ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

শীতলক্ষ্যা-ব্রহ্মপুত্র পাড়ে বিনোদন স্পট

ফুলের গ্রাম দেখতে এসে দর্শনার্থীরা ঘুরে যান হাজরাদি

মো. খলিলুর রহমান

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

ফুলের গ্রাম দেখতে এসে দর্শনার্থীরা ঘুরে যান হাজরাদি

নারায়ণগঞ্জ বন্দরে বিনোদন স্পটে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা

বিনোদনপিয়াসী নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণসহ নানা বয়সী লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সাবদির হাজরাদি বিনোদন স্পটে। এ বিনোদন স্পটটি অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে। বিনোদন স্পটটি আদি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত। প্রতিদিনই ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার বিনোদনপিয়াসী মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসছেন সাবদির হাজরাদি বিনোদন স্পটে। বিনোদন স্পটে এসে লোকজন আনন্দ-হইহুল্লোড়ে মেতে থাকেন সারাক্ষণ।

বিনোদনপ্রিয়াসীরা ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকা ভ্রমণ, দলবেঁধে চটপটি ও ফুসকা খেয়ে সময় অতিবাহিত করছেন। এ সময় ঘুরতে আসা নারীদের খোপায় শোভা পাচ্ছে নানা রঙের ফুলের বাহার। কারণ সাবদি ও দিঘলদিসহ এখানকার কয়েকটি গ্রামকে ফুলের চাষাবাদের গ্রাম হিসেবেই অবহিত করা হয়। তাই বিনোদনপিয়াসী লোকজন অনেকেই ফুলের গ্রামগুলো ঘুরে এসে হাজরাদি বিনোদন স্পটে ছুটে আসেন। তাই এদের অনেকের হাতে ও খোপায় শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের ফুল।

এক সময়ের প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদির ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত হাজরাদির বিনোদন স্পটটি। দিনে দিনে তৈরি হয়েছে বিনোদন স্পটে। এ বিনোদন স্পটে সরেজমিনে গেলে বিনোদন পিয়াসী লোকজন, নৌকার মাঝি, ফুসকা ও চটপটির দোকানিসহ নানা পেশার মানুষের সঙ্গে কথা এ প্রতিবেদকের। তারা জানান এ বিনোদন স্পটের সুযোগ-সুবিধাসহ নানান দিক।
হাজরাদি বিনোদন স্পটের নৌকা মাঝি মহিউদ্দিন। তিনি দুই বছর ধরে এ স্পটে বিনোদনপ্রিয়াসীদের আদি ব্রহ্মপুত্র নদে ট্রলারে ঘুরিয়ে আনন্দ দিয়ে আসছেন। তিনি তিনশ’ টাকায় এক ঘণ্টা নদীতে ঘুরিয়ে বিনোদন দিয়ে থাকেন। এক নৌকায় দশ থেকে বিশজন বিনোদনপ্রিয়াসী ঘুরতে পারেন। তিনি বিনোদনপ্রিয়াসীদের নিয়ে মেঘনার মোহনায় ও কাইকারটেক ব্রিজসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। আবার ভ্রমণ শেষে ব্রহ্মপুত্র নদে নামিয়ে দেন।

তার গ্রামের বাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বপাড়ে সোনারগাঁয়ের এলাহীনগর এলাকায়। তিনি বলেন, প্রতি শুক্রবার ও শনিবার বিনোদনপ্রিয়াসীদের ভিড় পড়ে যায়। এ ছাড়াও অন্যান্য বন্ধের দিনও বিনোদন স্পটে বিভিন্ন বয়সী লোকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, মুসলমানদের দুটি ঈদের পরবর্তী ১০ দিন পর্যন্ত বিনোদনপ্রিয়াসীদের জমজমাট আড্ডা থাকে এখানে। এ বিনোদন স্পটে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার লোকজন তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন।

তিনি বলেন, বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। বিনোদন স্পটে ঘুরার সময়ই হলো বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। তিনি বলেন, এ বছর ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত কমপক্ষে ত্রিশ হাজার মানুষ নৌকা ভ্রমণ করেছেন। তবে পহেলা বৈশাখে বিনোদনপ্রিয়াসীরা উপচে পড়েছিল। এখানে ৫০-৬০টি ট্রলার ও নৌকা রয়েছে। এ সকল ট্রলার ও নৌকার মাঝির রোজগারে পথই হলো বিনোদনপ্রিয়াসীদের ভ্রমণ করানো।

এ স্পটের আরেক মাঝি আসলাম হোসেন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদটি অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির। এ নদে ভ্রমণ করা খুবই নিরাপদ। তাই বিনোদনপ্রিয়াসীরা মনের আনন্দে নদে ভ্রমণ করে তৃপ্তি অনুভবন করছেন। হাজরাদির স্পটে ৫০-৬০টি ট্রলার ও নৌকা সব সময় বিনোদনপ্রিয়াসীদের জন্য তৈরি থাকে। এখানে ৭-৮ বছর ধরে বিনোদন স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি বলেন, ট্রলার বড় ছোট আছে। বড় একটি ট্রলারে ৪০ জন পর্যটক পর্যন্ত উঠতে পারেন। এ ধরনের ট্রলার প্রতি ঘণ্টায় ভাড়া দিতে হয় ৪০০-৫০০ টাকা। ঈদের সময় হাজরাদি এলাকায় পর্যটকদের ভিড় আরও বেড়ে যায়।

