৃত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বন টেংরাগিরি বা ফাতরার বন। এ বনের আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৪ একর। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের ছোবল আর ভাঙনের ফলে এ বনটি এখন বিলীনের পথে। ৬২ বছরে এ বনের শত কোটি টাকা দামের দুই হাজার একর জমিসহ কয়েক লক্ষাধিক গাছ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানা যায়।

২৫ মার্চ এ বনের বেহুলা নামক অংশে অগ্নিকান্ড ঘটে। মুহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সেচ মেশিন দিয়ে ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বন বিভাগ। এ ঘটনায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি দাবি করে বন বিভাগের তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মতিয়ার রহমান স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার কথা জানান।

তবে স্থানীয় পরিবেশকর্মী আরিফ রহমান বলেন, সংরক্ষিত এই টেংরাগিরি বনের মধ্যে প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলেছে। এতে বনের অনেকটা অংশ পুড়ে গেছে। কিছুদিন আগেও এরকম আগুন দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পরও আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

এ ছাড়া সাগরঘেঁষা এখানকার বনের মূল আকর্ষণ ঝাউবন হলেও অবৈধভাবে বালি উত্তোলন, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে তাও বিলীনের পথে। এখানকার সৈকতের পাশে বেসরকারিভাবে ৩৬০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলায় সৈকতের তীর থেকে বালি উত্তোলনের ফলে ঝাউগাছ ভেঙে সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে।

২০১৪-১৫ সালে এ সৈকতে ১০ হেক্টর ও ২০২০-২১ সালে ৭ হেক্টর জমিতে ঝাউগাছের চারা রোপণ করে বন বিভাগ। কিন্তু ২০১৮-১৯ সাল থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝাপটায় শুরু হওয়া বালিক্ষয়ে ভাঙতে শুরু করে ঝাউবন, যা সংরক্ষণের দায়িত্ব না নিলে উপকূলীয় এলাকা ও সৈকত বিপন্ন হতে পারে বলে মনে করেন সাগরপাড়ের বাসিন্দারা।

তবে এ বন রক্ষায় পদক্ষেপের বিষয়ে তৎপরতার কথা জানিয়েছেন তালতলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সি আইপি-২ প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়া আছে এখানে। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

 এসআর

×