ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

কুকি-চিন আতঙ্কে রুমা ও থানচির পরিস্থিতি থমথমে

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ২৮ এপ্রিল ২০২৪; আপডেট: ১১:৪৮, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

কুকি-চিন আতঙ্কে রুমা ও থানচির পরিস্থিতি থমথমে

রুমা ও থানচির উপজেলার বর্তমান পরিস্থিতি এখনও থমথমে।

রুমা-থানচিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ কর্তৃক ব্যাংক ও মসজিদে হামলা, টাকা ও পুলিশ-আনসারের লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

তবে এখনো পুলিশ ও আনসারের লুণ্ঠিত অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের মাঝে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এছাড়া এই তিনটি উপজেলার পর্যটনখাত ও ব্যবসা বাণিজ্যে নেমে এসেছে ধস। বিশেষ করে রুমা ও থানচি উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে কুকি-চিন নামক যেন এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য বান্দরবানের রুমা ও থানচির উপজেলার বর্তমান পরিস্থিতি এখনও থমথমে। এ উপজেলাগুলোর সাপ্তাহিক হাট-বাজার গুলোতে আগের মতো নেই কোন জনসাধারণরে আনাগোনা বা দোকানপাটে বেচাকেনা। সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মাঝে কুকি-চিনের আতঙ্ক রয়েগেছে। রুমা-থানচি উপজেলায় সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা ও ডাকাতির ঘটনার পরে অতিরিক্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়ন রয়েছে। 

এছাড়া ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কঠোর নজরদারিতে রয়েছে এবং বিভিন্ন পয়েন্টে সেনা, বিজিবি ও পলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে কাউকে সন্দেহ হলে তল্লাশি করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে চারিদিকে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিনের আটককৃত ৭৮জন আসামির মধ্যে আরও ১০ জন আসামিকে রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণ করেছে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। শনিবার সকালে আসামিদের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজির হলে শুনানি শেষে তাদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেয় বিচারক নুরুল হক। বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালতের (জিআরও) বিশ্বজিৎ সিংহ। 

আসামিরা হলেন- ভানলাল কিম বম (৩০), সাইরাজ বম (২৫), রুয়াল কামলিয়ান বম (৫৫), গিলবার্ট বম (১৯), তিয়াম বম (৪৪), লিয়ান নোয়াই থাং বম (২০) নল থন বম (৫৫), পেনাল বম (৬৫), লাল মুন লিয়ান বম (২৮) ও জাসোয়া বম (৪৫)। তারা সবাই রুমা সদরের বেথেল পাড়ার বাসিন্দা।

আদালত সূত্রে জানা যায়, রুমা ও থানচি দুই উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের তিটি শাখায় ডাকাতি, মসজিদে হামলা,অস্ত্র ও টাকা লুটের ঘটনায় ২২জন নারীসহ মোট ৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী। গ্রেপ্তারের পর তাদেরকে আদালতের হাজির করা হলে পুলিশের পক্ষ থেকে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। দুইদিন রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে কেএনএফের সন্দেহভাজন ১০ জন সদস্যকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেয় আদালত।

বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, রুমায় ব্যাংক ডাকাতির সময় পুলিশ-আনসারের লুন্ঠিত অস্ত্রগুলো এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অস্ত্র উদ্ধার ও ব্যাংক ডাকাতিতে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি। 

গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা-থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের তিটি শাখায় ডাকাতি, তারাবি নামাজরত অবস্থায় মসজিদে হামলা, পুলিশ আনসারের অস্ত্র ও টাকা লুট এবং ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় যৌথবাহিনীর চলমান অভিযানে এপর্যন্ত ২২ জন নারীসহ ৭৮ জনকে বান্দরবান কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। 

এছাড়াও এই ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭৮ জনের মধ্যে ৫৯ জনকে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর ও তিন নারীকে জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি প্রদান করে আদালত। বর্তমানে বান্দরবানের দুইটি উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনীর নের্তৃত্বে যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

এসআর

×