এখানে ঈদের পরবর্তী ১০ দিন লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে আসেন। তিনি বলেন, এ নদে নৌকা ভ্রমণের সময় এখন পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। হাজরাদি থেকে অনেক পর্যটন অনেক দূর পর্যন্ত ট্রলারে ঘুরতে যান। তিনি বলেন, মেঘনা ব্রিজ, মুক্তারপুর ব্রিজ, শীতলক্ষ্যা ব্রিজ, লাঙ্গলবন্দ, গজারিয়া ও চর কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে নৌকা ও ট্রলারে ভ্রমণে যাচ্ছেন বিনোদনপ্রিয়াসীরা। 
নারায়ণগঞ্জ শহরের এক নম্বর বাবুরাইল থেকে পরিবার নিয়ে হাজরাদি বিনোদন স্পটে ঘুরতে এসেছেন রিফাত উদ্দিন মেহরাব। তিনি বলেন, তারা একই পরিবারের শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীসহ দশজন এক সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, হাজরাদির সড়কের পাশে গড়ে ওঠা ফুসকা ও চটপটির দোকানের চেয়ার-টেবিল সারি সারিভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেই সাজিয়ে রাখা চেয়ার-টেবিলে বসে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে আনন্দ উপভোগ করেছি এবং ফুসকা ও চটপটি খেয়েছি।

এ সময় ব্রহ্মপুত্র নদের সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। পরে আমরা তিনশ’ টাকায় ট্রলার ভাড়া করে ব্রহ্মপুত্র নদে ভ্রমণে গিয়েছি। এ সময় আমাদের পুরো পরিবার খুবই আনন্দ উপভোগ করেছি। নারায়ণগঞ্জ শহরের ফতুল্লার পঞ্চবটি থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে হাজরাদির বিনোদন স্পটে ঘুরতে এসেছেন ফাহিমা আক্তার। তিনি বলেন, হাজরাদির বিনোদন স্পটে এসে আমাদের খুবই ভালো লেগেছে। আমরা পুরো পরিবার আনন্দ উপভোগ করতে পেয়েছি। তিনি বলেন, আমরা ফুলের চাষাবাদের গ্রাম সাবদি ঘুরে এসেছি। এখানে নানা প্রজাতির ফুল চাষ হচ্ছে।

ফুলের বাগানগুলো দেখতে খুবই মনমুগ্ধকর। ফুলের গ্রাম সাবদি থেকে ফুলও কিনে নিয়ে এসেছি। সাবদির গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুরে নেমে অটোরিক্সা কিংবা সিএনজি যোগে সাবজি গ্রামে ও হাজরাদি বিনোদন স্পটে যেতে হবে। এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ শহর হয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর পার হয়ে অটোরিক্সা কিংবা সিএনজিসহ নানা যানবাহনে করে সাবদি গ্রামের যেতে পারবেন।

এ বিনোদন স্পটের ফুসকা বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, হাজরাদি বিনোদন স্পটে ১০-১২টি ফুসকা ও চটপটির দোকান রয়েছে। বিনোদন পিয়াসীদের বসার জন্য চেয়ার-টেবিল দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের সড়কে সারি সারি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এ বিনোদন স্পটের পাশেই রয়েছে গ্রীন গার্ডেন পার্ক। এ পার্কের পর্যটকরা ঘুরতে পারছেন। এ স্পটের ফুল বিক্রেতা মো. ইব্রাহিম বলেন, বিনোদন স্পটে ঘুরতে আসা তরুণ-তরুণী ও নারীরা ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ফুলের মালা খোপায় পড়ে আনন্দিত হচ্ছেন। দোকানি মো. বাবুল হোসেন বলেন, সাবদি গ্রামটি ফুলের জন্য বিখ্যাত।

এ গ্রামের অনেক চাষি নানা প্রজাতির ফুলের চাষাবাদ করেন। সাবদি ও দিঘদিসহ কয়েকটি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষাবাদ হচ্ছে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ফুলের গ্রামে ঘুরতে আসেন। পরে বিনোদনপ্রিয়াসীরা হাজরাদি বিনোদন স্পটে এসে নৌকায় ভ্রমণসহ নানাভাবে আনন্দ উপভোগ করেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ বিভিন্ন বন্ধের দিনে, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহার সময় ও পহেলা বৈশাখসহ নানা দিবসে পর্যটকরা এখানে ভিড় করেন। এ পর্যটকদের আয় দিয়েই এখানকার অনেক মানুষের জীবিকা নির্বাহী হয়। এভাবেই হাজরাদি বিনোদন স্পটে পর্যটকরা ভিড় করছেন।

×