ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

হতাশায় কৃষক

৭০ কেজি শসায় এক কেজি চাল!

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ২০ এপ্রিল ২০২৪

৭০ কেজি শসায় এক কেজি চাল!

৭০ কেজি শসা বেচে ১ কেজি চাল

‘৭০ কেজি শসা বেচে ১ কেজি চাল কিনিবার হয়, ১ কেজি গরুর গোস্ত কিনিবার হইলে শসা বেচাবা হবে ২০ মণ। ৩০ টাকা মণ তাহো কাহো নিবার চাহে না। ঋণ করি শসা করি এলা দিশা দুয়ার পাউনা। খেতত শসা নষ্ট হছে তুলিবার মনটা চাহে না। তুলিবা গেইলেও তো শ্রমিকক ৫০০ টাকা মজুরি দিবা হবে। সার কীটনাশকের দোকানত বাকি। ভয়ত বাজার যাবা মনায় না।’  দারুন কষ্টে কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলা হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিষমনি এলাকার শসা চাষি মালেকুল ইসলাম। তার মতো একই দশা জেলার হাজারো শসা চাষির। বাজার দর শূন্যে নেমে আসায় চরম হতাশায় কাটছে তাদের দিন। 
চাষিরা জানান, এক মাসের ব্যবধানে পঞ্চগড়ে শসার দাম নেমে এসেছে ৩০ টাকা কেজি থেকে ১ টাকার নিচে। বর্তমানে প্রতি মণ শসা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে। কেজি পড়ছে ৭৫ পয়সা। এ যেন শায়েস্তা খাঁর আমল। দাম না থাকায় খেতেই পচছে অনেকের শসা। কৃষকের ঘামঝরা পরিশ্রমের বিনিময়ে উৎপাদিত শস্যের এই দশায় দিশেহারা চাষিরা। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কাটছে হতাশার দিন। লাভের আশা বাদ, আসল তোলা নিয়েই রয়েছে বড় শঙ্কা। 
চাষিরা জানান, এবার জেলার পঞ্চগড় উপজেলার হাফিজাবাদ, হাড়িভাসাসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় শসার চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পঞ্চগড়ে শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে শসা চাষ করতে খরচ হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ফলন অনুযায়ী প্রতি বিঘা জমি থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ মণ শসা উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু হঠাৎই দামে বড় হোঁচট খেল চাষিরা। গত এক সপ্তাহ ধরে শসা বিক্রি হচ্ছে পানির দরে। অনেক চাষিই ধারদেনা করে লাভের শসা চাষ করেছিলেন।

বাকি রেখেছেন সার কীটনাশকের দোকানে। কেউ কেউ এনজিও থেকে ঋণ করে আবাদ করেছেন। ১৫ থেকে ২০ মণ শসা বিক্রি করে পরিবহন খরচই তুলতে পারছেন না তারা। তাই সাধের শসাই এখন তাদের শাঁখের করাতে পরিণত হয়েছে। দিশেহারা চাষিরা শস্যের সর্বনি¤œ দর বেঁধে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তবে কৃষকের শসার দাম শূন্যে পৌঁছলে পঞ্চগড়ের বাজারে কয়েক হাট ঘুরে শসা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৭ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে। 
পঞ্চগড় শেকেরহাট এলাকার শসা চাষি আবুল কাশেম বলেন, ৭ বস্তা শসা পঞ্চগড় নিয়ে গেলে বেচে পাই ২০০ টাকা। ভ্যান ভাড়া আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা। পকেট থেকে ভর্তুকি দিবার হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। তাই শসা তুলে ফেলে দিচ্ছি। শুকিয়ে যাবে বলে গরুকেও শসা খাওয়ানো যায় না। সার-কীটনাশকের দোকানে অনেক বাকি পড়েছে। এই ঋণ কিভাবে শোধ করব তা ভেবে পাচ্ছি না। টাকা দিতে না পারলে দোকানদাররা গলায় পা দিবে। বাড়িতে আসবে। অত্যাচার করবে। টাকা না দিলে হাটে যাওয়া বন্ধ হবে। আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নেই। 
ওই এলাকার আছিরুল ইসলাম বলেন, শসা করে বড় বিপদে পড়েছি। আশা ছিল বিক্রি করে ঋণ শোধ করে লাভের টাকা দিয়ে কয়েক মাস চলব এখন লাভ তো দূরে থাক আসল তুলতেই পারছি না। জমি বন্ধক দিয়ে ঋণ শোধ করা ছাড়া উপায় নেই। বাজারে আমরা শসা নিয়ে গেলে দাম ৩০ টাকা মণ। আর খুচরা বাজারে মানুষ কিনছে ১০ টাকা কেজি দরে। এই বৈষম্য দেখার কেউ নেই। অন্যদিকে আমাদের কষ্টের ফসলের দাম না থাকলেও চাল ডাল তেল পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুর দাম বেশি। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি আমরা যেন  আমাদের ফসলের ন্যায্যমূল্যটা পাই। 
পঞ্চগড় বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা শাহাবুদ্দিন বলেন, কৃষকরা শসা বিক্রি করছেন ৩০ থেকে ৪০ টাকা মণ। আমরা কিনছি। আমরা কিনছি ৪ টাকা কেজি দরে। শসা ভেদে বিক্রি করছি ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। 
শসা ব্যবসায়ী হাফিজুল ইসলাম বলেন, গত বছর এই সময়ে শসার কেজি ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা। এবার ১ টাকার নিচে নেমে আসছে। বাজারে আমদানি বেশি থাকায় দাম একেবারে কমে গেছে। আমরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় শসা পাঠাই। কিন্তু সেখানেও চাহিদা নেই। গাড়ি ভাড়াই দিতে পারি না। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, ২১৫ হেক্টর জমিতে এবার জেলায় শসা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। প্রতি হেক্টরে গড়ে ৪০ মেট্রিক টন শসা উৎপাদন হয়েছে। একসঙ্গে বাজারে ওঠায় দাম অনেক কমে গেছে। আশা করি শীঘ্রই শসার দাম বাড়বে।

×